দার্জিলিঙে পৌঁছলেন রাজ্যপাল
দুর্যোগ নয়, সিকিম ঢাকা দুর্ভোগের মেঘে
কাশ অনেকটা মেঘমুক্ত ছিল। তবে মঙ্গলবারেও সিকিমের পরিস্থিতি খুব উজ্জ্বল নয়। ছোটখাটো ধস নেমেছে। বৃষ্টিতে সোমবার যে সব জায়গায় ধস নেমেছিল, তারও সব এখনও সরানো সম্ভব হয়নি। অন্য দিকে, দিনে না হলেও, রাতে মুষলধারে বৃষ্টি নামে দার্জিলিং পাহাড় এবং শিলিগুড়িতে। লেবং কার্ট রোড লাগোয়া এলাকার ধসও এ দিন সরানো যায়নি। টানা বৃষ্টি হলে পরিস্থিতি আরও বিগড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছে প্রশাসন।
ইতিমধ্যে পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখতে এ দিন শিলিগুড়ি হয়ে দার্জিলিং পাহাড়ে পৌঁছেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন। দার্জিলিং মেল থেকে নিউজলপাইগুড়িতে নেমে সকাল ১০টা নাগাদ কার্শিয়াংয়ের উদ্দেশে রওনা দেন তিনি। পাহাড়ের উদ্দেশে রওনা হওয়ার আগে বলেন, “ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে দেখতে এসেছি।” দুধিয়ায় একটি ত্রাণশিবিরে ঠাঁই নেওয়া লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন রাজ্যপাল। পরে তিনি গিদ্দা পাহাড়ে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকটি বাড়ি পরিদর্শন করেন। সেখানেও ত্রাণশিবিরে যান। পরে দার্জিলিংয়ে একটি অতিথি নিবাসে জেলা প্রশাসন, স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিক এবং দার্জিলিংয়ের বিধায়ককে নিয়ে বৈঠক করেন। বৈঠকের পরে বিকেলে লেবং কার্ট রোডে ধস পরিদর্শনে যান রাজ্যপাল। প্রশাসন সূত্রের খবর, আজ, বুধবার কালিম্পংয়ের গ্রাহামস হোমস স্কুল, ট্রেজারি ভবন এবং ভালুখোপ গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করার কথা রয়েছে তাঁর।
দার্জিলিঙে রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন। ছবি: রবিন রাই
এ দিকে, লেবং কার্ট রোডের ধসে যাওয়া এলাকা মেরামতির দায়িত্ব নিয়েছেন সীমান্ত সড়ক বাহিনীর জওয়ানেরা। প্রশাসন সূত্রের খবর, ওই রাস্তা ধসে যাওয়ায় সোমবার থেকেই দার্জিলিং থেকে জোড়থাং যাওয়ার উপায় নেই। প্রায় ১০টি চা বাগানে গাড়ি যাতায়াত করতে পারছে না। লেবং কার্ট রোডের ভাঙা অংশে আগামী তিন দিনের মধ্যে ৫০ মিটার লোহার সেতু তৈরি করে একমুখী যান চলাচলের রাস্তা তৈরি করে দেবেন জওয়ানেরা। প্রশাসনিক বৈঠকে জেলাশাসকের কাছে ওই রাস্তার কথাও এ দিন জানতে চান রাজ্যপাল।
বৃষ্টি কমে যাওয়ায় এ দিন থেকে ফের উদ্ধারের কাজ শুরু হয়েছে সিকিমে। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, বিক্ষিপ্ত ভাবে হলেও ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। তবে এরই মধ্যে পেলিংয়ে যাওয়ার রাস্তাতে ধস নেমেছে। সীমান্ত সড়ক বাহিনী দ্রুত ধস সরানোর চেষ্টা করছে। সোমবারের বৃষ্টিতে গ্যাংটক থেকে জাতীয় সড়ক ধরে সরাসরি মঙ্গনে যাওয়ার রাস্তা ধস নেমে বন্ধ। গ্যাংটক থেকে সিংথাম হয়ে ঘুরপথে মঙ্গনে যাওয়ার রাস্তাটি এ দিন খুললেও যাতায়াতের গাড়ি মিলছে না বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। সিকিম সরকার শরণার্থীদের মঙ্গন থেকে নিয়ে যাওয়ার জন্য দু’টি ট্রাকের ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু চাহিদার তুলনায় তা নেহাতই কম বলে ক্ষোভ রয়েছে এলাকাবাসীর। কারণ, ঘুরপথ দিয়ে কোনও ছোট গাড়ি মঙ্গন যাচ্ছে না। কর্মসূত্রে মঙ্গনে থাকা আলিপুরদুয়ার জংশনের বাসিন্দা সুমিত মজুমদারের ‘অভিজ্ঞতা’, “কোনও গাড়ি পাওয়া যাচ্ছে না গ্যাংটকে যাওয়ার। যাতায়াতের উপায় বলতে প্রচণ্ড খারাপ রাস্তায় প্রাণ হাতে করে সরকারি ট্রাকে চেপে যাতায়াত করা।”
ভূমিকম্প থেকে বাঁচতে
বাড়িতে থাকলে
আশ্রয় নিন থাম-এর গা ঘেঁষে।
না হলে খাট বা শক্তপোক্ত টেবিলের তলায়।
হাঁটু মুড়ে বসে মাথা ঢুকিয়ে দিন দু’পায়ের ভিতরে।
দু’হাত দিয়ে মাথা আড়াল করুন।
কম্পন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত নড়বেন না।
দরজা জানলার কাছে থাকবেন না।
লিফট ব্যবহার করবেন না।
রান্নাঘরে থাকলে গ্যাস বন্ধ করুন।
বাইরে থাকলে

আশ্রয় নিন খোলা জায়গায়।
দাঁড়াবেন না বড় বাড়ি,
টাওয়ার, বিদ্যুতের স্তম্ভ
বা গাছের কাছাকাছি।
গাড়িতে থাকলে

ইঞ্জিন বন্ধ করে দিন।
গাড়ি থেকে বের হবেন না।
কম্পন থামলেও সেতু
বা কালভার্ট বর্জন করুন।

প্রশাসন সূত্রের খবর, চুংথাম, টুন, জোঙ্গা-সহ সিকিমের পাহাড়ের উপরের এলাকাগুলির বাসিন্দারা মঙ্গনে আশ্রয় নিয়েছেন। কমপক্ষে সাড়ে তিনশো মানুষ মঙ্গনে চলে এসেছেন। মঙ্গনে যে পাঁচটি ত্রাণশিবির চলছে তাতে এত শরণার্থী রাখা সম্ভব নয়। কার্যত, খোলা আকাশের নীচে রাস্তার পাশে বসে রয়েছেন অসংখ্য মানুষ। একটি ত্রাণশিবিরের কর্মী রবি গুরুঙ্গ বলেন, “সবাই নীচের নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে চাইছেন। কিন্তু পারছেন কই?”
তিস্তা-উর্জা প্রকল্পের নিখোঁজ হওয়া ইঞ্জিনিয়ার সুব্রতরঞ্জন নাথের হদিস মেলেনি এ দিনও। তাঁর আত্মীয়েরা সিকিমেই রয়েছেন। দ্রুত সুব্রতবাবুর হদিস করার জন্য ওই ইঞ্জিনিয়ারের কৈখালির বাড়ির লোকজন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দফতরে চিঠিও দিয়েছেন। আজ, বুধবার মহাকরণে গিয়ে তাঁরা সাহায্যের আর্জি জানাতে পারেন।
শিলিগুড়ি থেকে এ দিন সিপিএমের দার্জিলিং জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর অন্যতম সদস্য অশোক ভট্টাচার্য, জীবেশ সরকার, সমন পাঠকের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল সিকিমে যায়। সেখানে ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দাদের মধ্যে ত্রাণ বিলি করেন তাঁরা।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.