|
|
|
|
বুদ্ধের গরহাজিরায় এ বার উষ্মা বাড়ছে পলিটব্যুরোর |
সন্দীপন চক্রবর্তী • কলকাতা |
প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের বারংবার বৈঠক এড়িয়ে যাওয়া নিয়ে এ বার ঈষৎ ‘ধৈর্যচ্যুতি’র ইঙ্গিত ধরা পড়ছে সিপিএমের পলিটব্যুরোয়!
বিধানসভা ভোটে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরেই পরাজয়ের ‘নৈতিক দায়’ নিয়ে পলিটব্যুরো এবং কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে সরে দাঁড়াতে চেয়েছিলেন বুদ্ধবাবু। তার পর থেকে কলকাতায় একটি পলিটব্যুরো বৈঠক বাদে তিনি কেন্দ্রীয় স্তরের কোনও বৈঠকে যাননি। দিল্লিতে কাল, বৃহস্পতি ও পরশু, শুক্রবার এ বারের পলিটব্যুরো বৈঠকেও যাচ্ছেন না। আসন্ন পার্টি কংগ্রেসের প্রস্তুতি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হওয়ার কথা দু’দিনের বৈঠকে।
এক দিকে বুদ্ধবাবু দিল্লি যাচ্ছেন না। আবার পলিটব্যুরো চলাকালীনই উত্তর ২৪ পরগনায় মিনাখাঁয় ২৯ তারিখ দলীয় কর্মসূচিতে যোগ দিতে যাওয়ার কথা তাঁর। পলিটব্যুরো বৈঠকের দিনক্ষণ অনেক আগেই ঠিক হয়ে গেলেও প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ‘সচেতন ভাবে’ই দিল্লির আলোচনা এড়িয়ে রাজ্যের কর্মসূচিতে বেশি মনোযোগ দিচ্ছেন কি না, তা নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের অন্দরে। বুদ্ধবাবু একের পর এক পলিটব্যুরো বৈঠক এড়িয়ে যাওয়ায় যথেষ্ট ‘ক্ষুণ্ণ’ প্রকাশ কারাটও। দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তাঁকেই বারবার বুদ্ধবাবুর অনুপস্থিতি প্রকাশ্যে ‘আড়াল’ করতে হচ্ছে বলেই তাঁর ‘বিড়ম্বনা’ আরও বেশি।
এ বার সমস্যা আরও ঘনীভূত এই কারণে যে, দিল্লির বৈঠকে যোগ দিতে যাওয়ার জন্য তাঁর ঘনিষ্ঠ পলিটব্যুরো সদস্যদের অনুরোধও ফিরিয়ে দিয়েছেন বুদ্ধবাবু। শারীরিক কারণে বিমানযাত্রায় কোনও সমস্যা থাকলে বুদ্ধবাবুকে ট্রেনের বাতানুকূল কামরায় দিল্লি-যাত্রার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী রাজি হননি। এ কে জি ভবন সূত্রের খবর, দিল্লি গিয়ে বঙ্গভবনে ওঠা নিয়েও বুদ্ধবাবুর ‘অস্বস্তি’ আছে জানতে পেরে পলিটব্যুরোর এক সদস্য তাঁকে দলীয় মুখপত্রের ফ্ল্যাটে দু’রাত্তির কাটানোর প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তাতেও কাজ হয়নি। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দিল্লি গিয়ে বরাবর বঙ্গভবনেই উঠতেন বুদ্ধবাবু। এখন সরকারি পদে না-থেকে নতুন সরকারের পূর্ত দফতরের অধীন বঙ্গভবনে থাকতে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে ‘অস্বস্তি’ কাজ করছে ইঙ্গিত পেয়েই (হোটেলে থাকতেও যে হেতু বুদ্ধবাবুর অনীহা) তাঁর কাছে ‘বিকল্প’ প্রস্তাব গিয়েছিল পলিটব্যুরোয় তাঁর ঘনিষ্ঠ এক নেতার তরফে। কিন্তু তিনি তাতেও রাজি হননি। পলিটব্যুরোর এক সদস্যের কথায়, “উনি কী যে চাইছেন, বোঝা যাচ্ছে না!”
সিপিএম সূত্রের ব্যাখ্যায়, ফুসফুসের সংক্রমণ জনিত সমস্যার কারণে উড়ানের ধকল নেওয়া এখন বুদ্ধবাবুর পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু এই ব্যাখ্যা নিয়েই পলিটব্যুরোয় প্রশ্ন উঠেছে। পলিটব্যুরোর এক দক্ষিণী সদস্যের বক্তব্য, “শারীরিক সমস্যা থাকলে তার বিশদ চিকিৎসা করানো দরকার। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে উনি গাড়িতে সফর করছেন। দলীয় কর্মসূচিতেও নিয়মিত যোগ দিচ্ছেন। কিন্তু পলিটব্যুরোর বৈঠক এড়িয়ে যাচ্ছেন! শরীর খারাপ বলেই যে আসছেন না, সেটাও কিন্তু স্পষ্ট করে জানাচ্ছেন না।” বারবার একই ঘটনা ঘটতে থাকায় বুদ্ধবাবুর গরহাজিরা নিয়ে এ বারের বৈঠকে সরব হতে চান পলিটব্যুরোর একাংশ।
২০০৯ সালের লোকসভা ভোটে রাজ্যে বামেদের বিপর্যয়ের পর থেকে এ পর্যন্ত মাত্র দু’টি পলিটব্যুরো বৈঠকে যোগ দিয়েছেন বুদ্ধবাবু। তার মধ্যে একটি লোকসভা ভোটের পর, তিনি মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন দিল্লিতে। সেই বৈঠকেরও মাঝপথে চলে গিয়ে বঙ্গভবনের স্যুইটে বসে ছিলেন বুদ্ধবাবু! পরেরটি গত মাসে কলকাতায়। রাজ্যে দলীয় কর্মসূচিকে প্রাধান্য দিতেই বুদ্ধবাবু যদি পলিটব্যুরো এড়িয়ে চলেন, তা হলে তা নিয়েও প্রশ্ন আছে দলে। এক নেতার কথায়, “কেরলে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকার নামমাত্র সংখ্যাগরিষ্ঠতায় ক্ষমতায়। দুর্নীতির মামলায় তারা জর্জরিত। সেখানকার রাজনৈতিক পরিস্থিতি সব সময়েই স্পর্শকাতর। কিন্তু তা বলে কেরলের সদস্যেরা কি পলিটব্যুরো বৈঠকে যাচ্ছেন না?”
এম কে পান্ধের প্রয়াণের পর সিপিএমের পলিটব্যুরোর সদস্য এখন ১৩ জন। জানা গিয়েছে, তাঁদের অধিকাংশই বুদ্ধবাবুর এই ‘এড়িয়ে যাওয়ার নীতি’র বিরুদ্ধে। পলিটব্যুরোর অনেকেই শারীরিক ভাবে সম্পূর্ণ ‘ফিট’ নন। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাঁরা বৈঠক এড়িয়ে যাওয়ার পক্ষপাতী নন। দলের একাংশের মতে, বুদ্ধবাবু প্রকৃতপক্ষে কারাটের বেশ কিছু নীতির বিরুদ্ধে ‘নীরব প্রতিবাদ’ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দিনের পর দিন বৈঠকে গরহাজির থাকলে ‘প্রতিবাদে’র ধার থাকবে কি না, তা নিয়ে সন্দিহান দলের ওই অংশই। এক কেন্দ্রীয় নেতার কথায়, “আগামী বছরের পার্টি কংগ্রেস কেরলের কোঝিকোড়ে। কলকাতা থেকে অনেকটা পথ। এই ভাবে চলতে থাকলে পার্টি কংগ্রেসেও উনি আসবেন তো?” |
|
|
|
|
|