|
|
|
|
অর্থ মন্ত্রকের নোট নিয়ে জেপিসিতে হইচই |
সরকারের সমস্যা বাড়িয়ে ফের বাম-বিজেপি জোট |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
অর্থ মন্ত্রকের নোট ঘিরে এমনিতেই বিপাকে মনমোহন সিংহের সরকার। তার মধ্যেই আজ যৌথ সংসদীয় কমিটির বৈঠকে (জেপিসি) ফের বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে সরকারের সমস্যা বাড়িয়ে তুলল বামেরা।
স্পেকট্রাম বণ্টন নিয়ে অর্থ মন্ত্রকের যে নোট তথ্যের অধিকার আইনে প্রকাশ করা হয়েছে, তা সংসদীয় কমিটির সামনে পেশ করা হয়নি কেন, এই প্রশ্ন তুলে আজ একযোগে সরব হলেন সীতারাম ইয়েচুরি, গুরুদাস দাশগুপ্ত, এস এস অহলুওয়ালিয়া, রবিশঙ্কর প্রসাদরা। তাঁদের অভিযোগ, টু-জি স্পেকট্রাম বণ্টনে দুর্নীতির তদন্তেই গঠিত হয়েছে জেপিসি। আর সেই জেপিসি-র কাছেই এত ‘গুরুত্বপূর্ণ নথি’ গোপন করে অর্থ মন্ত্রক তথা কেন্দ্রীয় সরকার সাংসদদের স্বাধিকার ভঙ্গ করেছে। বিরোধীদের দাবিতে শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হয়, প্রধানমন্ত্রীর দফতর, অর্থ, টেলিকম, আইন মন্ত্রক ও যোজনা কমিশনের কাছে এই মর্মে হলফনামা চাওয়া হবে যে, স্পেকট্রাম বণ্টন সংক্রান্ত সব নথিই তারা জেপিসি-র সামনে পেশ করবে। পাশাপাশি কেন ওই নোট ‘গোপন রাখা হয়েছিল’, অক্টোবর মাসে জেপিসি-র বৈঠকে হাজির হয়ে তার ব্যাখ্যা দেবেন অর্থসচিব আর এস গুজরাল।
সংসদের বাদল অধিবেশনে দুর্নীতি প্রশ্নে বিজেপির থেকে দূরত্ব বজায় রেখেই চলেছিল বামেরা। কারণ তাদের বক্তব্য ছিল, বিজেপিও কংগ্রেসের মতোই দুর্নীতিগ্রস্ত। কিন্তু টু-জি প্রশ্নে অর্থ মন্ত্রকের প্রকাশ হওয়া নোট ঘিরে সরকারের মধ্যেই বিরোধ শুরু হয়ে যাওয়ায় তার সুযোগ নিতে ছাড়েনি বামেরা। প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী তথা বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরমের ভূমিকা প্রসঙ্গে অর্থ মন্ত্রকের ওই নোটের সার কথা হল, স্পেকট্রাম বণ্টনের সময় তৎকালীন অর্থমন্ত্রী চিদম্বরম চাইলে অনিয়ম রুখতে পারতেন। সরকারেরই একাংশ যেখানে আরেকটি অংশের দিকে আঙুল তুলছে, তখন তার সুযোগ নিতে বামেরাও বিজেপির ব্যাপারে গোঁড়ামি ছেড়ে মাঠে নেমে পড়ে। দু’পক্ষের হইচইতে জেপিসির বৈঠক আজই স্থগিত হয়ে যায়।
আজ জেপিসি-র বৈঠকে যে নোটের প্রসঙ্গ তোলা হবে, তা দু’দলের সাংসদরা আগেই ঠিক করে রেখেছিলেন। আজকের বৈঠকে প্রাক্তন টেলিকম সচিব নৃপেন্দ্র মিশ্রের বক্তব্য শোনার কথা ছিল। কিন্তু বাম-বিজেপি সাংসদরা দাবি তোলেন, ওই শুনানি স্থগিত রেখে আজই কেন্দ্রীয় অর্থসচিবকে ডেকে পাঠানো হোক। তিনি ব্যাখ্যা করুন, কেন অর্থ মন্ত্রকের ওই নোট জেপিসি-র কাছে গোপন রাখা হয়েছিল। ইয়েচুরি যুক্তি দেন, যদি অর্থ মন্ত্রক ইচ্ছাকৃত ভাবে ওই নোট গোপন করে থাকে, তা হলে সংসদীয় কমিটির স্বাধিকার ভঙ্গ করা হয়েছে। আর এটা যদি ভুল করে চেপে যাওয়া হয়, তা হলে তা ‘মারাত্মক ভুল’। গুরুদাসবাবু প্রশ্ন তোলেন, ২০০৮ সালের স্পেকট্রাম বণ্টন নিয়ে ২০১১ সালের মার্চ মাসে অর্থ মন্ত্রক নোট তৈরি করতে বসল কেন? এই নোটে কাকে নিশানা করা হল? বিরোধীদের বক্তব্য, অর্থ মন্ত্রকের ওই নোট স্পেকট্রাম-দুর্নীতি নিয়ে সিএজি-র বক্তব্যকেই কার্যত সমর্থন করছে।
বিরোধীদের সামলাতে জেপিসি-র চেয়ারম্যান পি সি চাকো যুক্তি দেন, এত কম সময়ের মধ্যে অর্থসচিবকে ডেকে পাঠানো অসুবিধাজনক। কংগ্রেসের সদস্যরা দাবি তোলেন, আজ যেমন শুনানির কথা রয়েছে, তেমন চলুক। পরবর্তী কালে অর্থসচিবকে ডেকে তাঁর ব্যাখ্যা চাওয়া হবে। কিন্তু বাম-বিজেপি সাংসদরা তা মানতে চাননি। অহলুওয়ালিয়ারা দাবি তোলেন, আজই অর্থসচিবকে ডেকে পাঠাতে হবে। সবক’টি বিরোধী দল এক সুরে বলেন, গোটা দেশ যা নিয়ে উত্তাল, যার জন্য প্রণব মুখোপাধ্যায়কে প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিউ ইয়র্কে ছুটে যেতে হচ্ছে, তা নিয়ে জেপিসিতেও আলোচনা করতে হবে। অর্থসচিবকে ডাকা না হলে ‘ওয়াক আউট’ করা হবে বলেও ঠিক করে রেখেছিলেন বিরোধীরা।
প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে দু’পক্ষে বচসা চলার পরে নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী প্রাক্তন টেলিকম সচিবের বক্তব্য শোনার সিদ্ধান্ত নেন চেয়ারম্যান। প্রতিবাদে বিরোধী সাংসদরা তাঁকে কোনও প্রশ্ন করেননি। এক মাত্র কংগ্রেসের অধীর চৌধুরী ও মনীশ তিওয়ারিই তাঁকে প্রশ্ন করেন। বুধবারও জেপিসি-র বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ঠিক হয়েছে, আগামী ১২-১৩ অক্টোবর জেপিসির বৈঠক হবে। সেখানেই অর্থসচিব হাজির হয়ে ওই নোট সম্পর্কে ব্যাখ্যা দেবেন।
জেপিসির আজকের বৈঠককে নিজেদের সাফল্য হিসেবেই দেখছেন বিরোধীরা। তাঁদের দাবি, প্রধানমন্ত্রীর দফতর-সহ পাঁচটি দফতরের কাছে যে হলফনামা চাওয়া হয়েছে, তা-ও আগে কখনও হয়নি। পাশাপাশি, নোট ‘গোপন’ করা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সরকার তথা কংগ্রেসকে আরও অস্বস্তিতে ফেলা গিয়েছে। |
|
|
|
|
|