|
|
|
|
ভোট-ঘুষ কাণ্ডে আডবাণীর সহযোগী সুধীন্দ্রও তিহাড়ে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
কাজে এল না লালকৃষ্ণ আডবাণীর প্রকাশ্য হুঁশিয়ারি। অর্থের বদলে ভোট মামলায় তাঁর প্রাক্তন সহযোগী সুধীন্দ্র কুলকার্নিকে জেলেই পাঠাল দিল্লির আদালত। কুলকার্নির আগাম জামিনের আর্জি খারিজ করে আজ তাঁকে পাঁচ দিন জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দলের দুই প্রাক্তন সাংসদের পরে এ বার খোদ আডবাণীর সহযোগী জেলে যাওয়ায় অস্বস্তিতে বিজেপি। যদিও দলের একাংশের দাবি, এই ঘটনা তাদের হাতে নতুন অস্ত্র তুলে দিল।
বিজেপি গোড়া থেকেই বলে আসছে, টাকা দিয়ে যাঁরা ভোট কিনতে চেয়েছিলেন, তাঁদের ধরিয়ে দিতে সক্রিয় ছিলেন এই নেতারা। আডবাণী নিজেই সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছেন, “গোটা ঘটনাটি আমার জ্ঞাতার্থে হয়েছে। যদি মনে করতাম, কোনও ভুল হচ্ছে, তা হলে আমি বারণ করতাম। যদি এই নেতারা দোষী হন, তা হলে আমিও তাঁদের থেকে বেশি দোষী। আমাকেও তিহাড় জেলে পাঠানো হোক।” দলের অনেকেই মনে করেন, তদন্তকে প্রভাবিত করতেই এই হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন আডবাণী। কিন্তু সেটা কাজেই এল না। আপাতত ১ অক্টোবর পর্যন্ত তিহাড় জেলেই থাকতে হচ্ছে কুলকার্নিকে। |
|
মঙ্গলবার তিস হাজারি কোর্টে সুধীন্দ্র কুলকার্নি। ছবি: পি টি আই |
কিন্তু কুলকার্নির জেল যাত্রা একই সঙ্গে কংগ্রেস তথা সরকারকে নতুন করে আক্রমণ করার সুযোগ এনে দিল বলে মনে করছেন অনেক বিজেপি নেতা। তাঁদের অভিযোগ, অমর সিংহের সঙ্গে সনিয়া গাঁধীর রাজনৈতিক সচিব আহমেদ পটেল গোটা কাণ্ডের মূল মাথা। অমর জেলে গেলেও আহমেদ এখনও অধরা। সে কথা তুলে ধরে যেমন প্রচারে নামা যাবে, তেমনই যাঁরা দুর্নীতি ফাঁস করতে চেয়েছেন তাঁদেরই সরকার গ্রেফতার করছে বলে সহানুভূতি কুড়োনোর চেষ্টা করা যাবে। দলের মুখপাত্র নির্মলা সীতারামনের কথায়, “এ যাবৎ এই মামলায় যে তদন্ত হয়েছে, তা লোক দেখানো। আসল দোষীদের এখনও ধরা হচ্ছে না। আমরা তাই স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।”
দলের দুই প্রাক্তন সাংসদকে গ্রেফতার করার পরেই দেশ জুড়ে রথযাত্রার কথা ঘোষণা করেন আডবাণী। বিজেপি-র এক শীর্ষ নেতা আজ বলেন, “রথযাত্রায় এ বারে কুলকার্নিকে জেলে পাঠানোর বিষয়টিও তোলা হবে।” দলের আইনজীবী নেতা অরুণ জেটলি ঘনিষ্ঠ মহলে বলেছেন, ভোট কেনার লক্ষ্যে ঘুষ যে দেওয়া হয়েছিল, তা নিয়ে এখন আর কার্যত কোনও সন্দেহই নেই। ফলে ‘ষড়যন্ত্রে’র নামে এই ব্যক্তিদের জেলে পাঠানো যায় না। বিজেপি-র অভিযোগ, দিল্লি পুলিশ যে ভাবে তদন্ত করছে, তাতে ঘুষ দেওয়ার বিষয়টি আদালতে প্রমাণ করা যাচ্ছে না। এই অবস্থায় ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা স্থির করতে আইনি পরামর্শও নেওয়া হচ্ছে। রাতেই এ নিয়ে আডবাণীর বাড়িতে বৈঠকে বসেন বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। স্থির হয়েছে, বুধবার তিহাড় জেলে সুধীন্দ্র দুই প্রাক্তন বিজেপি সাংসদের সঙ্গে দেখা করতে যাবেন আডবাণী, জেটলি, সুষমারা।
আদালতের সিদ্ধান্তে কংগ্রেসও নিজেদের সুবিধা দেখছে। টু-জি বিতর্ক নিয়ে কোণঠাসা পরিস্থিতিতে কুলকার্নির জেল যাত্রা তাদের খানিকটা রাজনৈতিক স্বস্তি দিল বলেই মনে করছেন কংগ্রেস নেতাদের একাংশ। দলীয় মুখপাত্র রশিদ আলভি বলেন, “আদালতের বিষয়ে কিছু বলার নেই। তবে এটা প্রমাণ হল যে, কুলকার্নিরা ষড়যন্ত্রেই সামিল ছিলেন। তাঁরা ‘হুইসল ব্লোয়ার’ নন। আর আডবাণী নিজেই বলেছিলেন, এই স্টিং অপারেশন তাঁর সম্মতিতে হয়েছে। সুতরাং এটাও প্রমাণিত হল যে, সরকারকে দুর্বল করার ষড়যন্ত্রে তিনিও ছিলেন।”
কুলকার্নি আজ আদালতে নিজের জামিনের আবেদন জানাতে গিয়ে বলেন, একটি বিরাট দুর্নীতি সকলের সামনে তুলে ধরতেই ২০০৮ সালে টাকার বদলে ভোটের ঘটনাটি ফাঁস করতে চেয়েছিলেন তিনি। কুলকার্নি জানান, বিজেপি-র শীর্ষ নেতৃত্ব বিষয়টি সম্পর্কে সবই জানতেন।
তাঁদের নির্দেশেই ব্যাপারটা ঘটেছিল। পাশাপাশি, কংগ্রেস নেতাদের ভূমিকাও খতিয়ে দেখার আবেদন জানিয়েছেন কুলকার্নি। অমর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমি কোনও এক জন লোককে আলাদা করে দোষ দিতে চাই না। কে টাকা দিয়েছে, কাকে টাকা দিয়েছে তা এখন সবাই জানে। জানা
দরকার, এই লেনদেনে আখেরে কাদের লাভ হয়েছে।”
কুলকার্নি জানান, তাঁর জামিনের আবেদন নিয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। আবার, তদন্ত চলাকালীন তাঁকে গ্রেফতারও করা হয়নি। তাই অন্তর্বর্তী জামিনের আবেদন মঞ্জুর করা হোক। তিনি তদন্তে সহযোগিতা করেছেন বলেও দাবি করেন কুলকার্নি। অন্য দিকে, গোটা কাণ্ডটিতে কুলকার্নি সরাসরি যুক্ত ছিলেন দাবি করে সরকারি আইনজীবী রাজীব মোহন পাল্টা বলেন, “কেন অন্তর্বর্তী জামিন প্রয়োজন, সে ব্যাপারে কিন্তু ওঁরা কিছুই বলতে পারেননি।” |
|
|
|
|
|