|
|
|
|
চিদম্বরম নিয়ে শুনানি আজও |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
গোটা দেশের নজর ছিল আদালতের দিকে। কিন্তু টু-জি মামলায় পি চিদম্বরমকে নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট আজ রায় দিল না। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্ত হবে কি না, তা নিয়ে শুনানি কালও হবে। এই অবস্থায় সরকারের লক্ষ্য, ‘চিদম্বরমকে বাঁচাও।’ কারণ, তাঁর বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্ত আটকাতে পারলে সরকারের মুখরক্ষা হবে।
দশ নম্বর জনপথ ঘনিষ্ঠ এক শীর্ষ নেতার দাবি, সরকারের শীর্ষ নেতৃত্বকে সনিয়া বুঝিয়ে দিয়েছেন, চিদম্বরমের পক্ষে জোরদার আইনি লড়াই করতে হবে। কারণ, ব্যক্তি চিদম্বরম এখানে অপ্রাসঙ্গিক। গুরুত্বপূর্ণ হল, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তের দাবি উঠেছে। আদালত সেই দাবি মানলে বিপর্যয়ের মুখে পড়বে সরকার ও কংগ্রেস। চিদম্বরমকে ইস্তফা দেওয়ানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের ওপর চাপ তো বাড়বেই। এর পর প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিরোধী আক্রমণ আরও তীব্র হবে। তা ছাড়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হলে সরকার মুখ লুকোবে কোথায়? সে ক্ষেত্রে এই বার্তাই যাবে যে কেন্দ্রে দ্বিতীয় ইউপিএ সরকার আগাপাশতলা দুর্নীতিপরায়ণ। ফলে এই মুহূর্তের অগ্রাধিকার, চিদম্বরমের বিরুদ্ধে তদন্ত ঠেকিয়ে সরকারের মুখরক্ষা করা।
সরকারের শীর্ষ সূত্রে বলা হচ্ছে, গত সন্ধ্যায় প্রণব-চিদম্বরমের সঙ্গে সনিয়ার বৈঠকের পর থেকেই ‘অপারেশন সেভ চিদম্বরম’ পূর্ণ উদ্যমে শুরু হয়ে যায়। নিউ ইয়র্ক থেকে কুড়ি ঘণ্টার যাত্রা করে দেশে ফেরার পরও, গভীর রাত পর্যন্ত কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী সলমন খুরশিদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। ডাকা হয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের প্রতিমন্ত্রী নারায়ণস্বামীকেও।
তার পর আজ দুপুর থেকে সুপ্রিম কোর্টে সরকার, সিবিআই এবং এ রাজার আইনজীবীর পক্ষে যে সব যুক্তি তুলে ধরা হয়, রাজনৈতিক শিবিরের মতে, তাতে চিদম্বরমকে বাঁচাতে সরকারের তৎপরতার প্রতিফলন পরিষ্কার। পরে খুরশিদকে ডেকে পাঠিয়ে আদালতে কী ঘটেছে, তার বিস্তারিত রিপোর্টও নিয়েছেন সনিয়া।
কোর্টে সরকার-সিবিআই চাপানউতোর নজর কাড়লেও রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের দাবি, এই বিরোধ প্রকৃত কোনও বিরোধ নয়, আপাত বিরোধ। মোটের উপর চিদম্বরমের বিরুদ্ধে তদন্তের কোনও প্রয়োজন নেই, এবং সরকারের চাপে নয়, ‘স্বাধীন’ সংস্থা হিসেবেই তারা এ ক্ষেত্রে কাজ করছে এটাই প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছে সিবিআই।
সুপ্রিম কোর্টে আজ সিবিআই স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী পি চিদম্বরমের বিরুদ্ধে স্পেকট্রাম মামলায় এমন কোনও সাক্ষ্যপ্রমাণ নেই যে তাঁর বিরুদ্ধে ফৌজদারি দণ্ডবিধির আওতায় তদন্ত বা মামলা করা যেতে পারে। আবার সরকারের তরফে আদালতে বলা হয়েছে, স্পেকট্রাম বণ্টন নিয়ে অর্থ মন্ত্রকের যে নোট আদালতে পেশ করা হয়েছে, তাতে চিদম্বরমের বিরুদ্ধে কিছুই প্রমাণ হয় না। তবে প্রয়োজনে আদালত সিবিআইকে ওই নোটটি খতিয়ে দেখে পরবর্তী কালে তদন্তের ‘স্টেটাস রিপোর্ট’ পেশের নির্দেশ দিতে পারে। কিন্তু সরকারের বক্তব্যে তীব্র আপত্তি জানায় সিবিআই। কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার কৌঁসুলি বলেন, সিবিআই একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত সংস্থা। তাকে কেউই কোনও বিষয় নিয়ে তদন্ত করার জন্য এ ভাবে চাপ দিতে পারে না। সরকারও নয়। এ রাজার আইনজীবীর ‘ভোল বদলানো’ বক্তব্যও তাৎপর্যপূর্ণ। গত কাল রাজার তরফে বলা হয়েছিল, আদালতে ডেকে স্পেকট্রাম বণ্টন নিয়ে চিদম্বরমেরও সাক্ষ্য নেওয়া হোক। তিনি বলুন, প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে স্পেকট্রাম নিয়ে পরামর্শ তিনি দেন কি না। আজ সেই আইনজীবীই শীর্ষ আদালতে বলেন, চিদম্বরমের বিরুদ্ধে তদন্ত নিষ্প্রয়োজন। তাতে শুধু শুনানির প্রক্রিয়াই বিলম্বিত হবে।
চিদম্বরমের বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্ত দাবি করে জনতা পার্টির সভাপতি সুব্রহ্মণ্যম স্বামী দু’টি মামলা করেছেন। একটি মামলা করা হয়েছে নিম্ন আদালত তথা পাটিয়ালা কোর্টে। অন্যটি সুপ্রিম কোর্টে। পাটিয়ালা কোর্ট সংশ্লিষ্ট মামলার শুনানি ১২ অক্টোবর পর্যন্ত স্থগিত রেখেছে। আর সুপ্রিম কোর্টে শুনানি চলছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে আজ সরকারের তরফে সর্বোচ্চ আদালতে এ-ও বলা হয় যে, সুপ্রিম কোর্ট স্পেকট্রাম তদন্ত নিয়ে নজরদারি বন্ধ করুক। কারণ নিম্ন আদালতে শুনানি চলছে।
তবে সরকারের কৌশল আঁচ করে পাল্টা রণনীতি নিচ্ছে বিজেপি-ও। তাঁরাও আদালতের ওপর চাপ বাড়াতে সক্রিয়। রাজ্যসভায় বিরোধী দলনেতা তথা বিজেপি-র অন্যতম শীর্ষ নেতা অরুণ জেটলি আজ বলেন, অর্থ মন্ত্রকের নোট নিয়ে বিতর্ক কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ সমস্যা বলে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। কিন্তু তা ঠিক নয়। সরকারি অর্থ ভাণ্ডারের অপব্যবহার করে কী ভাবে বেসরকারি সংস্থাকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়া হয়েছে, নোটে সেটা স্পষ্ট। এও পরিষ্কার যে, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী চাইলে কম দামে স্পেকট্রাম বণ্টন থেকে এ রাজাকে রুখতে পারতেন। ফলে এই সব বিষয় নিয়ে সরকারকে জবাব দিতে হবে। অণ্ণা হজারে শিবিরও এখন চিদম্বরমকে বেকায়দায় ফেলতে তৎপর। সুপ্রিম কোর্টে চলতি মামলার মাঝেই কাল বিশেষ আবেদন পেশ করতে চলেছেন অণ্ণা-সহযোগী আইনজীবী প্রশান্তভূষণ। তাঁর দাবি, স্পেকট্রাম বণ্টনে চিদম্বরমের ভূমিকা খতিয়ে দেখতে বিশেষ তদন্তকারী দল (এসআইটি) গঠন করা হোক।
তবে প্রশ্ন হল, চিদম্বরমকে বাঁচানোর তৎপরতার মধ্যে অর্থ মন্ত্রকের নোট নিয়ে বিতর্ক কি চাপা পড়ে গেল?
সরকারের শীর্ষ সূত্রে বলা হচ্ছে, তা নয়। আদালতের বিষয়টি অগ্রাধিকার বলে তা নিয়ে এখন তৎপরতা বেশি। নোট নিয়ে বিতর্কে সরকার ও কংগ্রেসের অন্দরমহলে স্নায়ুর লড়াই অব্যাহত। আমেরিকা সফর সেরে আজ রাতে দেশে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। কাল কলকাতা থেকে দিল্লি ফিরবেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়। তার পর মনমোহন-প্রণব বৈঠক হবে। সেই সঙ্গে সনিয়া গাঁধীর উপস্থিতিতে কংগ্রেস কোর গ্রুপেরও বৈঠক হবে। কংগ্রেস সূত্রে বলা হচ্ছে, তার পর প্রণববাবু কোনও বিবৃতি প্রকাশ করতে পারেন।
তবে তার আগে অর্থ মন্ত্রকের তরফে এখন ধারাবাহিক ভাবে এটাই তুলে ধরা হচ্ছে যে বিতর্কিত নোটটি অর্থ মন্ত্রক নিজের উৎসাহে তৈরি করেনি। সেই নোট তৈরির আগে এ বছর ২৫ জানুয়ারি থেকে ১১ মার্চ পর্যন্ত কয়েক দফা বৈঠক হয়। যে বৈঠকে তৎকালীন ক্যাবিনেট সচিব কে এম চন্দ্রশেখর, প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের যুগ্ম সচিব বিনি মহাজন এবং আইন সচিব উপস্থিত ছিলেন। ফলে অর্থ মন্ত্রকের দিকে তর্জনী তোলা হচ্ছে কেন? দ্বিতীয়ত, বিষয়টি বিচারাধীন হওয়া সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় থেকে ওই নোটটি তথ্য জানার অধিকারে কেন দেওয়া হল, কেন ক্যাবিনেট সচিব, আইন ও অর্থ মন্ত্রকের সঙ্গে তার আগে আলোচনা করা হল না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। |
|
|
|
|
|