|
|
|
|
বিরোধীদের পাশাপাশি কড়া বার্তা দিলেন দলে সমালোচকদেরও |
ষড়যন্ত্র ভেস্তে পাঁচ বছরই থাকব, দাবি মনমোহনের |
জয়ন্ত ঘোষাল • নয়াদিল্লি |
টু-জি বিতর্ক নিয়ে সরকারের অন্দরের দ্বন্দ্ব কাটানোর চেষ্টা যখন জোর কদমে চলছে, ঠিক তখন বিরোধী দলগুলিকে পাল্টা আক্রমণ করে বাইরের চাপ সামাল দেওয়ার চেষ্টা করলেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। আজ দেশে ফেরার ঠিক আগে কড়া ভাষায় তিনি জানিয়ে দিলেন, বিরোধীরা অসময়ে ধৈর্য হারাচ্ছেন। ‘তাঁর সরকার’ পাঁচ বছরই টিকবে। পাশাপাশি, কোনও কোনও ‘শক্তি’ তাঁর সরকার ফেলার চেষ্টা চালাচ্ছে, এই অভিযোগ তুলে মনমোহন দলের মধ্যে তাঁর বিরোধী পক্ষকেও কড়া বার্তা দিলেন বলে মনে করা হচ্ছে।
আজ ফ্রাঙ্কফুর্ট থেকে দিল্লি আসার পথে বিশেষ বিমানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকারের দুই শীর্ষ মন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় এবং পি চিদম্বরমের দ্বন্দ্ব নিয়ে যে জল্পনা হচ্ছে, তা নেহাতই অমূলক। মনমোহনের দাবি, তাঁর সরকারের সামনে কোনও সঙ্কট নেই। ইউপিএ-২ পাঁচ বছর সরকার চালানোর জনাদেশ পেয়েছে। পাঁচ বছরই তারা সরকার চালাবে। বিরোধীদের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ওঁরা সময়ের আগেই অসহিষ্ণু হয়ে পড়েছেন। একটা শক্তি আমার সরকার ফেলারও চেষ্টা চালাচ্ছে। সেই চেষ্টা সফল হবে না।”
এই অভিযোগ অবশ্য সরাসরি খারিজ করেছে বিজেপি। দলীয় মুখপাত্র রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেছেন, “প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য গোটা বিষয়টাকে হাস্যকর করে তুলেছে।”
সরকার পুরো সময় চলবে দাবি করলেও দ্বিতীয় ইউপিএ জমানার মাঝ পর্বে সরকারের প্রতি জনমানসে যে একটা বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে, সে কথাও আজ প্রথম বারের জন্য সরাসরি কবুল করে নিয়েছেন মনমোহন। প্রথম ইউপিএ সরকারের যে গতি ছিল, চলতি জমানায় কোথাও তার ঘাটতি হচ্ছে মেনে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “জনসাধারণের এই মনোভাব কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করতে হবে। আমি আমার সহকর্মীদের এ ব্যাপারে সক্রিয় হওয়ার পরামর্শ দিয়েছি।”
টু-জি স্পেকট্রাম বণ্টনে চিদম্বরমের ভূমিকা নিয়ে অর্থ মন্ত্রকের নোট প্রকাশ্যে আসার পরে গত কয়েক দিন ধরেই জাতীয় রাজনীতি তোলপাড়। ওই নোটে বলা হয়েছে, চিদম্বরম অর্থমন্ত্রী থাকাকালীন ‘আগে এলে আগে পাবে’র ভিত্তিতে স্পেকট্রাম বণ্টনের বিষয়টি জানতেন। চাইলে বিষয়টি আটকানোও তাঁর পক্ষে সম্ভব ছিল। বর্তমান অর্থমন্ত্রী প্রণববাবুর ‘সম্মতিতে’ পাঠানো এই নোট ঘিরে স্বাভাবিক ভাবেই আলোড়ন তৈরি হয়। অবিলম্বে চিদম্বরমকে গ্রেফতার করে তিহাড় জেলে পাঠানোর দাবি তোলে বিজেপি-সহ বিরোধীরা।
অনেকেরই মতে, এই ঘটনা প্রণব-চিদম্বরম দ্বন্দ্বের পরিণতি। যার জেরে সরকারের স্থায়িত্ব নিয়েই প্রশ্ন তৈরি হয়ে যায়। জন্ম নেয় অনেক জল্পনা। আজ জোরের সঙ্গে সেই সব জল্পনার অবসান ঘটাতে চেয়েছেন মনমোহন। তার একটা যেমন অন্তর্বর্তী নির্বাচনের সম্ভাবনা প্রকারান্তরে খারিজ করে দেওয়া। তেমনই এ কথাও বুঝিয়ে দেওয়া যে, তাঁর প্রধানমন্ত্রিত্ব ছাড়ার আশু কোনও সম্ভাবনা নেই। কংগ্রেস মহলের কেউ কেউ বলছিলেন, চলতি সঙ্কটের পরিপ্রেক্ষিতে মনমোহনকে সরিয়ে রাহুলকে প্রধানমন্ত্রী পদে বসাতে পারেন সনিয়া গাঁধী। মনমোহন কিন্তু এ দিন বলেছেন, “আমার সরকার পাঁচ বছরই চলবে।” তবে সরকার ফেলার চেষ্টা প্রসঙ্গে শুধু বিরোধীদের কথা না বলে ‘একাংশ সচেষ্ট’ এমন মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী। অনেকের কাছে যার ব্যাখ্যা, এই একাংশের মধ্যে কংগ্রেসের কিছু নেতাও সামিল, এমনটাই বোঝাতে চেয়েছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী সঙ্কটকে লঘু করে দেখাতে চাইলেও বাস্তবে কিন্তু টু-জি বিতর্ক কেন্দ্রীয় সরকারকে যথেষ্ট বিপাকে ফেলে দিয়েছে। বিশেষ করে দুর্নীতি প্রশ্নে যখন গোটা দেশে একটা ভাবাবেগ তৈরি হয়েছে। অণ্ণা হাজারের আন্দোলন যার নজির। এই অবস্থায় চিদম্বরম তথা সরকারকে বাঁচাতে জোর তৎপরতা কংগ্রেস শিবিরে। আসরে নামতে হয়েছে খোদ সনিয়া গাঁধীকে। প্রণববাবু এবং চিদম্বরমের সঙ্গে ইতিমধ্যেই বৈঠক করেছেন তিনি। যত শীঘ্র সম্ভব বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে।
মনমোহন নিজেও আজ তাঁর সহকর্মীকে আড়াল করতে সচেষ্ট ছিলেন। এর আগে অর্থ মন্ত্রকের নোট সামনে আসার পরেই তিনি বলেছিলেন, “চিদম্বরমের প্রতি আমার পূর্ণ আস্থা রয়েছে।” আর আজ তিনি বলেন, “নীতি নির্ধারণের সময় বিভিন্ন মন্ত্রকের কাছ থেকে পরামর্শ চাওয়া হয়েছিল। তখন পরস্পর-বিরোধী মতামত আসা স্বাভাবিক। কিন্তু মন্ত্রিসভার একাধিক বৈঠকে আলোচনার পরে সর্বসম্মত ভাবে এটা স্থির হয় যে, স্পেকট্রাম বণ্টনের ক্ষেত্রে টেলিকম মন্ত্রক স্বাধীন ভাবেই সিদ্ধান্ত নেবে।” মনমোহনের মতে, সিদ্ধান্ত হয়ে যাওয়ার পরে ওই সব মতামত নিয়ে জল্পনার আর কোনও তাৎপর্য নেই। এই মন্তব্যের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী চিদম্বরমকে ‘নির্দোষ’ তকমা দিয়ে পুরো দায়টা প্রাক্তন টেলিকমমন্ত্রী এ রাজার ঘাড়ে ঠেলে দিলেন বলেই মনে করা হচ্ছে।
প্রণব-মনমোহন দ্বন্দ্বের জল্পনাকেও আজ খারিজ করে দিয়েছেন মনমোহন। তিনি বলেন, “মন্ত্রীদের দৃষ্টিভঙ্গির ফারাক রয়েছে। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে, মন্ত্রিসভায় মতৈক্যের অভাব আছে। সংবাদমাধ্যমে গত ক’দিন ধরে এ ব্যাপারে যা বলা হচ্ছে, তার কোনও ভিত্তি নেই। মন্ত্রিসভার বৈঠকে খোলা মনেই আলোচনা হয়। বিভিন্ন মত থাকলে সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধাই হয়।” |
|
|
|
|
|