সময় এল কাছে...
আয়নায় দেবীর প্রতিবিম্ব, ক্যারম বোর্ডের মণ্ডপ
সেই ছোট্টবেলা থেকে তিতাস বারাণসীর গল্প শুনে আসছে। শুনেছে বারাণসীর অলিগলি, বিভিন্ন ঘাটের গল্প। সে সব শুনতে শুনতে মনটা নেচে উঠলেও যাওয়ার সুযোগ আর হয়ে ওঠেনি। তাই এ বার যখন এক বন্ধু বলল ‘ঠাকুরপুকুর ক্লাব’-এর মণ্ডপে উঠে আসছে বারাণসীরই এক খণ্ডচিত্র, তিতাস ঠিকই করে ফেলেছে আর কোথাও যাক না যাক একদিন ওই পুজোটা দেখবেই।
ঠাকুরপুকুর ক্লাবের থিমটা আসলে ‘আলোর রেখায় বারাণসী’। কাঠ, পিতল, লোহার পাইপ, মাটি, রঙিন কাগজ আর বিভিন্ন শাস্ত্রীয় উপকরণে তৈরি হচ্ছে অলিগলি, ঘাট আর মন্দিরের চূড়া। মণ্ডপে অতি বেগুনি রশ্মি দিয়ে ফুটিয়ে তোলা হবে সন্ধ্যার বারাণসীর মাধুর্য্য। সুপ্রাচীন এই নগর সভ্যতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তৈরি হবে দেবী দুর্গার মন্দির আর সাবেক প্রতিমা।
কিন্তু একটা মণ্ডপ ঘুরলেই তো আর হবে না। তিতাস আর তার বন্ধুরা মিলে তাই প্ল্যান করেই ফেলেছে কবে কোথায় যাবে। যাতে চার দিনে মোটামুটি সব ধরনের থিমের স্বাদই পাওয়া যায়। কলকাতা যেন এ সময়টায় আস্ত একটা শিল্পের মেলা হয়ে ওঠে।
ঠাকুরপুকুর থেকে একটু দূরেই ‘বড়িশা ইয়ুথ ক্লাব’। বারো ফুটের চোদ্দটি পুতুল দিয়ে অর্ধচন্দ্রাকারে তৈরি হচ্ছে মণ্ডপ। দু’পাশে পুতুলের সারি। রংচঙে পুতুলের গায়ে সূক্ষ্ম সুতোর কাজ। মণ্ডপের উপরে খোলা আকাশ। প্রতিমার গায়ের রং কচি কলাপাতার মতো।
‘বেহালা ত্রিশক্তি সঙ্ঘ’ ছাত্রজীবনের নিত্যসঙ্গী পেন্সিলের সাহায্যেই গোটা মণ্ডপটা গড়ে তুলছে রাজস্থানের রাজবাড়ির আদলে। প্রায় আঠেরোটি ফ্রেমে তুলে ধরা হবে রাজস্থানের বিভিন্ন মিনিয়েচার চিত্রকলা। দেবীর সাজও রাজস্থানি। প্রতাপাদিত্য রোডের ত্রিকোণ পার্কের পুজোয় আবার হারাতে বসা শিল্পের স্বাদ। ডোকরা, পটচিত্রে সাজছে মণ্ডপ। সঙ্গে প্রদীপের আলো। সামনে ওয়ার্কশপে বিকিকিনির জন্য এ ধরনের শিল্পকর্ম নিয়ে থাকছেন শান্তিনিকেতন, বিহার ও ওড়িশার শিল্পীরা।
অন্য দিকে, ৯৭তম বছরে ‘আদি লেক পল্লি’ মণ্ডপের ভিতরে-বাইরে কাঠের বাটামের উপরে ক্যানভাসে ফুটিয়ে তুলছে প্রায় সাড়ে তিনশোর বেশি তন্ত্রের মুদ্রা। প্রতিমাও সেই ভাবধারাতেই। প্রায় বারো ফুট উচ্চতার মহিষের শিং দু’হাতে ধরে দাঁড়িয়ে থাকবেন দেবী।
‘রাজডাঙা নব উদয় সঙ্ঘে’র মণ্ডপসজ্জা পুরনো ফোল্ডিং আয়নার আকারে। ভিতরে থাকছে গোলাকার আয়নার মণ্ডপ। সামনে গোলাকার জলাশয়ে দেখা যাবে দেবীর প্রতিবিম্ব। তা ছাড়াও কয়েকটি জায়গায় এমন ভাবে আয়না টাঙানো থাকছে, যেখান থেকে প্রতিমাদর্শন করা যাবে। আলোর প্রতিফলনে আর মঙ্গলদীপে সাজবে মণ্ডপ ও জলাশয়।
দশকর্মার জিনিসপত্র ছাড়া পুজো হয় নাকি? বাইপাস ও প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোড সংযোগস্থল সংলগ্ন ‘কালীতলা সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি’ তাই ঘট, গামছা, শাঁখা, সিঁদুর, আলতা, সুপারি, হরিতকি, পিতলের থালা-গ্লাস-বাটি অর্থাৎ দশকর্মার নানা সরঞ্জাম দিয়ে সাজাচ্ছে মণ্ডপ। সঙ্গে থাকছে চন্দননগরের আলোকসজ্জা।
স্কুল-কলেজের দিনগুলোয় জমিয়ে ক্যারম খেলার কথা মনে করিয়ে দিতে চায় ‘ট্যাংরা ঘোলপাড়া সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি’। একুশ দশকের অলিম্পিকে ক্যারমকে অর্ন্তভুক্ত করার জোরালো দাবি নিয়ে এখানকার মণ্ডপ, ঠাকুরের পিছনের চালচিত্র, এমনকী ঝাড়বাতিও তৈরি হচ্ছে ক্যারম বোর্ড ও ঘুঁটি দিয়ে।
সব সৃষ্টির পরিণতি ছাই এই ভাবনাতেই ত্রিপল, চট, দড়ি, পিচবোর্ড আর ছাই দিয়ে কাল্পনিক পাথরের রূপে নাটমন্দির গড়ছে ‘উল্টোডাঙা শুঁড়িবাগান সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি’। মণ্ডপে ঢুকলেই দু’পাশের দেওয়ালে বিষ্ণুর বিভিন্ন অবতার। নাটমন্দিরে অধিষ্ঠিত স্বয়ং বিষ্ণু। সেখান থেকেই দেখা যাবে দুর্গা মন্দির। ভিতরে দুর্গাপ্রতিমা ছাড়াও থাকবে দশমহাবিদ্যার নানা রূপ।
চার দিনের প্ল্যান হয়েই আছে। তিতাসরা এখন শুধু বেরিয়ে পড়ার অপেক্ষায়।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.