|
|
|
|
ভুয়ো সংস্থাকে প্রেক্ষাগৃহ ভাড়া |
গাঁজার মৌতাতে উদ্দাম নাচাগানা যুব কেন্দ্রেই |
নিজস্ব সংবাদদাতা |
সরকারি দফতরের অধীনে আছে যুব কেন্দ্রটি। কিন্তু টাকা ফেললেই সেই কেন্দ্রের প্রেক্ষাগৃহে যা খুশি, তা-ই করা যায়। এমনকী গাঁজার মৌতাতে উদ্দাম নাচাগানাও। ভাড়া মিটিয়ে দিলে ভুয়ো সংস্থাও নিজেদের অনুষ্ঠানের জন্য প্রেক্ষাগৃহটি পেয়ে যাচ্ছে। কারণ, ওই প্রেক্ষাগৃহ ভাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে কার্যত কোনও নিয়মবিধিই নেই।
দূরবর্তী কোনও জেলার ঘটনা নয়। রাজ্যের যুব কল্যাণ দফতরের অধীন ওই যুব কেন্দ্রে প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলা চলছে খাস কলকাতারই মৌলালিতে। সম্প্রতি একটি ব্যান্ডের উদ্দাম গানবাজনা ও আনুষঙ্গিক হুল্লোড়ের ঘটনায় সেখানকার বেহাল দশা বেআব্রু হয়ে গিয়েছে।
ঘটনাটি গত শুক্রবারের। মৌলালি যুব কেন্দ্রের ৪০০ আসনের প্রেক্ষাগৃহটি সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ভাড়া নেওয়া হয়েছিল উত্তর শহরতলির একটি ‘পূজা সম্মিলনী’র নাম করে। সেই নামে রাজ্যের যুব কল্যাণ অধিকর্তার দফতর থেকে ভাড়া বাবদ নেওয়া ৩২০০ টাকার রসিদও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ওই অনুষ্ঠান যখন সব শৃঙ্খলা ভেঙে দিল, তখন টনক নড়ল কর্তৃপক্ষের। খোঁজ পড়ল ওই সংস্থার। আর তখনই জানা গেল, সংস্থাটি ভুয়ো!
বিষয়টি হয়তো ধামাচাপা পড়ে যেত, যদি না শুক্রবার বিকেলে মহাকরণে যুব কল্যাণ মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাসের দফতরের ফ্যাক্সে একটি অভিযোগ আসত। যুব কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ নিতে যাওয়া ছাত্রছাত্রীদের নামে পাঠানো ওই ফ্যাক্স-বার্তায় অভিযোগ করা হয়, সেই মুহূর্তে যুব কেন্দ্রের প্রেক্ষাগৃহে উচ্চগ্রামে একটি ব্যান্ডের দলের গানবাজনা চলছে। সেই সঙ্গে তুমুল নাচের দাপটে যুব কেন্দ্রে অন্যান্য কাজ করা দায় হয়ে উঠেছে। কাঁপছে সরকারি বাড়িটির কাচের জানলাও। অভিযোগ পেয়েই মন্ত্রী তাঁর একান্তসচিব তীর্থঙ্কর হালদার এবং আপ্ত-সহায়ক গৌতম রায়কে মৌলালি যুব কেন্দ্রে পাঠান। আর তখনই ধরা পড়ে যায়, কী ভাবে চলছে ওই কেন্দ্রের প্রশাসন।
তীর্থঙ্করবাবু ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানান, গাড়িতে বসেই তাঁরা ব্যান্ডের শব্দ শুনতে পাচ্ছিলেন। ভিতরে ঢুকে তাঁরা দেখেন, পুরো প্রেক্ষাগৃহটি আঁধো-অন্ধকার। ব্যান্ডের প্রবল ধুমধাড়াক্কার সঙ্গে চলছে উদ্দাম নাচ। কেউ কেউ নাচছেন চেয়ারের উপরে উঠে। আছেন মেয়েরাও। গাঁজার গন্ধে প্রেক্ষাগৃহ ভরপুর। অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তাদের যুব কেন্দ্রের কার্যালয়ে নিয়ে গিয়ে প্রশ্ন করা হয়। তাঁরা স্বীকার করে নেন, পূজা সম্মিলনীর নামটি ভুয়ো। তাঁদের তৎক্ষণাৎ অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিতে বলা হয়। ডাকা হয় পুলিশকেও।
ওই দিন যে-সংস্থাটি প্রেক্ষাগৃহটি ভাড়া নিয়েছিল, পরে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা বা তাদের বক্তব্য জানা যায়নি। কারণ, ভাড়া নেওয়ার রসিদে ওই সংস্থার যে-মোবাইল নম্বর লেখা ছিল, তাতে বারবার ফোন করেও কোনও সাড়া মেলেনি। তবে যুব কল্যাণ দফতরের নিজস্ব তদন্তেও জানা গিয়েছে, সংগঠনটি ভুয়ো।
ভুয়ো সংস্থাকে প্রেক্ষাগৃহ ভাড়া দেওয়া হল কী ভাবে? যুব কেন্দ্রের প্রশাসনিক আধিকারিক গৌতম দাশগুপ্ত এ ব্যাপারে মহাকরণে একটি রিপোর্ট পাঠিয়েছেন। তাতে তিনি জানান, প্রেক্ষাগৃহটি যে কাল্পনিক নামে সংরক্ষণ করা হয়েছিল, তাঁরা সেটা জানতে পেরেছেন পরে।
এটা বন্ধ করার জন্য আদৌ কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে কি?
এই ধরনের ঘটনা এড়াতে ভবিষ্যতে যারা প্রেক্ষাগৃহ সংরক্ষণ করতে চাইবে, সেই সংগঠনের তরফে আবেদনকারীর ভোটদানের সচিত্র পরিচয়পত্রের ‘অ্যাটেস্টেড’ বা প্রত্যয়িত প্রতিলিপি জমা রাখার প্রস্তাব দিয়েছেন প্রশাসনিক আধিকারিক। যুব কেন্দ্রে অনুষ্ঠান করার নিয়মবিধি সম্পর্কে আবেদনকারীদের আগাম সতর্ক করতেও বলেছেন তিনি। যুব কল্যাণ দফতরের অধিকর্তা কাঞ্চন দাস বলেন, “প্রস্তাবটি ভাল। আমি মন্ত্রীকে তা জানাব।” |
|
|
|
|
|