অভিযোগ পেলে কড়া ব্যবস্থার আশ্বাস পার্থর
রাজারহাটে তোলাবাজির দাপটে নাভিশ্বাস শিল্পসংস্থার
জুলুমবাজির অভিযোগ আগেও ছিল। এখন তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে তোলাবাজি। অভিযোগ, এই তোলাবাজির দাপটে রীতিমতো নাভিশ্বাস উঠছে রাজারহাট-নিউটাউন এলাকায় ব্যবসা করতে আসা একাধিক শিল্পগোষ্ঠীর। বাদ যাচ্ছে না ছোট ও মাঝারি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলিও।
অথচ রাজ্যে ক্ষমতা দখলের পরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন, তাঁর সরকার যে কোনও রকম তোলাবাজির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে। সরকার গঠনের পরে একটি প্রকল্পের শিলান্যাস করতে গিয়ে শিল্পপতিদের উদ্দেশেও মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘দলের নাম করে কেউ টাকা চাইলে আপনারা কখনওই দেবেন না। এটা আপনাদেরও বন্ধ করতে হবে’। অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রীর এই কড়া মনোভাবের পরেও রাজারহাট এলাকার পরিস্থিতি বিশেষ বদলায়নি। সেখানে চড়া দামে নিচু মানের ইমারতি দ্রব্য কেনার জন্য জুলুমবাজির অভিযোগ আগেও ছিল। এখন তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে তোলাবাজির সমস্যা। যার ফলে সমস্যায় পড়ছে ছোট-বড় প্রায় সব নির্মাণ সংস্থাই।
তোলাবাজির হাত থেকে রেহাই পায়নি প্রায় ৩৫০ কোটি মার্কিন ডলার ব্যবসা করা দেশের একটি বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠীও। রাজারহাটে ইউনিটেক ইনফোস্পেস নামে একটি বিশেষ আর্থিক অঞ্চলে একটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার ৬২ হাজার বর্গ ফুট জুড়ে নতুন অফিস সাজিয়ে দেওয়ার বরাত পেয়েছিল তারা। আর সেটা করতে গিয়েই সমস্যায় পড়ে সাজানোর বরাত পাওয়া সংস্থাটি।
অভিযোগ, গত জুলাই মাসে ইউনিটেক ইনফোস্পেসে ঢোকার মুখে ওই সংস্থাটির মালবোঝাই লরি আটকে দেওয়া হয়। লরি প্রতি ৫০০০ টাকা দাবি করার পাশাপাশি হুমকি দেওয়া হয়, টাকা না দিলে শুধু মাল সরবরাহ বন্ধ করা নয়, আটকে রাখা হবে সঙ্গে আসা লোকজনকেও। সংস্থার তরফে ১৮ই জুলাই পুরো বিষয়টি জানিয়ে রাজারহাট থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। পুলিশকে জানালেও বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে নারাজ সংস্থা কর্তৃপক্ষ। তবে সূত্রের খবর, বিষয়টি ‘আপসে’ মিটিয়ে নিয়েই কাজ করতে পেরেছে সংস্থাটি।
স্থানীয় সূত্রের অভিযোগ, ৪৫ একরের বেশি জমি জুড়ে ইউনিটেকের এই বিশেষ আর্থিক অঞ্চলের সামনেই অস্থায়ী ডেরা তোলাবাজদের। যে কোনও সংস্থা, যে কোনও রকম মাল নিয়ে ঢুকতে গেলেই তারা তোলা আদায়ে নেমে পড়ে। এক ভুক্তভোগীর কথায়, “রাজারহাটে আগেও নির্মাণ সামগ্রী সরবরাহ নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়েছে। তবে অনেক সংগঠিত আকারে ছিল বলে বেশি সমস্যা হত না। সমস্যা অনেক দ্রুত মিটিয়ে ফেলা যেত। এখন বিভিন্ন জায়গায় চাঁদা দিয়েও শান্তিতে কাজ করা যাচ্ছে না।”
তোলাবাজির শিকার হচ্ছে ছোট ও মাঝারি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাও। সম্প্রতি এ রকমই তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে অনাবাসী এক বাঙালির। ব্রিটেনে বসবাসকারী এই ব্যবসায়ী রাজারহাটে সংস্থার নিজস্ব অফিস তৈরি করতে চেয়ে আধ একর (দেড় বিঘা) জমিও কিনেছেন। গত মাসে কাজ শুরু করতে কলকাতায় আসেন তিনি। কিন্তু নির্মাণ কাজ শুরু করার আগেই বিপত্তি। অভিযোগ, ১৫ লক্ষ টাকা দাবি করা হয় তাঁর কাছে। স্বাভাবিক ভাবেই তা দিতে নারাজ ওই প্রবাসী ব্যবসায়ী। সমাধান সূত্র খুঁজে না পেয়ে তিনি ফিরে গিয়েছেন ব্রিটেনে।
তৃণমূল ও সিপিএম, দু’দলের স্থানীয় নেতাদের দাবি, এলাকার জমিহারা যুবকদের নিয়ে একাধিক ‘সিন্ডিকেট’ করা হয়েছিল। তারাই ওই অঞ্চলের প্রকল্পগুলিতে নির্মাণ সামগ্রী সরবরাহ করে। ভুক্তভোগীদের বক্তব্য, রাজনৈতিক পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গে ওই সব ‘সিন্ডিকেট’ ভেঙে গিয়েছে। ফলে গোটা বিষয়টির উপর কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। একটি নির্মাণ সংস্থার কর্তার বক্তব্য, শুধু ইমারতি দ্রব্য কেনা নিয়েই সমস্যা নয়। যে কোনও কাজ করতে গেলেই এখন তোলা দিতে হচ্ছে।
সমস্যার কথা উড়িয়ে দিচ্ছেন না শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর সুরেই তিনি জানান, তোলাবাজি কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। তিনি বলেন, “আমাদের কাছে অভিযোগ এলে তার দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ধরনের অভিযোগ পাওয়ার পরে গ্রেফতারও করা হয়েছে। আমরা বার বার বলছি, অভিযোগ জানাতে এগিয়ে আসুন ব্যবসায়ীরা।”
তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ভুক্তভোগীরা পুলিশ বা স্থানীয় বিধায়কের কাছে অভিযোগ করছেন না। উত্তর ২৪ পরগনার এক পুলিশ কর্তার কথায়, “অভিযোগ না জানালে পুলিশ কী করবে? টাকা চেয়ে ফোনে হুমকি বা কাজ বন্ধ করে দেওয়ার মতো অপরাধ হয়ে থাকলে ব্যবসায়ীরা জানান। ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” রাজারহাট-নিউটাউনের বিধায়ক তৃণমূল কংগ্রেসের সব্যসাচী দত্ত অবশ্য তোলাবাজির অভিযোগ মানতে নারাজ। তিনি বলেন, “এলাকার যুবকেরা নির্মাণ সামগ্রী সরবরাহ করে। তা নিয়ে মাঝেমধ্যে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে গোলমালও হয়। আগেও হত। কিন্তু তোলাবাজির ঘটনা ঘটেনি। সে রকম হলে ব্যবসায়ীরা পুলিশ কিংবা দলকে জানান। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
পুলিশ কর্তা বা বিধায়ক যা-ই বলুন, পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ জানাতে অনেকেই এগোচ্ছেন না। কারণ পুলিশের হস্তক্ষেপে সাময়িক ভাবে সমস্যা মিটলেও পরবর্তী সময় কাজ চালিয়ে যাওয়া সহজ হবে না বলেই তাঁদের আশঙ্কা। নিজেদের এবং কর্মীদের নিরাপত্তা নিয়েও শঙ্কিত তাঁরা। ফলে টাকাপয়সার দাবি মিটিয়েই রফা সূত্র খুঁজে নিচ্ছেন বেশির ভাগ। অনেকে কাজ বন্ধ রেখেছেন আপাতত। আশা, পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.