অপূর্ব চট্টোপাধ্যায় • মাড়গ্রাম |
রাজবাড়ির নিদর্শন আজ নেই। শুধু রয়েছে বাড়ির ইটের টুকরো। তবে রয়েছে পঞ্চমুণ্ডির বেদীর নিদর্শন। সেখানেই একচালার মূর্তিতে প্রত্যেক বছর ঘটা করে পুজো হয়। এ বারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। মাড়গ্রাম থানার গয়তা গ্রামে দুর্গাপুজোর প্রচলন করেছিলেন রাজা রাম রায়চৌধুরী।
টিনের ছাউনি দেওয়া আটচালা চণ্ডীমণ্ডপটি অনেকটা ফাঁকা জায়গায়। মণ্ডপের ভিতরে টিমটিম করে জ্বলছে মোমবাতি। দরজা খুলতেই দেখা গেল বেদীতে পড়ে রয়েছে জবা ও টগর ফুল। বেদীর একপাশে দুর্গা, সরস্বতী, লক্ষ্মী, কার্তিক, গণেশের মূর্তিতে পড়ছে সাদা রঙের প্রলেপ। দুর্গাপুজোর অন্যতম শরিক কালীপদ ঘোষ বলেন, “বোধনের ঘট আনার দিন থেকে এখানে পুজো শুরু হয়ে গিয়েছে। বোধনের দিন ছাগবলি হয়। বোধনের পর থেকে চলে নিত্য পুজো। চণ্ডীমণ্ডপের ভিতরে পাকা বেদীর তলায় রয়েছে পঞ্চমুণ্ড। রাজা রাম রায়চৌধুরী তন্ত্রসাধনা করতেন পঞ্চমুণ্ডের বেদীতে। মূর্তি গড়া সম্পূর্ণ হয়ে গেলে সেখানে দেবীকে নিয়ে আসা হয়।” |
রাজা নেই। রাজ্যপাটও নেই। তবু তাঁর প্রতিষ্ঠিত পুজো এখনও থেকে গিয়েছে। আর এক শরিক স্বর্ণেন্দু সিংহ বলেন, “১৬৩৯ (ইংরেজি) সালে উত্তররাঢ়বঙ্গে রাম রায় চৌধুরীর আবির্ভাব হয়। মুর্শিদকুলি খাঁর আমলে তিনি তিনি রাজা উপাধি লাভ করেন। রাজা রামরায়চৌধুরীর পূর্বপুরুষ সুদর্শন মিত্র ছিলেন গয়তার পাশের গ্রাম বেলুন গ্রামের বাসিন্দা। সুদর্শন মিত্রের অধীনে গয়তা, বোনতা, বেলুন, মেহেগ্রাম, কুরুমগ্রাম, কালুহা প্রভৃতি গ্রাম তাঁর অধীনে ছিল। সে জন্য এই এলাকাগুলি এখনও মিত্রভুম নামে খ্যাত। এই মিত্র বংশের বংশপরম্পরায় সুন্দররাম চৌধুরীর পৌত্র ছিলেন রাজা রাম রায়চৌধুরী। ইতিহাস সূত্রে জানা গিয়েছে, মুর্শিদকুলি খাঁর আমলে ব্যক্তিগত কারণে খাজনা আদায়ের দায়িত্ব থেকে ইস্তফা দিয়ে গয়তা গ্রামে ফিরে আসেন রাজা। এবং বিভিন্ন দেবদেবীর পুজো চালু করেন।
বর্তমানে মেয়ের বংশধর বোনতার সিংহ বাড়ি ও নাতনির বংশধর গয়তার সিংহ ও ঘোষ বাড়ির বংশধররা সব ধরনের পুজো চালিয়ে আসছেন। পারিবারিক পুজো হলেও এই পুজোকে ঘিরে গ্রামের বাসিন্দারা মেতে ওঠেন। |