যখনই প্রদীপ নিভেছে, কোনও না কোনও অঘটন ঘটেছে। তাই সপ্তমীর সকালে জ্বালানো প্রদীপ পুজোর দিনগুলিতে টানা পাহারা দেন পরিবারের সদস্যেরা। দীর্ঘ দিন ধরে এমন রীতিই চলে আসছে বলে জানান রানিগঞ্জের কুমোরবাজারের পাল ও কুণ্ডু পরিবারের লোকজন।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, প্রায় দু’শো বছর আগে দুই ভাই, রামকৃষ্ণ কুণ্ডু ও রামকান্ত কুণ্ডু পুজোর সূচনা করেন। কিন্তু বছর পাঁচেক পরেই মনোমালিন্য হয়। তার পরে কিছুটা দূরে একটি বড় এলাকা জুড়ে দুর্গা ও শিবের মন্দির প্রতিষ্ঠা করে পৃথক পুজোর প্রচলন করেন রামকৃষ্ণবাবু। কিন্তু আশ্চর্যের কথা, অপুত্রক রামকান্ত ভাই রামকৃষ্ণের পুত্র দীননাথকেই দত্তক নেন। পুজোর দায়িত্ব এসে পড়ে দীননাথের উপরে। পরিবারের বর্তমান সদস্য ভবেশ কুণ্ডুর দাবি, তাদের পুজোই শহরের প্রাচীনতম। অন্য দিকে, রামকৃষ্ণের অন্য তিন পুত্র পুজো চালিয়ে যেতে থাকেন। পরবর্তী কালে দৌহিত্র সূত্রে এই পুজোর শরিক হন পাল পরিবারের সদস্যেরা। দুই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গঠিত পুজো কমিটির সভাপতি ধর্মদাস পাল জানান, সম্পূর্ণ বৈষ্ণব মতে পুজো হয়। এমনকী কুমড়ো বলিও হয় না তাঁদের পুজোয়।
অন্ডাল থানা এলাকার মদনপুর গ্রামে চট্টোপাধ্যায় পরিবারের পুজোয় আট শরিকের সব সদস্যই চার দিন পুজো উপলক্ষে জড়ো হন। প্রায় ১৪০ বছর আগে পুজোর প্রতিষ্ঠা করেন পরিবারের সদস্য, পেশায় আইনজীবী মহেশ চট্টোপাধ্যায়। এখানে সিংহের পরিবর্তে দেবীর বাহন বাঘ। দেবীর ডান দিকে কার্তক-লক্ষ্মী এবং বাঁ দিকে থাকেন গণেশ-সরস্বতী। এই পরিবারের পুজোয় এখনও বলির প্রথা রয়েছে।
বক্তারনগর তফাদারবাড়ির পুজো প্রায় দু’শো বছরের পুরনো। ঐতিহ্য মেনে এখানে এখনও দেবীর ভোগে দেওয়া হয় পান্তা ভাত ও মাছ পোড়া। দশমীর দিন চ্যাং মাছ বলি হয়। পরিবারের সদস্য নন্দ তফাদার জানান, তাঁদের কোনও পূর্বপুরুষ তান্ত্রিক ছিলেন। তিনিই এই পুজোর প্রচলন করেন। দেবীর ডান দিকে সরস্বতী-গণেশ ও বাঁ দিকে লক্ষ্মী-কার্তিকের অবস্থান।
বক্তারনগর গ্রামে মামারবাড়ির পুজোয় বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করতেন ত্রিলোচন বন্দ্যোপাধ্যায়। পুজো নিয়ে মামাদের কলহ মেটাতে গিয়ে অপমানিত হন তিনি। পরের বছরেই তাঁরা তিন ভাই মিলে পুজো শুরু করেন। মামারবাড়ির অদূরে পৃথক মন্দিরে শুরু হওয়া সেই পুজো চলে আসছে ১০৪ বছর ধরে। পরিবারের বর্তমান সদস্য সুধাময়বাবু জানান, নবমীর দিন কুমারী পুজোর চল রয়েছে। পাশাপাশি, কুমারী ভোজনও হয়। |