ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত জলপাইগুড়ির রাজবাড়ি এবং সদর হাসপাতালে মেরামতির কাজ ২৪ ঘন্টার মধ্যে শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (এসজেডিএ) চেয়ারম্যান রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য।
শনিবার সকালে জলপাইগুড়ির বৈকুন্ঠপুরের রাজবাড়ির সিংহদুয়ার থেকে শুরু করে সদর হাসপাতালের ক্ষয়ক্ষতি খতিয়ে দেখেন তিনি। এক সময়ে শহরের পতিতাপল্লিতে এডস নিয়ে কাজ করা চিকিৎসক রুদ্রনাথবাবু ঘুরে দেখেন ‘নিষিদ্ধ’ এলাকাগুলিও। এ দিন সকালে জলপাইগুড়িতে পৌঁছেই এসজেডিএর বাস্তুকারদের নিয়ে রাজবাড়ির সিংহদুয়ারে পৌঁছন তিনি। ভূমিকম্পের আঘাতে সিংহদুয়ার এক পাশে হেলে গিয়েছে। ফাটলও ধরেছে অজস্র। সিংহদুয়ারটির স্থায়িত্ব নিয়েই শহরের বিভিন্ন মহলে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। এ দিন তা দেখে উদ্বিগ্ন রুদ্রনাথবাবু রবিবার থেকেই মেরামতির কাজ শুরুর নির্দেশ দেন। লোহার খাঁচা দিয়ে সিংহদুয়ারটি ঘিরে রাখা হবে বলে বাস্তুকাররা জানিয়েছেন।
রুদ্রনাথবাবু বলেন, “এই হেরিটেজ সিংহদুয়ারটি জলপাইগুড়ি শহরের ঐতিহ্য, মর্যাদার প্রতীক। গত ৪০ বছর ধরে আমার সঙ্গে জলপাইগুড়ির সম্পর্ক। কাল থেকেই কাজ শুরু করার নির্দেশ দিয়েছি। প্রথমে লোহার খাঁচা তৈরি করে সিংহদুয়ারটিকে মজবুত করার চেষ্টা হবে। পুজোর পরে ভারতীয় আর্কিওলজিক্যাল দফতরের বিশেষজ্ঞদের ডেকে নিয়ে এসে এটিকে সম্পূর্ণ মেরামত করা হবে। টাকা নিয়ে কোনও চিন্তা নেই। জলপাইগুড়ি শহরের এই ঐতিহ্য সংরক্ষণের জন্য যত টাকা লাগে দেওয়া হবে।”
রাজবাড়ির সিংহদুয়ার দেখার পরে জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালের ক্ষয়ক্ষতি দেখতে যান রুদ্রনাথবাবু। রোগীদের খোঁজখবর নেওয়ার পাশাপাশি তাঁদের নাড়ি টিপে দেখেন। দোমহনি থেকে মামিকে জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে নিয়ে এসেছিলেন সঞ্জীব দাস। রুদ্রনাথবাবুকে দেখে উত্তেজিত সঞ্জীববাবু বলেন, “এই হাসপাতালে কোনও চিকিৎসা নেই। সামান্য পেট খারাপ আর মাথা ঘোরার সমস্যা নিয়ে মামিকে ভর্তি করেছিলাম গত কাল। সারাদিন চিকিৎসক দেখল না। আজকে রেফার করে দিল। আমরা গরিব ঘরের লোক।”
রুদ্রনাথবাবু প্রথমেই উত্তেজিত সঞ্জীবকে শান্ত করে বলেন, “বিহিত পরে হবে। আগে তোমার মামির সুষ্ঠু চিকিৎসা প্রয়োজন।” পকেট থেকে মোবাইল ফোন বের করে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের সুপারকে সঞ্জীববাবুর মামির নাম লিখে রাখার নির্দেশ দিয়ে বলেন, “একটু পরেই ওঁরা মেডিক্যালে পৌঁছবেন। জরুরি বিভাগে খবর দিন, যাতে দ্রুত দায়িত্ব নিয়ে চিকিৎসা শুরু হয়। পরে আবার খোঁজ নেব।” এর পরে কখনও হাসপাতালের চক্ষু বিভাগে কখনও শিশু বা ব্লাড ব্যাঙ্ক ঘুরে দেখেন রুদ্রনাথবাবু। পরে বলেন, “জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যবস্থা মোটামুটি ভালই। তবে কিছু বিষয়ে ক্রুটি রয়েছে। সেগুলি সুপারকে বলে দিয়েছি।”
হাসপাতালের কখনও শিশু ওয়ার্ডে, কখনও বা চক্ষু বিভাগ, মহিলা বিভাগ ঘুরে দেখেন। চক্ষু বিভাগে ভর্তি এক মহিলার অস্ত্রোপচারে বিলম্ব হচ্ছে শুনে ক্ষুব্ধ রুদ্রনাথবাবু দ্রুত অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেন সুপারকে। মহিলার কপালে হাত বুলিয়ে বলেন, “চিন্তা করবেন না মা, দ্রুত সেরে উঠবেন। পুজোর আগেই বাড়ি ফিরতে হবে তো।” |