পুলিশ এবং সিআইডি-র খাতায় ‘নিখোঁজ’। কিন্তু সিপিএমের লালগড় লোকাল কমিটির সম্পাদক জয়দেব গিরির কর্মস্থল, রামকৃষ্ণ বিদ্যালয়ের হাজিরা-খাতা ‘অন্য কথা’ বলছে।
আগামী কাল, সোমবার নেতাই-মামলায় চার্জ-গঠন হতে চলেছে মেদিনীপুরের বিশেষ দায়রা আদালতে। তার পরে শুরু হবে বিচারপর্ব। ঠিক তার আগেই ওই মামলার এফআইআরে অন্যতম অভিযুক্ত সিপিএম নেতা জয়দেববাবুকে হাতের নাগালে পেয়েও রাজ্য পুলিশ গ্রেফতার করেনি বলে রীতিমতো ‘তথ্যপ্রমাণ’-সহ অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল। স্কুলের হাজিরা-খাতা, সেই ‘প্রমাণের’ই অন্যতম। অভিযুক্ত সিপিএম নেতা ওই
স্কুলের করণিক।
গত ৭ জানুয়ারি নেতাইগ্রামে সশস্ত্র শিবির থেকে গুলি-চালনায় ৪ মহিলা-সহ ৯ গ্রামবাসী নিহত হওয়ার পরেই লালগড় থানায় যে অভিযোগ দায়ের হয়েছিল, সেই প্রাথমিক এফআইআরে অন্যদের সঙ্গে নাম ছিল জয়দেবের। মামলার প্রাথমিক তদন্ত করেছিল রাজ্য পুলিশ ও সিআইডি। তাদের হাতে যত দিন তদন্তের দায়িত্ব ছিল (২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত), পুলিশ বা তাদের গোয়েন্দা বিভাগ ততদিন দাবি করেছে, ‘জয়দেববাবুকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না’। এই মর্মে হাইকোর্টেও তারা রিপোর্টও দেয়। অথচ, ১৩ জানুয়ারি জয়দেববাবু লালগড়ে তাঁর কর্মস্থল রামকৃষ্ণ বিদ্যালয়ে যান এবং হাজিরা-খাতায় সইও করেন বলে দাবি করছে তৃণমূল। |
মাওবাদী-জনগণের কমিটির ‘ভয়ে’ এক সময়ে এলাকাছাড়া ছিলেন জয়দেববাবু। প্রশাসনের বিশেষ ব্যবস্থায় তিনি মেদিনীপুরে জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের দফতরে হাজিরা দিতেন। তৃণমূলের দাবি, নেতাই-কাণ্ডের পরে, এফআইআরে ওই অন্যতম অভিযুক্তকে পুলিশ যখন ‘খুঁজে পাচ্ছিল না’, সে সময়েও, ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত জয়দেববাবু জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের দফতরে হাজিরা দিয়েছেন। আর ১৩ জানুয়ারি তিনি শুধু স্কুলে হাজিরই হননি, লম্বা ছুটির দরখাস্তও জমা দেন। সে ছুটি মঞ্জুরও হয়। টানা সাড়ে চার মাস, ৩১ মে পর্যন্ত সবেতন ছুটিও পান জয়দেব।
এত দিন লালগড়ের স্কুলটির পরিচালন সমিতির ক্ষমতায় ছিল সিপিএম। সম্প্রতি অভিভাবক প্রতিনিধি নির্বাচনে সব ক’টি আসনে জিতে ক্ষমতা দখল করেছেন তৃণমূল-সমর্থিতেরা। তার পরেই স্কুলের নথি থেকে জয়দেববাবুর হাজিরা-সংক্রান্ত তথ্য বার করেছেন তাঁরা। ‘গণহত্যা’য় অভিযুক্তকে এ ভাবে সবেতন ছুটি পাইয়ে দেওয়ার জন্য সিপিএম-নিয়ন্ত্রিত পূর্বতন পরিচালন সমিতির দিকেই মূলত অভিযোগের আঙুল উঠেছে। স্থানীয় তৃণমূল নেতা দিলীপ মাহাতোর অভিযোগ, “খুনে অভিযুক্তকে হাজিরা খাতায় সই করিয়েছিল সিপিএম প্রভাবিত আগের পরিচালন সমিতিই। পলাতককে হাতের নাগালে পেয়েও পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়নি। পুলিশও তাঁকে গ্রেফতারের চেষ্টা করেনি।” স্কুলের প্রধান শিক্ষক শঙ্করচন্দ্র পালের বক্তব্য, “জয়দেববাবু ১৩ জানুয়ারি স্কুলে এসেছিলেন। কিন্তু সে সময়ে পরিচালন সমিতির সিদ্ধান্তক্রমেই যা হওয়ার হয়েছে। প্রতি মাসে জয়দেববাবুর বেতন নির্দিষ্ট ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা করে দেওয়া হত। ৩১ মে-র পর অবশ্য আর বকেয়া ছুটি ছিল না জয়দেববাবুর। তার পরে তাঁর বেতন বন্ধ হয়েছে।” পূর্বতন পরিচালন সমিতির সদস্য সিপিএম নেতারা এলাকাছাড়া। ফোনেও তাঁদের কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
হাইকোর্টের নির্দেশে গত ২২ ফেব্রুয়ারি নেতাই-মামলার তদন্ত সিআইডি-র হাত থেকে সিবিআইয়ের হাতে আসে। মাত্র ৪২ দিনের মধ্যেই, গত ৪ এপ্রিল প্রথম দফার চার্জশিটও জমা দেয় সিবিআই। সেই চার্জশিটে ২০ জন সিপিএম নেতা-কর্মীকে অভিযুক্ত করেছে সিবিআই। তাঁদের মধ্যে ১২ জন আপাতত জেলবন্দি। ‘ফেরার’ বাকি ৮ সিপিএম নেতা-নেত্রী। জয়দেববাবু রয়েছেন সেই ফেরার-তালিকাতেই। জয়দেববাবু-সহ ‘ফেরার’দের সম্পত্তি বাজেয়াপ্তে নির্দিষ্ট পদক্ষেপও করেছে সিবিআই। |