সম্পাদকীয়...
পুরুষকার
কুরুক্ষেত্রের মহারণের পূর্বে পাণ্ডবদের প্রাণভিক্ষার আবেদন লইয়া কুন্তীর আগমনের আগে পর্যন্ত কর্ণ নিজেকে পৃথার প্রথম সন্তান বলিয়া জানিতে না, সারথি অধিরথের পুত্র বলিয়াই জানিতেন। সেই পরিচয় লুকাইয়া পরশুরামের কাছে রণবিদ্যা আয়ত্ত করিতে গিয়া তিনি অভিশপ্ত হন, কার্যকালে যাবতীয় শস্ত্রবিদ্যা বিস্মৃত হওয়ার। একই ভাবে অজান্তে এক গাভীকে ধনুর্বাণে হত্যা করার দায়ে এক ব্রাহ্মণ তাঁহাকে অভিশাপ দেন, সবচেয়ে অসহায় অবস্থায় তিনি নিহত হইবেন। আর ধরিত্রীদেবীর অভিশাপ ছিল আপৎকালে তাঁহার রথের চাকা গ্রাস করিয়া লওয়ার। অভিশপ্ত, ভাগ্যবিড়ম্বিত কর্ণ তবু ভাগ্যের কাছে নত হন নাই, নিজ পুরুষকারের জোরে মহাভারতের সবচেয়ে বর্ণময় ক্ষত্রিয় হইয়া উঠিয়াছিলেন। ক্রিকেটার মনসুর আলি খান পটৌডির সহিত যদি কোনও পৌরাণিক চরিত্রের তুলনা করিতে হয়, তবে তিনি ওই প্রথম পার্থ, কর্ণ। দুর্ঘটনায় এক চক্ষে দৃষ্টিশক্তি হারাইয়াও তিনি দমিয়া যান নাই, বরং অমিততেজা কর্ণের মতোই পরিশ্রম, অধ্যবসায় ও নিষ্ঠায় ‘ভাগ্যের মার’ উত্তীর্ণ হইয়া আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সর্বোচ্চ স্তরে কিংবদন্তির মর্যাদা অর্জন করিয়াছেন।
বঙ্গবাসীর পক্ষে এমন একটি চরিত্রের সঠিক তাৎপর্য উপলব্ধি করা কঠিন। কেননা আমরা ভাগ্যের হাতে মার খাইলে কেবল ঘ্যানঘ্যান করিতে শিখিয়াছি, বড় জোর মন্দিরে গিয়া জাগ্রত দেবতার পূজা করিতে। গা-ঝাড়া দিয়া উঠিয়া দাঁড়াইতে, প্রতিকূলতা অতিক্রম করিয়া কৃতী হইতে পারতপক্ষে চেষ্টিত হই না। ভারতীয় দল কিংবা কে-কে-আর হইতে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের বাদ পড়া লইয়া বাঙালির ঘ্যানঘ্যানানি এখনও পুরোপুরি থামে নাই। মনসুর আলি খান এক চোখের দৃষ্টি লইয়া বাঘা-বাঘা জোরে বোলারদের তুখোড় মোকাবিলার রোমাঞ্চ লইয়াও কখনও সতীর্থদের কাছে প্রগল্ভতা দেখান নাই, কোনও বাড়তি বাহবা কিংবা কৃতিত্বও দাবি করেন নাই। তুঙ্গ আত্মমর্যাদায় স্থিত থাকিয়া সেই প্রসঙ্গের অবতারণা হইতেই বিরত থাকিয়াছেন। এ জন্য যে সংযম, সাবালকত্ব ও মর্যাদাবোধের প্রয়োজন হয়, পটৌডির তাহা পূর্ণমাত্রায় ছিল। দৃষ্টি হারাইবার পর তাই তিনি অবলীলায় এক চক্ষু লইয়াই ব্যাটিংয়ে মনোনিবেশ করেন। তাঁহার এই চরিত্রগুণ প্রায় মহাকাব্যিক।
এ জন্যই কর্ণের কথা মনে পড়িতেছে। বাঙালি যত না কাজ করে, বাহ্বাস্ফোট করে তাহার অনেক বেশি। ব্যর্থতার জন্য প্রায় সর্বদাই হয় ভাগ্যকে দোষারোপ করে, নতুবা কেন্দ্রের বিমাতৃসুলভ আচরণকে। নিজের অক্ষমতা ও সীমাবদ্ধতাকে ভাগ্য কিংবা বাহিরের কোনও শক্তি বা স্বার্থের ষড়যন্ত্রের ফল রূপে শনাক্ত করিয়া মড়াকান্না কাঁদিয়া মরে। সেই অক্ষমতা অতিক্রম করার চেষ্টা করে না এবং না-করার অজুহাত হিসাবে অখণ্ডনীয় ভাগ্য বা অলঙ্ঘনীয় নিয়তির বিরুদ্ধাচরণের অনৌচিত্যও প্রচার করে। কর্ণ কিংবা অয়াদিপাউস নিয়তি বা দৈবরোষে পরাস্ত হইয়াছিলেন। কিন্তু তাঁহাদের সংগ্রামী অকুতোভয়তা এবং পুরুষকারের জোরে ভাগ্যকে মোকাবিলা করার প্রয়াস মানবিক মহত্ত্বে মণ্ডিত। বাঙালি সেই মহত্ত্বের পরিমণ্ডল হইতে আলোকবর্ষ দূরেই। মনসুর আলি খান বাংলার জামাতা। জামাতা হইতে চরিত্রদীক্ষায় দোষ নাই।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.