অবরোধ, বিক্ষোভের পর এ বার লাগাতার রেল রোকো। পৃথক তেলেঙ্গানা রাজ্যের দাবিতে অন্ধ্র প্রদেশ জেরবার। এই অবস্থায় পুজোর সময় বিশাখাপত্তনম-আরাকু বা অন্ধ্রের কোথাও যাঁরা বেড়াতে যাবেন বলে ঠিক করেছেন, তাঁরা পড়েছেন গভীর সমস্যায়। চিন্তার ভাঁজ অন্ধ্রের হোটেল ব্যবসায়ীদের কপালেও। আশঙ্কা, গোলমালের জেরে জলে যাবে ছুটির মরসুমের ব্যবসা।
অন্ধ্রের পরিস্থিতি এখন কেমন?
তেলেঙ্গানা জেএসি-র বিক্ষোভ আজ ১৩ দিনে পড়ল। সাধারণ অবরোধের জেরে গত দু’সপ্তাহ ধরে সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত রাজ্যের পরিবহণ। তার উপরে সাধারণ ধর্মঘটের কর্মসূচী হিসেবেই ৩৬ ঘণ্টার ‘রেল রোকো’-র ডাক দেওয়া হয়েছে। জেলার বাস চলাচল একদমই স্তব্ধ। শুক্রবার রাত থেকে শুরু হয়েছে ৪৮ ঘণ্টার অটো ধর্মঘট। শহর এ ভাবে অবরুদ্ধ হওয়ায় সাধারণ মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। স্কুল-কলেজ বন্ধ। এমনকী সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরাও যোগ দিচ্ছেন বিক্ষোভে। সিঙ্গারেনি কোলিয়ারির কর্মীরা আন্দোলনে যোগ দেওয়ায় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিতে কয়লার জোগানে ভাটা পড়েছে। ফলে বিদ্যুৎ সরবরাহও অনিয়মিত। |
বিজেপি-টিআরএস সমর্থকদের রেল অবরোধ। ছবি: পিটিআই |
‘রেল রোকো’ আন্দোলনের জেরে অবস্থার আরও অবনতি ঘটেছে। আজ দিনভর টিআরএস এবং বিজেপি-র সমর্থকরা বিভিন্ন রেলওয়ে স্টেশন ও হায়দরাবাদের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ দেখান। রেল লাইন আটকেও চলে অবরোধ। সারা দিন ভোগান্তিতে রেলযাত্রীরা। দক্ষিণ মধ্য রেলওয়ের ৫৫টি ট্রেন আজ বাতিল হয়েছে। শনিবার সকালে ৫৯টি ট্রেনের সময়সীমা পাল্টানো হয়েছে। হায়দরাবাদ শহরে ২২২টি লোকাল ট্রেন বাতিল করা হয়। রেল সরবরাহ বিপর্যস্ত হয় সেকেন্দরাবাদ, বিজয়ওয়াড়া, নিজামাবাদ, বিবিনগর অঞ্চলে। প্রায় জনশূন্য ছিল সেকেন্দরাবাদ, কাজিগুড়া, নামপল্লির মতো বহু স্টেশন।
এ রকম চলতে থাকলে চলতি মরসুমে রাজ্যের পর্যটন শিল্প ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা হোটেল ব্যবসায়ীদের। আজ চেন্নাইয়ে দক্ষিণ ভারতের হোটেল ও রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীদের বার্ষিক সম্মেলনের শেষে অন্ধ্র প্রদেশ হোটেল অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট জি ভি কৃষ্ণাইয়া জানালেন, ইতিমধ্যেই ব্যবসায় মন্দা দেখা দিয়েছে। প্রায় ৪০ শতাংশ ব্যবসা কমেছে। অন্ধ্রের মুখ্যমন্ত্রী কিরণ কুমার রেড্ডি আজ সরকারি কর্মচারীদের ধর্মঘট তুলে নিতে অনুরোধ করেছেন। তাঁর বক্তব্য, এই ধর্মঘটের ফলে কারও কোনও লাভ হচ্ছে না। আর্থিক ক্ষতি, মানুষের ভোগান্তির কথা ভেবেই তিনি আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিতে অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, “তেলেঙ্গানা নিয়ে কেন্দ্র সিদ্ধান্ত নেবে। কেন্দ্রের সিদ্ধান্তই আমরা পালন করবে।”
তবে পরিস্থিতির উন্নতি কবে হবে, তা জানেন না কেউই। তাই পুজোয় অন্ধ্র বেড়ানোর আনন্দ মাটি হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা নিয়েই দিন কাটাচ্ছেন ভ্রমণ-উৎসাহীরা। |