বাগদার সঙ্গে টক্কর দিতে ‘ভ্যানামেই’ বাংলাতেও
বাগদা চিংড়ি বনাম ‘ভ্যানামেই’!
অন্ধ্রপ্রদেশে প্রথম রাউন্ডে হেরেছে বাগদা। লড়াই শুরু হয়েছে তামিলনাড়ু এবং ওড়িশাতে। এ বার দুই প্রজাতি মুখোমুখি হতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গে।
কে এই ‘ভ্যানামেই’?
চিংড়ির এক বিশেষ প্রজাতি এই ‘ভ্যানামেই’। এর আদি বাড়ি উত্তর আমেরিকায়। মৎস্য বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, এই প্রজাতির চিংড়ি বাগদার চেয়ে অনেক শক্তপোক্ত। মড়ক বা সাধারণ রোগ সহজে কাবু করতে পারে না এদের। তুলনামূলক কম নোনা জলেও দিব্যি বেঁচেবর্তে থাকে।
‘মা ষষ্ঠী’-র কৃপায় সংখ্যায় বাড়ে বেশ তাড়াতাড়ি, আবার চাষের খরচও যথেষ্ট কম। ভোজনরসিকদের অনেকেরই বক্তব্য, স্বাদেও বাগদাকে রীতিমতো টেক্কা দিতে পারে ‘ভ্যানামেই’।
অন্ধ্রপ্রদেশ তো এর মধ্যেই মজেছে ‘ভ্যানামেই’-এ। ওই রাজ্যের চিংড়ি উৎপাদকেরা এখন ‘ভ্যানামেই’ বলতে অজ্ঞান! তামিলনাড়ু এবং ওড়িশাও রীতিমতো কোমর বেঁধে নেমেছে ‘ভ্যানামেই’ চাষে। এ বার পশ্চিমবঙ্গও ওই চিংড়ি চাষের অনুমতি চেয়ে কেন্দ্রের দ্বারস্থ হয়েছে।
এ রাজ্যে দুই ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুর জেলার অসংখ্য ভেড়িতে বিপুল পরিমাণে বাগদা চিংড়ির চাষ হয়। মৎস্য বিশেষজ্ঞরা পরীক্ষা করে দেখেছেন, ‘ভ্যানামেই’ চিংড়ি, ছোট ভেড়িতেও বাগদার তুলনায় কয়েক গুণ বেশি উৎপাদন করা যায়। পাশাপাশি বাগদার তুলনায় ‘ভ্যানামেই’-এর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশি বলে চট করে এরা মরেও যায় না। পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ‘ভ্যানামেই’ তুলনামূলক ভাবে অনেক কম নোনা জলেও দ্রুত বেড়ে উঠতে পারে।
এই সেই প্রতিযোগী।
রাজ্যের মৎস্য উন্নয়ন নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর নারায়ণচন্দ্র মজুমদার জানান, ‘ভ্যানামেই’ চিংড়ি চাষ করলে রাজ্যের চিংড়ি উৎপাদন অনেকটাই বাড়ানো যাবে। এই কারণেই কেন্দ্রীয় সরকারের উপকূলীয় মৎস্যচাষ পর্ষদের কাছে ওই চিংড়ি চাষের অনুমোদন চেয়ে আবেদন জানানো হয়েছে। কেন্দ্রের সম্মতি মিললেই রাজ্যের সর্বত্র ‘ভ্যানামেই’ চাষের জন্য উদ্যোগী হবে নিগম।
মূলত স্বাদের গুনেই খাদ্য রসিকদের কাছে বাগদা চিংড়ির কদর অন্য চিংড়ি মাছের চেয়ে বেশি। তবে যাঁরা ‘ভ্যানামেই’ খেয়েছেন, তাঁদের বক্তব্য, স্বাদের বিচারে ‘ভ্যানামেই’ সামান্য হলেও এগিয়ে। বাগদার চেয়ে ‘ভ্যানামেই’ একটু বেশি মিষ্টি এবং নরম।
সব কারণ মিলিয়ে ‘ভ্যানামেই’ চাষ শুরু হলে মৎস্য উৎপাদকেরা লাভবান হবেন বলেই মনে করছেন রফতানিকারীরাও। রাজ্যের সামুদ্রিক খাদ্যপণ্য রফতানিকারী সংস্থাগুলির সংগঠনের সহ-সভাপতি রাজর্ষি বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, পশ্চিমবঙ্গে ‘ভ্যানামেই’ চাষ শুরু হলে চিংড়ি উৎপাদন ব্যাপক ভাবে বাড়ানো সম্ভব হবে। রফতানিও বাড়বে। এতে চিংড়ি উৎপাদক জেলাগুলির অর্থনীতিতেও পরিবর্তন আসবে বলে তিনি মনে করেন।
চিন, ইন্দোনেশিয়া, তাইল্যান্ডের মতো দেশে বেশ কয়েক বছর আগেই ‘ভ্যানামেই’ চিংড়ির চাষ শুরু হয়েছে। ওই সব দেশের উৎপাদিত ‘ভ্যানামেই’ ছড়িয়ে পড়ছে আমেরিকা, জাপানের মতো বড় বাজারগুলিতে।
বাগদার দাম অনেকটা বেশি বলে বিদেশের সংস্থাগুলিও কম দামের ‘ভ্যানামেই’ পছন্দ করছে।
বিদেশে রমরমিয়ে ব্যবসা করলেও এ দেশে অবশ্য অনেক দিন পা রাখতেই পারেনি ‘ভ্যানামেই’। কারণ, কোনও বিদেশি প্রজাতির মাছ দেশে এনে চাষ করার আগে অনেক রকম সাবধানতা অবলম্বন করে থাকেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা জানিয়েছেন, বিদেশি কোনও মাছ চাষ করলে অনেক সময় নানা রকমের রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থেকে যায়। সব দিক খতিয়ে দেখে কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রক প্রথমে সরকারি উদ্যোগে পরীক্ষামূলক ভাবে ‘ভ্যানামেই’ চাষের অনুমতি দেয়। মৎস্য বিশেষজ্ঞদের ছাড়পত্র পাওয়ার পরে ২০০৮ সালে অন্ধ্রপ্রদেশকে প্রথম ‘ভ্যানামেই’-এর ‘চারা’ আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়। আর তাতেই দেখা যাচ্ছে, অল্প সময়ের মধ্যেই অন্ধ্রে ‘ভ্যানামেই’ চিংড়ির উৎপাদন বাগদাকে ছাড়িয়ে গিয়েছে। ওই রাজ্যে গত বছর বাগদা উৎপাদন হয়েছিল ৬০ হাজার টন। সেখানে ‘ভ্যানামেই’ ৮০ হাজার টন।
চিংড়ি উৎপাদকেরা জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গে এখন শুধু বাগদা চিংড়ি উৎপাদন হয় মাত্র ১৭ হাজার টনের মতো। ‘ভ্যানামেই’ চাষ শুরু হলে এক বছরের মধ্যে রাজ্যের চিংড়ির উৎপাদনের বহর অন্তত চার গুণ বাড়ানো সম্ভব বলে মনে করা হচ্ছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.