|
|
|
|
অসুরের বিরুদ্ধে
হাংগার স্ট্রাইক!
আশ্বিনের শারদ প্রাতে, বাঙালির ফোকাস প্লেট ধরা হাতে। পুরুত
ঠাকুর ও পেট ঠাকুরের অঞ্জলি একসাথে।
রাত দুটোর ঠান্ডা বিরিয়ানি
নিয়েই আপনার পুজো সরগরম হোক। অঞ্জন চট্টোপাধ্যায় |
|
|
আশ্বিন মাসে বাঙালির খিদে বেড়ে যায়। এই খিদে ব্যাপারটা অবশ্য নানা লেভেল-এ খেলা করে। ছেলে থেকে বুড়ো’র ঠাকুর দেখার খিদে, মেয়েদের নতুন শাড়ি-সালোয়ার-কুর্তির খিদে, পুজোকর্তাদের প্রাইজ পাওয়ার খিদে, পাড়ার দাদাদের চাঁদার খিদে.... কিন্তু, সবার চাইতে ভালো রাতবিরেতে ফাঁকা পেটে গাঁক-গাঁক করে রোল-চাউমিনের সর্বজনীন খিদে। কে
বলবে, ভর সন্ধেবেলা আরও একটু টকজলের জন্য এই পেটই ফুচকাওয়ালার সঙ্গে তুলকালাম করেছে! আর কে না জানে, ফাউ প্রত্যাশী বাঙালির এক্সপেক্টেশন বিশ্বকর্মার পেটকাটি-চাঁদিয়ালের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে উড়তে উড়তেই, বঙ্গজীবনে পুজো এসে যায়।
এসে যায় আমাদের নিজের হাতে তৈরি পেটপুজো শব্দটিও। অষ্টমীর ভোগ বলুন বা দশমীর নাড়ু,বাঙালির পুজো কুইজিন ট্যুর-এর পুরোটাই অনুষ্ঠিত হয় বাড়ির বাইরে। নমো, নমো করে ব্রেকফাস্ট সেরে, তা-ও মহাষ্টমীতে অঞ্জলি-স্পেশাল স্কিপ, ফুড ট্রায়ালে বেরিয়ে বাবু-বিবির জিভের সঙ্গে লড়ে নিতে মা-কালীও জিভ কাটবেন! এক মাত্র তুলনা অসুরের বিশাল হাঁ-এর, যেন ঢুকে পড়বে আস্ত এক রেস্তোরা। ট্যাংরা থেকে আমিনিয়াশারদ উৎসবের সর্বস্বাদসমন্বয়, জাস্ট যুগ যুগ জিও!
এক বন্ধুকে জানতাম, রাত জেগে খাবে বলে পুজোর ক’দিন, দিনের বেলা উপোস করত, জিগ্যেস করলে জবাব মিলত, অসুরের এগেনস্ট-এ হাংগার স্ট্রাইক করছি!
রাতদুপুরে বাবুবাগান কী বাগবাজারে, তাকেই দেখা যেত ভরপুর কাবাব-পরোটা |
|
সাবাড় করতে। এমন দ্বিচারিতা পেটপুজোতেই সম্ভব!
আর সম্ভব এক অতিদীর্ঘ ধৈর্যের পরীক্ষায় লম্বা লাইনে দাঁড়ানো রসনা-রসিক বাঙালির অন্তহীন অপেক্ষা। কম থেকে দামিসব ফুড জয়েন্টেই এক সিন, পুজোর রাতদিন। আর পুজো প্যান্ডেলের সঙ্গে পেটপুজোর ডেস্টিনেশন মিলে গেলে তো কথাই নেই, নবমীর দিন লাইন দিলে বিসর্জনের পরে রিজার্ভেশন পাওয়া যাবে। সাধে কী, মুম্বইতে বসেও ফোন পাই কলকাতার রেঁস্তোরার বুকিং রিকোয়েস্ট-এর!
তবে যাই বলুন, এই পাগলামির কোনও ওষুধ নেই। পুজো-পাগল বং ও বাঙালির আহার-বিহার ঠেকায় কার সাধ্য! পাক্কা সাহেব মতে, সন্ধে সাতটায় ডিনার সেরে নেওয়া মিস্টার স্যানিয়ালও তো এই উৎসবের হুজুগে রাত দু’টোর ঠান্ডা বিরিয়ানিকেই অমৃত বলে মনে করেন।
অতএব, পুজোর ক’টা দিন বাড়িতে নো-মিল করে বেরিয়ে পড়ুন সুখাদ্য সন্ধানে। উত্তর থেকে দক্ষিণ, ভুলে যান প্রদক্ষিণ, কলকাতার অলি-গলি-পাকস্থলী ভেদ করে খুঁজে বেড়ান পেট যা চায়।
কথায় আছে, পেটে খেলে পিঠে সয়। বছরের বাকি দিনগুলোয় তো দেওয়ালে পিঠ ঠেকেই গেছে!
|
অলংকরণ: দেবাশীষ দেব |
|
|
|
|
|