জেলার হাসপাতালের পরিকাঠামো নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের বিরুদ্ধে মাঝেমধ্যেই ওঠে নানা অভিযোগ। পরিকাঠামোগত অপ্রতুলতাও যে কিছু চিকিৎসকের নিরলস শ্রম ও সেবা-মানসিকতায় ঢাকা পড়ে যেতে পারে, বিরল অস্ত্রোপচারে নজির তৈরি হতে পারেতা-ও কিন্তু দেখাল জেলারই এক হাসপাতাল। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শুক্রবার ছিল তেমনই এক উজ্জ্বল দিন।
খড়্গপুর শহরের মালঞ্চের বছর তেইশের মেয়েটির (ফিরোজা পরভিন, নাম পরিতবর্তিত) রোগ ধরা পড়েছিল বছর সাতেক আগেই। সেই ২০০৪ সালেই। দিল্লির এক হাসপাতালের পরীক্ষায় জানা যায়, মেয়েটি ‘মুলেরিয়ান অ্যাজেনিসিস’-এ আক্রান্ত। এ রোগে আক্রান্ত মেয়েদের জীবনে স্বাভাবিক ঋতুচক্র আসে না। জরায়ুর সঙ্গে যোনিমুখের যোগও থাকে না। এমনকী জরায়ুও না থাকতে পারে। ডিম্বাশয়ও সক্রিয় হয় না। ফলে রোগীর সন্তান-ধারণ ক্ষমতাও তাকে না। সহবাসেও অপারগ। একমাত্র অস্ত্রোপচারেই সহবাসে সক্ষমতা তৈরি হতে পারে। এ-কথা জানার পরে দিল্লি-কলকাতা অনেক ঘুরেছেন পরিজনেরা। অনেক অর্থও খরচ হয়েছে। কিন্তু কোথাওই চিকিৎসকেরা অস্ত্রোপচারের ঝুঁকি নেননি বলে অভিযোগ।
শুক্রবার সেই ‘ঝুঁকি’টাই নিলেন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক দীপক গিরি ও তাঁর সহযোগীরা। সফল অস্ত্রোপচারের পরে দীপকবাবুর দাবি, “মেয়েটি সন্তান-ধারণে সক্ষম হবেন না। তবে স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে পারবেন। স্বামীর সঙ্গে সহবাসেও সক্ষম হবেন।”
নানা জায়গা থেকে হতাশ হয়ে ফিরেই গত ১০ অগস্ট মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আউটডোরে মেয়েটিকে দেখাতে নিয়ে এসেছিলেন আত্মীয়রা। হাসপাতালের এক জুনিয়র ডাক্তার শুভেন্দু বাগ বলেন, “মেয়েটিকে নিয়ে বাড়ির সবাই-ই খুব উদ্বিগ্ন ছিলেন। অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নিই আমরা। আমাদের চেষ্টা সফল হওয়ায় ভীষণ ভাল লাগছে।” আর দীপকবাবু বলছেন, “ইচ্ছে থাকলে পরিকাঠামোর সমস্যা খুব একটা বাধা হয় না।”
কী ভাবে অস্ত্রোপচার হল? চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, এই অস্ত্রোপচারের পারিভাষিক নাম ‘ভ্যাজাইনো প্লাস্টি’। একটি ‘ক্যানাল’ তৈরি করা হয়। যে ‘ক্যানাল’ যোনিমুখ থেকে জরায়ু পর্যন্ত যাবে। কন্ডোমের ভিতর স্প্লিন্ট ঢুকিয়ে ওই ‘ক্যানাল’ তৈরি করা হয়। স্প্লিন্ট ভর্তি কন্ডোম অবশ্য কয়েক দিন পরেই বের করে নেওয়া হবে। ‘ক্যানাল’ যাতে জোড়া না হয় সে জন্য প্ল্যাসেন্টা মেমব্রেন (অ্যামনিয়ন) লাগিয়ে দেওয়া হয়। কারণ, ওই মেমব্রেন জোড়া লাগে না। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, এর ফলে মেয়েটির সন্তান-ধারণে সক্ষমতা না এলেও সহবাসে কোনও সমস্যা থাকবে না। আর মেয়েটির অসুখ জেনেও তাঁকে যিনি বিয়ে করতে চেয়েছেন, সেই পাত্রের বক্তব্য, “ও সন্তান-ধারণ করতে পারবে না, তো কী হয়েছে। সন্তান দত্তক নেব আমরা। কিন্তু আমি খুশি ও স্বাভাবিক জীবন নিয়েই বাঁচবে।”
হবু বরের এমন মানসিকতাও বড় একটা দেখা যায় না। সব মিলিয়েই শুক্রবার বিরল-যোগ মেদিনীপুরে। |