এত দিন যা ছিল খাতায়-কলমে, এ বার তার প্রয়োগে তৎপর রাজ্য।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘জল ধরো জল ভরো’ স্লোগান কাজে করে দেখানোর সূচনা হচ্ছে কলকাতা শহরের পাঁচটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেগুলিতে গড়ে তোলা হবে বৃষ্টির জল ধরে রাখার পরিকাঠামো। স্বাস্থ্য দফতর রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর নিজের হাতেই। তাঁরই নির্দেশে জলসম্পদ দফতর এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করবে। এ ভাবে সঞ্চিত জল ব্যবহার হবে হাসপাতাল পরিষ্কার রাখা, ওয়ার্ডের মেঝে সাফাই, রোগীদের জামা-কাপড়-বিছানা কাচা এবং শৌচাগারে। কাজ দ্রুত শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছেন মমতা। শুক্রবার মহাকরণে চারটি দফতরের মন্ত্রী ও সচিব পর্যায়ের অফিসারদের সঙ্গে বৈঠকে জলসম্পদ উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী সৌমেন্দ্রনাথ মহাপাত্রকে এই পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে তা রাজ্যের উন্নয়ন পরিকল্পনা দফতরে জমা দিতে নির্দেশ দেন তিনি। ঠিক হয়েছে, আপাতত এসএসকেএম, মেডিক্যাল, এনআরএস, আর জি কর এবং ন্যাশনাল মেডিক্যালে কাজ শুরু হবে।
কী ভাবে ধরে রাখা হবে বৃষ্টির জল? জলসম্পদ উন্নয়ন দফতরের ইঞ্জিনিয়ার-ইন-চিফ বিশ্বনাথ মজুমদার জানালেন, হাসপাতালে প্রত্যেক তলায় লিনটেল বরাবর একটা করে জলাধার তৈরি হবে। ছাদ থেকে পাইপবাহিত বৃষ্টির জল তাতে জমা হবে। ওই জলাধার ভরে গেলে জল যাবে নীচের তলার জলাধারে। সেখান থেকে জল নিয়ে সংশ্লিষ্ট তলার ওয়ার্ড সাফাই বা শৌচাগারের কাজে লাগানো হবে। কাচা হবে রোগীর পোশাক এবং বিছানার চাদর।
বিশ্বনাথবাবু বলেন, “স্টেট ওয়াটার ইনভেস্টিগেশন ডিরেক্টরেটকে (সুইড) নির্দেশ দিয়েছি প্রকল্প চূড়ান্ত করতে। সুইড এবং পূর্ত দফতর যৌথ ভাবে কাজটা করবে।” তবে, হাসপাতালের প্রাচীন ভবনগুলির জলাধার তৈরির আগে লিনটেল ও দেওয়ালের শক্তি বাড়াতে হবে। মেডিক্যালে ছাদেরও গঠন কিছুটা বদলাতে হবে। বিশ্বনাথবাবু বলেন, “এই কাজে দেরি করা হবে না। পুজোর আগেই স্বাস্থ্য দফতর ও সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকে প্রকল্প চূড়ান্ত করা হবে।”
তবে মশার আঁতুড়ঘর হওয়া এড়াতে জলাধারগুলিতে বেশিদিন জল জমিয়ে রাখা হবে না। বিশ্বনাথবাবু বলেন, “বর্ষাকালে বৃষ্টির যেটুকু জল জমবে, তাতে বর্ষার ক’টা মাস দিব্যি কাজ চলে যাবে। সেই সময়টায় মাটির তলা থেকে জল তুলতে পাম্প চালাতে হবে না। ফলে বিদ্যুতের সাশ্রয় হবে। আর অন্তত চার মাস ভূগর্ভের জল না তুললে প্রকৃতি ও পরিবেশ খানিকটা স্বস্তিও পাবে।”
কিন্তু এ ভাবে কতটা বৃষ্টির জল সঞ্চয় করা যাবে? কলকাতায় বছরে মোট ১৭৬০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। তার মধ্যে বর্ষার বৃষ্টি ১৩০০ মিলিমিটার। এই তথ্য জানিয়ে নদী ও ভূ-জল বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্র বলেন, “১০ বর্গমিটার ছাদ থেকে ১০০ ঘনমিটার অর্থাৎ ১ লক্ষ লিটার জল পাওয়া যায়।” |