অর্ডিন্যান্স জারি করে রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিল ভেঙে দিচ্ছে রাজ্য সরকার। পুরনো কমিটির সদস্যদের সরিয়ে দিয়ে অল্প কিছু দিনের মধ্যেই নতুন কমিটি তৈরি হবে বলে সরকারি সূত্রে জানানো হয়েছে।
২০১০ সালের ১১ এপ্রিল মেডিক্যাল কাউন্সিলের বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে। তার পরেও কোনও মতে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে কাজ চলছিল। কিন্তু গত চার মাস ধরে এ রাজ্যে মেডিক্যাল কাউন্সিলের কার্যত কোনও অস্তিত্বই ছিল না। সরকার বদলের পরে মেডিক্যাল কাউন্সিলের সভাপতি এবং সহ-সভাপতি পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন যথাক্রমে অশোক চৌধুরী এবং সুবীর দত্ত। একই সঙ্গে কাউন্সিলের আর এক সদস্য পূর্ণেন্দু ঝা-ও পদত্যাগ করেন। এঁরা তিন জনই আগের সরকারের মনোনীত প্রতিনিধি ছিলেন। অল্প সময়ের ব্যবধানে সরে দাঁড়ান কাউন্সিলের আরেক সদস্য প্রবীর শূরও। ফলে কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যায়, এক রকম ‘অকেজো’ হয়ে পড়ে রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিল। চিকিৎসায় গাফিলতির বিষয়ে কোনও তদন্ত হয়নি, কোনও বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। চিকিৎসকদের রেজিস্ট্রেশনও হয়নি। এমনকী কাউন্সিলের কর্মীদের বেতনও অনিয়মিত হয়ে পড়েছে। নতুন পদাধিকারী স্থির করার জন্য নির্বাচন কবে হবে, স্থির হয়নি তা-ও। এই পরিস্থিতিতে নির্বাচনের জন্য উদ্যোগী না হয়ে অর্ডিন্যান্স জারি করে কাউন্সিল ভেঙে দেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্তে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
এক পক্ষ বলছেন, দিনের পর দিন নিষ্ক্রিয় হয়ে থাকা কাউন্সিলকে চাঙ্গা করতে এটাই সঠিক রাস্তা। অন্য পক্ষের বক্তব্য, আগের সরকারের আমলে যেমন এই ধরনের কমিটিতে ‘নিজেদের লোক’ বসানোর প্রবণতা ছিল, এ ক্ষেত্রেও অনেকটা তেমনই হতে পারে। নির্বাচনের ব্যাপারে উদ্যোগী না হয়ে অর্ডিন্যান্স জারি করে পুরনো কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি গড়লে সেখানেও ‘নিজের লোক’ বসানোর প্রবণতাই থাকবে। স্বাস্থ্যকর্তারা অবশ্য বিষয়টি মানতে চাননি। স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, “বর্তমান পরিস্থিতিতে কাউন্সিলকে সক্রিয় করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হচ্ছে। তা ছাড়া, আপাতত নতুন কমিটি গঠিত হলেও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্বাচন করে নতুন কমিটি তৈরি হবে। তাই স্বজনপোষণের অবকাশই নেই।”
নিয়ম অনুযায়ী, কাউন্সিলে তিন জন সদস্যের নাম প্রস্তাব করে রাজ্য সরকার। সদস্যরা সরকারের প্রস্তাব করা তিনটি নাম থেকে কোনও এক জনকে সভাপতি হিসেবে মনোনীত করেন। এর পর স্থির হয় সহ-সভাপতি পদাধিকারী। এ ছাড়াও স্বাস্থ্য দফতর এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পদাধিকার সূত্রে সদস্য হিসেবে মনোনীত হওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পরে সরকারি তরফে কাউন্সিলে তিনটি নাম পাঠানো হয়। এঁরা হলেন, শিলিগুড়ির বিধায়ক-চিকিৎসক রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য, নির্মল মাজি এবং চিকিৎসক অলোকেন্দু চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু তার পর আচমকা মনোনয়নের প্রক্রিয়া থামিয়ে নেওয়া হয় অডির্ন্যান্স জারির সিদ্ধান্ত।
বর্তমান কমিটির মেয়াদ দেড় বছর আগে শেষ হলেও কেন নিবার্চনের ব্যবস্থা করা গেল না? কাউন্সিল সূত্রের খবর, নির্বাচনের জন্য যে টাকা খরচ হয়, তা অনুদান বাবদ দেয় রাজ্য সরকার। কিন্তু সেই টাকা পাওয়া যাচ্ছে না। কাউন্সিলের এক সদস্য অভিযোগ করেন, “এ বারে নির্বাচন বাবদ আনুমানিক ২৪ লক্ষ টাকার বাজেট পেশ করা হয়েছিল। কিন্তু আগের সরকার তা না দিয়ে কয়েক বারে তিন-চার লক্ষ টাকা ঠেকিয়েছিল। নতুন সরকারও ঠিক তা-ই করছে। ফলে টাকার অভাবেই নির্বাচন আটকে রয়েছে।”
রেজিস্ট্রার দিলীপ কুমার ঘোষ অবশ্য জানিয়েছেন, প্রতি বার বেশ কয়েক হাজার চিকিৎসকের কাছে নির্বাচনের খবর পৌঁছয়ই না। তাঁদের কাছে পাঠানো ব্যালট বহু সময়েই মাঝ পথে হারিয়ে যায়। এই প্রক্রিয়া যথাযথ করতে পুরনো নিয়ম সংশোধন করে নতুন সরকারের আমলে কাউন্সিলে নথিভুক্ত প্রায় ৪৮ হাজার চিকিৎসকের কাছে রেজিস্ট্রি ডাকে ব্যালট পেপার পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাঁর কথায়, “নির্বাচন যখনই হোক, সেটা যথেষ্ট গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই হবে।” |