মন্ত্রীর পরামর্শে কড়া সিদ্ধান্ত পুরসভার |
আপাতত চার তলার বেশি বাড়ি তৈরির অনুমতি নয় শিলিগুড়িতে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি |
ভূমিকম্পের পরে শহরের শতাধিক বহুতলের ফাটল ধরার পরিপ্রেক্ষিতে আগামী দিনে বাড়ির নকশা অনুমোদনের ক্ষেত্রে পুরসভাকে আরও কঠোর মনোভাব নেওয়ার নির্দেশ দিলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। শুক্রবার সকালে উদ্বিগ্ন মন্ত্রী নিজেই পুর ভবনে গিয়ে মেয়র ও কাউন্সিলর, পুলিশ-দমকল, এসজেডিএ-র কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানেই তিনি জানিয়ে দেন, শহরে নানা এলাকায় শতাধিক বহুতলে ফাটল ধরে বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বেশ কয়েকটি বহুতলে বিধি ভেঙে মোবাইলের টাওয়ার বসানোয় বিপদ বেড়েছে বলে ইঞ্জিনিয়ররা আশঙ্কা করছেন। সেই কারণে আপাতত শিলিগুড়ি পুরসভাকে কোনও বহুতলের নকশা অনুমোদন না-করার পরামর্শ দেন মন্ত্রী। পাশাপাশি, বহুতল তৈরির অনুমতি দেওয়ার আগে নয়া কিছু শর্ত আরোপ করার জন্য বিশেষজ্ঞদের দিয়ে সমীক্ষা করিয়ে মতামতও নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মন্ত্রী। |
|
শিলিগুড়ি পুরসভায় উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের বৈঠক। শুক্রবার ছবিটি তুলেছেন বিশ্বরূপ বসাক। |
ঘটনাচক্রে ওই বৈঠকের পরে পুরসভায় মাসিক অধিবেশন হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, আপাতত নতুন করে শহরে কোনও বহুতলের নকশা অনুমোদন করা হবে না। যে সব দোতলা, তিনতলা কিংবা বহুতল বাড়িতে নকশা অনুমোদনের সময়ে মোবাইলের টাওয়ার বসানোর কথা উল্লেখ করা হয়নি, সেখানে তা থাকলে সরিয়ে নিতে বাধ্য করবে পুরসভা। পুরসভার মাসিক অধিবেশনের প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছিল, যে সব বেআইনি মোবাইল টাওয়ার রয়েছে সেগুলি রাখতে হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ফি ও জরিমানা বাবদ ১৩ লক্ষ টাকা দিতে হবে। জরিমানা দিয়ে অবৈধ কাজকে বৈধ করার প্রস্তাবের বিরোধিতায় অনেকেই আপত্তি করেন। শেষ পর্যন্ত তা বোর্ড মিটিংয়ে গৃহীত হয়নি। এ দিন সকাল থেকে গৌতমবাবু শিলিগুড়ি ও লাগোয়া ডাবগ্রাম এলাকায় দ্বিতীয় দফায় পরিদর্শন করেন। তার পরে যান পুরসভায়। সেখান থেকে খড়িবাড়িতে গিয়ে ভূমিকম্পে যে সব স্কুলের ক্ষতি হয়েছে তা সারানোর জন্য প্রয়োজনী ব্যবস্থা নেন। পরে মন্ত্রী বলেন, “শহর এবং লাগোয়া এলাকায় প্রচুর বেআইনি বাড়িঘর রয়েছে। অনেক ভবনের কিছু অংশ বেআইনিভাবে তৈরি। আবার নকশা অনুমোদনের আগে কিছু জানানো হচ্ছে না। অথচ বাড়ি তৈরির পরে মোবাইল টাওয়ার বসানো হচ্ছে। এতে ভবনের ক্ষতি হচ্ছে। মনিটারিং কমিটি গড়া হচ্ছে। সেখানে বিশেষজ্ঞরা থাকছেন। প্রাথমিকভাবে ওই রিপোর্ট দেখে পুর দফতর থেকে বেআইনি বাড়িঘর ভাঙার নির্দেশ জারি করা হবে।” |
শিলিগুড়িতে আপাতত চার তলার বেশি বাড়ি তৈরির অনুমতি নয়। |
বাড়ির ছাদে মোবাইল টাওয়ার বসানো যাবে না। |
বাড়ির ছাদে বড় হোর্ডিং নয়। |
বিপজ্জনক বহুতল, টাওয়ার, হোর্ডিং চিহ্নিত করে ভাঙা/সরানো হবে। |
৮টি বহুতল খালি করাতে হবে। |
|
বস্তুত, শিলিগুড়ি যে ভূমিকম্প প্রবণ এলাকা বলে চিহ্নিত সে কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী পুরসভাকে বারেবারেই সতর্ক করে দেন। তিনি জানান, শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের এলাকা ধরে আগামী দিনের কথা ভেবে আমাদের পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। এখানে বহুতলের নির্দিষ্ট উচ্চতা বেঁধে দেওয়া হবে। একেক জায়গায় একেকরকম বহুতল তৈরি করা চলবে না। শহরের রাস্তাঘাট, কালভার্ট, ছোট সেতু, বিদ্যুতের খুঁটি, স্কুল কলেজ, বস্তি, দুঃস্থদের জন্য সরকারি প্রকল্পে গড়া সরকারি বাড়িঘরের ক্ষতিগ্রস্থ অংশগুলি অবস্থা খতিয়ে দেখে তা দ্রুত সংস্কার করা হবে বলে মন্ত্রী জানিয়েছেন। |
|