বাস মালিকদের কথা ভেবে মাসিক কিস্তির পরিমাণ ৭ হাজার টাকা কমিয়েও লাভ হল না। জওহরলাল নেহরু জাতীয় পরিকাঠামো উন্নয়ন মিশনে (জেএনএনইউআরএম) কেনা বাসের টাকা মালিকদের কাছ থেকে ফেরতই পাচ্ছে না রাজ্য সরকার। পরিবহণ দফতরের অধীন পশ্চিমবঙ্গ পরিবহণ পরিকাঠামো উন্নয়ন নিগমের (টিআইডিসি) কোষাগারের তাই বেহাল দশা। বাস মালিকদের গ্যারান্টার হিসেবে প্রতি মাসে তাদের ঋণের টাকা মেটাতে হচ্ছে।
১৫ বছরের পুরনো বাণিজ্যিক গাড়ির উপর কলকাতা মেট্রোপলিটন এলাকায় নিষেধাজ্ঞা জারির পর বিভিন্ন রুটে বরাদ্দ অর্থে বাস দেওয়া শুরু হয়। এর ৩৫ শতাংশ কেন্দ্র, ১৫ শতাংশ রাজ্য ও বাকি ৫০ শতাংশ সংশ্লিষ্ট বাস-মালিকের দেওয়ার কথা। এর জন্য প্রয়োজনীয় ঋণের ব্যবস্থা করে সরকার। বাস বরাদ্দের সময় টিআইডিসি-র কাছে মালিকদের গচ্ছিত রাখতে হয়েছিল ২ লক্ষ টাকা করে। কিস্তি হিসাবে মালিকদের জন্য মাসে ২২,৭৬০ টাকা করে ধার্য হয়েছিল।
বাস পাওয়ার পরে শুরু হয় সমস্যা। পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, কিস্তির এত টাকা প্রতি মাসে তাঁরা মেটাতে পারবেন না বলে জানিয়ে দেন মালিকেরা। বামফ্রন্ট সরকারের আমলেই কিস্তির পরিমাণ কমিয়ে করা হয়েছিল ২২ হাজার টাকা। সরকার বদলের পরে মালিকদের কথা ভেবে মাসিক কিস্তির পরিমাণ কমিয়ে করা হয় ১৫ হাজার টাকা। তাতেও মালিকদের বড় একটা অংশ কিস্তির টাকা বকেয়া রেখে দেওয়ায় পরিবহণ দফতর কড়া মনোভাব নেয়। পরিবহণমন্ত্রী সুব্রত বক্সী বাস মালিক সংগঠনের কর্তাদের ডেকে পাঠিয়ে জানান, এ বার অনাদায়ী টাকা আদায়ে সরকার আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে শুরু করবে। তাতেও কাজ হয়নি। সমস্যা মেটাতে তাই মালিকদের নিয়ে আলোচনায় বসতে চলেছে পরিবহণ দফতর।
কত টাকা বকেয়া হয়ে আছে? টিআইডিসি-র ম্যানেজিং ডিরেক্টর ধীমান মুখোপাধ্যায় বলেন, বাস বরাদ্দ হয়েছে ৫১২টি। প্রতিটি বাসের দাম প্রায় ২০ লক্ষ টাকা। এর অর্ধেক বরাদ্দ হয়েছে ঋণ হিসাবে। অর্থাৎ, ঋণ ৫১ কোটি টাকারও বেশি। ব্যাঙ্ককে ৯.৭০ শতাংশ সুদ গ্যারান্টার হিসাবে দিতে হচ্ছে টিআইডিসি-কে। ধীমানবাবু বলেন, “গত ৩১ অগস্ট পর্যন্ত বেসরকারি বাস-মালিকদের কাছে এই বাস-বাবদ আমাদের পাওনা ১৪ কোটি ১১ লক্ষ টাকা। আমরা নিজেদের তহবিল থেকে এই টাকা মেটাচ্ছি। আমাদের দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে।” কেন মালিকেরা টাকা মেটাচ্ছেন না? জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেটসের যুগ্ম সম্পাদক তপন বন্দ্যোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, “সাত দফায় ডিজেলের দাম বাড়া সত্ত্বেও সরকার ভাড়া বাড়ানোর অনুমতি দিচ্ছে না। কী করে ঋণ শোধ হবে?” সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সাধন দাস বলেন, “সাংগঠনিক ভাবে আমরা সদস্যদের ঋণ ঠিকমতো শোধ করতে বলেছি। কে করছেন, কে করছেন না, তা আমাদের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়।” মালিকদের অন্য সংগঠন বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেটের অন্যতম কর্তা দীপক সরকার বলেন, “গোড়া থেকেই এই প্রকল্পে বাস নেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ দেখাইনি। আমাদের সদস্যরা এই বাস খুব একটা নেননি। সরকারও এ নিয়ে বৈঠকে আমাদের ডাকেনি।” যে সব মালিক জেএনএনইউআরএম-এর বাস নিয়েছেন তাঁদের পক্ষে নির্মল রায় বলেন, “কিস্তির টাকা কমিয়ে মাসে পাঁচ হাজার টাকা করলেও তা দিতে পারব না।” কারণ হিসাবে তিনি বলেন, “এই বাস নেওয়ার সময়ে আমাদের বলা হয়েছিল প্রতি লিটার ডিজেলে প্রায় চার কিলোমিটার চলবে। চলছে এর প্রায় অর্ধেক। তথ্য জানার অধিকার আইনে এই প্রকল্পে বরাদ্দ বাস নিয়ে নির্দিষ্ট কিছু প্রশ্ন রেখেছিলাম। উত্তর পাইনি।”
ফলে সমস্যা সমাধানে তারা কী করবে, তা ভেবে অথৈ জলে পড়েছে পরিবহণ দফতর। |