তৃণমূল নেতৃত্বের ‘অস্থির’ চিন্তার জন্য বারবার উপনির্বাচন ‘চাপিয়ে’ দেওয়া হচ্ছে বলে আগেই সরব হয়েছিল সিপিএম। এ বার তার পাশাপাশি সাংসদ-পদ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এখনও ইস্তফা না-দেওয়া নিয়েও ‘কটাক্ষ’ করলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু। প্রশ্ন তুললেন দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচনে তৃণমূলের সম্ভাব্য প্রার্থীকে নিয়েও!
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, সন্ত্রাসের প্রতিবাদে উত্তর কলকাতা বামফ্রন্টের আয়োজনে শুক্রবার শ্যামবাজারে এক সভায় বিমানবাবু বলেন, “খাতায়-কলমে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখনও সাংসদ। মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে ২০ মে শপথ নেওয়ার পরে জুন মাসেও যদি সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দিতেন, তা হলে দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন করা যেত ভবানীপুর এবং বসিরহাট উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের সঙ্গেই। কিন্তু তিনি মানুষের সুবিধার কথা ভাবেননি ব্যক্তিস্বার্থের জন্য।”
এর সঙ্গেই বিমানবাবুর বক্তব্য, “উনি দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রে যাঁকে প্রার্থী করার কথা ভাবছেন, নভেম্বর মাসের আগে তাঁর ২৫ বছর বয়স হবে না। সেই কারণেই উনি আগে ইস্তফা দেননি!” নাম না-করলেও সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকের ইঙ্গিত ছিল মমতার ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকে। যিনি ইতিমধ্যেই তৃণমূলের যুব রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ করেছেন। প্রসঙ্গত, লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী হতে গেলে ন্যূনতম ২৫ বছর বয়স হতে হয়।
মমতা এখনও সাংসদ-পদে ইস্তফা দেননি। স্বভাবতই দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রের জন্য তৃণমূলের প্রার্থীর নামও ‘আনুষ্ঠানিক ভাবে’ ঘোষণা হয়নি। তার আগেই বিমানবাবুর এমন মন্তব্যে ‘বিস্মিত’ তৃণমূল নেতৃত্ব। দলের সর্বভারতীয় সম্পাদক তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুকুল রায় পাল্টা কটাক্ষ করে বলেছেন, “বিমানবাবুদের মস্তিষ্ক বিকৃতি আগেই ঘটেছে। পরাজয়ের ভয়ে আতঙ্কিত, দিশাহারা হয়ে এখনও উল্টোপাল্টা কথা বলছেন!”
বস্তুত, বিমানবাবুদের যুক্তি, মমতা বিধানসভা নির্বাচনেই প্রার্থী হলে তাঁর জন্য উপনির্বাচনের দরকারই হত না। তার পরেও যদি তিনি লোকসভার সদস্যপদ থেকে ইস্তফা দিয়ে বিধানসভার উপনির্বাচনে যেতেন, তা হলে দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনও একসঙ্গে সেরে নেওয়া যেত। তাতে যেমন আর্থিক সঙ্কটের সময় খরচ বাঁচত, তেমনই ভোটদাতাদেরও বারবার বুথে যেতে হত না। বিমানবাবুর কথায়, “ব্যক্তিস্বার্থেই উনি লোকসভা উপনির্বাচন আবার মানুষের উপরে চাপিয়ে দেবেন!”
প্রচারে গিয়ে ভবানীপুরের প্রার্থী মমতা বৃহস্পতিবার অভিযোগ করেছিলেন, বাম জমানায় প্রশাসনে শুধু নিজেদের ‘দলের লোকজন’কে ঢুকিয়েছিল সিপিএম। তার এখন প্রতিপদে সরকারের কাজে ‘অসহযোগিতা’ করছে। তার জবাবে বিমানবাবু এ দিন বলেন, “আমরা কোথায় অসহযোগিতা করছি? আমরা তো চার মাসের সরকারের কাজের হিসাবও চাইছি না। কিন্তু তৃণমূলের আলখাল্লা পরে কিছু বর্গি গ্রামবাংলায় উৎপাত করবে, সাবেক জমিদারদের স্বার্থে চাষির জমি কেড়ে নেবে আর উনি ভাববেন, আমরা সহযোগিতা করব তা কিন্তু করতে পারব না!”
বিমানবাবু অবশ্য জানিয়েছেন, রাজ্যের উন্নয়নের স্বার্থে সরকারের কর্মসূচিতে তাঁরা সহযোগিতাই করবেন। এই সূত্রেই তাঁর বক্তব্য, দার্জিলিং চুক্তি, মূল্যবৃদ্ধি, বন্যা পরিস্থিতি বা বেহাল রাস্তাঘাট নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সর্বদল বৈঠক ডাকা উচিত ছিল। উপনির্বাচনে শেষ দিনের প্রচারে ভবানীপুর কেন্দ্রের মধ্যে একবালপুরে মিছিলে গিয়েও বেহাল রাস্তার প্রশ্নে বিমানবাবু বলেন, “এক ঘণ্টার রাস্তা যেতে দ্বিগুণ সময় লাগছে। বৃষ্টি হয়, তার মধ্যেই তাপ্পি মারার (প্যাচওয়ার্ক) কাজও হয়। কিন্তু এখন সেটাও হচ্ছে না।” সাধারণ মানুষের জন্য জরুরি প্রশ্নে আলোচনা না-করে হোর্ডিং নিয়ে সর্বদল ডাকায় শ্যামবাজারের সভায় মমতার সমালোচনা করে বিমানবাবু বলেন, “তৃণমূলের কথা বলার জন্য সংবাদমাধ্যম আছে, সবাই গুণগান গাইছে! বামপন্থীদের বক্তব্য তো হোর্ডিংয়ের মাধ্যমেই জানাতে হবে!” |