কলকাতা থেকে হাওড়া শহরে বিদ্যুৎ পৌঁছাতে হুগলি নদীর তলা দিয়ে সুড়ঙ্গ কেটেছিল সিইএসসি। সেটা ১৯৩১ সাল।
আট দশক পরে তারা হুগলি নদীর দু’দিকে বসাচ্ছে ৭৫তলা বাড়ির সমান উঁচু টাওয়ার। হলদিয়া থেকে কলকাতায় বিদ্যুৎ আনার জন্য। সিইএসসি-র দাবি, চিনকে বাদ দিলে তামাম এশিয়ায় এটাই হবে বিদ্যুৎ পরিবহণের উচ্চতম স্তম্ভ।
সিইএসসি হলদিয়ায় নতুন ৬০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র বানাচ্ছে। টাওয়ার না সুড়ঙ্গ, সেখান থেকে কোন পথে নদী পার করে বিদ্যুৎ কলকাতায় আনা হবে, তা নিয়ে বিস্তর টানাপোড়েন চলছিল। শেষমেশ টাওয়ার বসানোরই সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিইএসসি-র এক কর্তা। সংস্থা সূত্রের খবর: ওই টাওয়ার গড়তে চেয়ে দু’টি ভারতীয় সংস্থা দরপত্র জমা দিয়েছে। কে দায়িত্ব পাবে, তা আগামী মাসেই চূড়ান্ত হয়ে যাওয়ার কথা।
জোড়া টাওয়ার এবং হলদিয়া থেকে কলকাতার অদূরে নোনাডাঙা সাবস্টেশন পর্যন্ত ৯০ কিলোমিটার দীর্ঘ চারশো কিলোভোল্টের ডাবল সার্কিট সংবহন লাইন টানতে কম-বেশি সাড়ে তিনশো কোটি টাকা খরচ ধরা হয়েছে। ওই লাইন মারফত ১২০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ আনা যাবে।
টাওয়ার দু’টো বসবে ঠিক কোথায়? |
সিইএসসি-সূত্রের খবর: কুকড়াহাটি ও রায়চকের মধ্যে নদী যেখানে তুলনায় কম চওড়া (দু’কিলোমিটার), সংবহন লাইন সেখানেই নদী পেরোবে। তার জন্য যে দু’টো স্তম্ভ বসবে, তার উচ্চতা হবে ২৪০ মিটার, অর্থাৎ প্রায় পঁচাত্তরতলা উঁচু বাড়ির সমান। এবং তার একটা নদীর ভিতরে ৫০০ মিটার ঢুকে থাকবে। যার অর্থ, সেটি উঠবে জলের মধ্য থেকে। কেন?
সিইএসসি-র প্রযুক্তিবিদদের ব্যাখ্যা: দু’টো টাওয়ারই নদীর পাড়ে বসাতে গেলে তাদের ব্যবধান হতো দু’কিলোমিটার। সে ক্ষেত্রে অত্যন্ত ভারী বিদ্যুৎবাহী সংবহন কেব্ল পার করাতে গেলে টাওয়ারের উচ্চতা দাঁড়াত একশোতলা বাড়ির সমান। অত উঁচু স্তম্ভ নির্মাণ শুধু ব্যয়সাপেক্ষই নয়, প্রযুক্তিগত দিক দিয়েও বেশি জটিল। তাই কলকাতা বন্দর-কর্তৃপক্ষ যখন রায়চকের দিকে নদীর ভিতরে ৫০০ মিটার ঢুকে টাওয়ার বসানোর অনুমতি দিলেন, সিইএসসি আর দ্বিধা করেনি। এ ক্ষেত্রে দুই টাওয়ারের মাঝে ব্যবধান কমে দাঁড়াচ্ছে ১৫০০ মিটার, ফলে উচ্চতাও কমছে।
সিইএসসি-র তথ্য অনুযায়ী, প্রতিটি টাওয়ারের ওজন হবে দেড় হাজার টন। মাটির ৪৫ মিটার গভীরে ইস্পাতের পাইলিং করে সেগুলোর ভিত তৈরি হচ্ছে। উপরন্তু তারের টানে তারা যাতে নদীর দিকে হেলে না-যায়, সে জন্য মূল টাওয়ারের দু’প্রান্তে ছ’শো মিটার দূরে দূরে বসাতে হচ্ছে ৮০ মিটার উঁচু দু’টো ‘অ্যাঙ্কর টাওয়ার।’ এক ইঞ্জিনিয়ার বলেন, “দু’দিকের দুই টাওয়ারের মধ্যে টাঙানো তারটি খুবই ভারী হবে। নিজের ওজনেই তা নীচের দিকে ১২০ মিটার ঝুলে থাকবে। তার তলা দিয়ে জাহাজ চলাচলে যাতে অসুবিধে না-হয়, সে জন্য জায়গা থাকবে ১২০ মিটার।”
এই স্তম্ভ-প্রকল্পে সিইএসসি-র পরামর্শদাতা পাওয়ার গ্রিড কর্পোরেশন। তারা আবার পরামর্শ নিচ্ছে উঁচু টাওয়ারের প্রযুক্তিতে বিশ্বের অন্যতম নামী বিশেষজ্ঞ, কানাডার ইলিয়াস খানুম-এর। ২০১৪ সালের জুনে হলদিয়ায় সিইএসসি-র বিদ্যুৎকেন্দ্রটি তৈরি হয়ে যাওয়ার কথা। টাওয়ার-সহ সংবহন লাইন তার আগে তৈরি হবে কি?
সিইএসসি-র একজিকিউটিভ ডিরেক্টর (টেকনিক্যাল), সত্যসুন্দর সিংহ বলেন, “২০১৩-র ডিসেম্বরের মধ্যে সংবহন লাইনের যাবতীয় কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছি।” |