আর মাত্র কয়েকটা দিন... ‘ডিজনিল্যান্ড’, ‘আলিবাবা চল্লিশ চোর’
নিয়ে পুজো মাতাতে চায় ক্যানিং
মাঝে আর মাত্র কয়েকটা দিন। নানা থিমের ভাবনা নিয়ে মণ্ডপ ও প্রতিমা সজ্জায় নজর কাড়তে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিংয়ের নামকরা পুজোকমিটিগুলির ব্যস্ততা এখন চরমে। সেরা মণ্ডপ, সেরা প্রতিমা, সেরা আলো উপহার দিতে চলছে একে অন্যকে টেক্কা দেওয়ার প্রতিযোগিতা। মহকুমার সেরা পুজোগুলির মধ্যে অন্যতম ক্যানিং হাসপাতালপাড়া সর্বজনীন, গোলকুটিপাড়া দুর্গোৎসব, মাতলাবাজার ব্যবসায়ীবৃন্দ, জয়দেবপল্লি নরারুণ সঙ্ঘ, দিঘিরপাড় ১ নম্বর মিলন সঙ্ঘ।
কোথাও মিনারেল ওয়াটারের বোতল বা ঠান্ডা পানীয়ের বোতল দিয়ে তৈরি হচ্ছে মণ্ডপ তো কোথাও ব্যবহার হচ্ছে বাঁশ, প্লাস্টার অব প্যারিস, কিংবা থার্মোকল। কারও পুজোর থিম ‘পুতুলের খেলাঘরে মা আসছেন আলো করে’, তো কারও থিম ‘আলিবাবা ও চল্লিশ চোর’। এমনই সব সুদৃশ্য মণ্ডপ ও অভিনব থিমের সমাহার এ বার ক্যানিংয়ের পুজোয়। কেউ মণ্ডপসজ্জায় জোর দিয়েছেন তো কেউ প্রতিমায় নজর কাড়তে চাইছেন। কোথাও মণ্ডপ, প্রতিমা, আলো সবেতেই টেক্কা দেওয়ার চেষ্টা। কোথাও পুজোর সাবেক মেজাজটাকেই ধরে রাখার চেষ্টা করছেন উদ্যোক্তারা।
মাতলাবাজার ব্যবসায়ীবৃন্দ পরিচালিত দুর্গোৎসবের এ বার ৮৮ বছর। সম্পাদক অশোক মজুমদার জানালেন, ক্যানিংয়ের সবচেয়ে পুরনো পুজো এটাই। বাজারের মধ্যে দুর্গামণ্ডপে জন্মাষ্টমীর দিন কাঠামো পুজো করে শুরু হয় মূর্তি নির্মাণের কাজ। নবমীর দিন পুজোয় বলির প্রচলন রয়েছে। ক্যানিং হাসপাতাল পাড়া সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির সভাপতি অর্ণব রায় জানালেন, প্রতি বছরের মতো এ বছরেও নানা চমকের ব্যবস্থা করেছেন তাঁরা। নেপালের বৌদ্ধ মন্দিরের আদলে তৈরি হচ্ছে মণ্ডপ। মণ্ডপের মধ্যে দর্শনার্থীরা যাতে একটু আরামে প্রতিমা দর্শন করতে পারেন, সে জন্য পুরো মণ্ডপটিই হবে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত। এ বারে তাঁদের পুজোর থিম ‘হিংসা নয়শান্তি চাই, মা’। মণ্ডপে দেবী দুর্গা অসুরবিনাশী নন, বুদ্ধের মতো ধ্যানমগ্ন। কোনও প্রতিমার হাতে থাকবে না অস্ত্র।
প্রথা ভেঙে এই ধরনের থিম কেন? অর্ণববাবুর উত্তর, চারিদিকে রাজনৈতিক হানাহানি, রক্তপাত, জঙ্গি কার্যকলাপ, সম্প্রতি দিল্লি হাইকোর্টের সামনে সন্ত্রাসবাদী হামলাএই সব বন্ধ করতেই দেবী দুর্গার কাছে প্রার্থনা এবং সেই বার্তা মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়াই তাঁদের লক্ষ্য। এর পাশাপাশি ছোটদের মনোরঞ্জনের জন্য আলোকসজ্জার মধ্য দিয়ে ফুটিয়ে তোলা হবে ‘চরকা-কাটা বুড়ি’, ‘সাত ভাই চম্পা’ এবং ‘সোনার কাঠি, রুপোর কাঠি’।
মহিলা পরিচালিত গোলকুটিপাড়া দুর্গোৎসব কমিটির সম্পাদিকা সুপ্রিয়া শাহর কথায়, প্রতিবছর পাড়ার ছেলেরাই দায়িত্ব নিয়ে পুজো করতেন। ইদানীং ছেলেরা বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত হয়ে যাওয়ায় পুজো বন্ধ হতে বসেছিল। তাই মেয়েরাই দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে এসেছেন পুজো পরিচালনায়। চাঁদা তোলা থেকে শুরু করে মণ্ডপ তৈরিযাবতীয় কাজের তদারকি করছেন মেয়েরাই। আমেরিকার ডিজনিল্যান্ডের আদলে তৈরি হচ্ছে মণ্ডপ। দেবী দুর্গার মূর্তি মাটির হলেও অন্যান্য মূর্তি হচ্ছে থার্মোকলের। মণ্ডপে পরিবেশ দূষণ রোধে এক পোস্টার-প্রদর্শনীর আয়োজন করা হচ্ছে।
ক্যানিং জয়দেব পল্লি নবারুণ সংঘের পুজোর এ বার ১৯ বছর। সম্পাদক বুলু মণ্ডল জানালেন, চিরাচরিত প্রথা থেকে বেরিয়ে পুজোকে একটু বিনোদনমুখী করে তোলাই এ বার তাঁদের উদ্দেশ্য। বাঁশ, থার্মোকল, প্যারিস দিয়ে মণ্ডপ তৈরি হবে গুহার আদলে। ছোটদের কথা ভেবেই এ বার তাঁদের থিম ‘আলিবাবা ও চল্লিশ চোর’।
এ বার ৪৯ বছরে পড়েছে দিঘির পাড় ১নং মিলন সংঘের পুজো। ক্লাবের সম্পাদক সত্যব্রত সাহা জানালেন, মিনারেল ওয়াটারের বোতল দিয়ে তৈরি হচ্ছে তাঁদের মণ্ডপ। এক হাজার ঠান্ডা পানীয়ের বোতল দিয়ে মণ্ডপের মধ্যে তৈরি হচ্ছে বিরাট ঝাড়বাতি। রবীন্দ্রনাথের জন্মের সার্ধশতবর্ষ উপলক্ষে কবির ‘দেনাপাওনা’র উপরে আধারিত তাঁদের এ বারের থিম ‘পুতুলের খেলাঘরে মা আসছেন আলো করে’।
ক্যানিং মহকুমায় এ বার সরকারি ভাবে অনুমোদিত পুজোর সংখ্যা ১৩৮ বলে জানালেন মহকুমাশাসক শেখর সেন। সারদ উৎসবের দিনগুলিতে দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি খুঁটিয়ে দেখতে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন পুজোর উদ্যোক্তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছেন তিনি।

নিজস্ব চিত্র।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.