বাংলাদেশের সীমানা ঘেঁষা লালগোলার গা থেকে আন্তর্জাতিক ‘চোরাচালান করিডর’-এর বদনাম মুছে ফেলার তাগিদ, অন্য দিকে মাদকের নেশা থেকে তরুণ প্রজন্মকে দুরে সরিয়ে রাখাসাত বছর আগে ওই দু’টি কালো দাগ মুছতে শুরু হয়েছিল ‘লালগোলা চ্যালেঞ্জ কাপ।’
এ বারও নামে একটি বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পরিচালনায় গত ১৭ সেপ্টম্বর শনিবার শুরু হয়েছে ওই প্রতিযোগিতা। বৃষ্টি-বাদলা উপেক্ষা করে লালগোলা জেল মাঠে উৎসাহী দর্শকদের ভিড়ে ইতিমধ্যে প্রতিযোগিতার চারটি খেলাও হয়ে গিয়েছে। লালগোলা ব্লক এলাকার ৮টি দলের মধ্যে নক আউট পর্যায়ের খেলা চলছে। ৮টি দলের মধ্যে চারটি-ই গত বছরের সেমিফাইনালিস্ট। আগামী বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার সেমিফাইনাল। ফাইনাল খেলা হবে আগামী রবিবার।
গত ১৭ সেপ্টেম্বর উদ্বোধনী দিনে নলডহরি মিলন সংঘ ৫-০ গোলে রামনগর বিজলী সংঘকে পরাজিত করে। পর দিন রবিবার ১৮ সেপ্টম্বর লালগোলা মর্নিং স্টার ২-১ গোলে হারিয়ে দেয় কালমেঘা-হোসেনাবাদ ইয়ং ক্লাবকে। ১৯ সেপ্টেম্বর সোমবার তৃতীয় দিনের খেলা হয় চামাপাড়া টাইগার সংঘ ও কামিলা নবীন সংঘের মধ্যে। ২-১ গোলে চামাপাড়া জয়ী হয়। চতুর্থ দিন কাস্টমস ফ্রেন্ডস ক্লাব ও লালগোলা নেতাজি সংঘের খেলায় নেতাজি ১-০ গোলে কাস্টমসকে। আজ বৃহস্পতিবার প্রথম সেমিফাইনালে চামাপাড়া টাইগার সংঘ ৪-০ গোলে নলডহরি মিলন সংঘকে পরাজিত করে। শুক্রবার অন্য সেমিফাইনালে লালগোলা মর্নিং স্টার টাই ব্রেকারে ৪-১ গোলে লালগোলা নেতাজি সংঘকে হারিয়ে ফাইনাল উঠেছে। ফাইনাল খেলা হবে সোমবার।
আয়োজক সংস্থার সহ-সম্পাদক অজয় ঘোষ বলেন, “এলাকার তরুণ সমাজের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য সুস্থ রাখতেই সাত বছর আগে ওই ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয়। ওই সময় সিদ্ধান্ত হয়, প্রতিযোগী দলগুলিকে অবশ্যই হতে হবে লালগোলা ব্লক বা লালগোলা থানা এলাকার। সেই সঙ্গে নিয়ম করা হয়, প্রতিযোগী দলের ১১ জন প্লেয়ারের মধ্যে অন্তত ৭ জনকে হতে হবে লালগোলার ভূমিপুত্র। বাকি ৪ জন বহিরাগত হতে পারে। লালগোলার ছেলেদের মানসিক ও শারীরিক সুস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে ওই নিয়ম আজও বহাল রয়েছে।”
লালগোলার প্রয়াত দুই ভূমিপুত্র ফুটবলার সব্যসাচী মিত্র ও নজরুল ইসলামের স্মৃতিতে তাঁদের পরিবার থেকে প্রতি বছর উইনার্স ও রানার্স শিল্ড দেওয়া হয়। চ্যাম্পিয়ান দলকে দেওয়া হয় ‘সব্যসাচী মিত্র স্মৃতি উইনার্স শিল্ড’ ও প্রতিদ্বন্দ্বী রানার্স দলকে দেওয়া হয় ‘নজরুল ইসলাম রানার্স শিল্ড’।
আয়োজক সংস্থার সম্পাদক সমীর বিশ্বাস বলেন, “লালগোলার বতর্মান প্রজন্মের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ হেরোইনের নেশায় আসক্ত। হেরোইন-সহ বিভিন্ন দ্রবের আন্তর্জাতিক চোরচালানের করিডর হিসাবে অপরাধ জগতের মানচিত্রে লালগোলার ঠাঁই রয়েছে। লালগোলার বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই দারিদ্র কারণে ও কাঁচা টাকার লোভে আন্তর্জাতিক চোরচালানের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ে। ওই সব অশুভ প্রবণতা থেকে তরুণ প্রজন্মকে দূরে সরিয়ে রাখার একটি অন্যতম অবলম্বন হল খেলাধুলা। তাই সাত বছর ধরে পুরোপুরি বেসরকারি সাহায্যে ওই টুর্নামেন্ট চালিয়ে আসছি।” |