নদিয়ার মাজদিয়া কলেজের পর এ বার পড়শি জেলা, মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর কলেজ।
এবং অধ্যক্ষ হেনস্থার পরে অভিযোগের তির এ বারও তৃণমূল সমর্থকদের দিকে।
স্কুল কলেজের শিক্ষকদের উপরে ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক কিংবা দলের ছাত্র সংগঠনের কর্মীদের ক্রমান্বয়ে ‘জুলুমবাজির’ ঘটনায় জঙ্গিপুর কলেজ শুধু নতুন সংযোজন, আক্রান্ত অধ্যক্ষ সাকুল্যে দুশো মিটার দূরের থানায় ঘটনাটি বার বারা জানানো সত্ত্বেও পুলিশ আসে প্রায় দেড় ঘন্টা পরে।
অধ্যক্ষ আবু এল শুকরানা মণ্ডল বলেন, “কতটুকু আর বড় জোর দুশো মিটার, তবু থানা থেকে পুলিশ এল প্রায় দেড় ঘন্টা পরে। ততক্ষমে টেবিল-চেয়ার ভাঙচুর করা থেকে আমার টেলিফোনটাও আছড়ে ভেঙে দিয়েছে ছাত্রেরা।”
কারা করল এ কাজ? অধ্যক্ষ বলছেন, “যারা ঘরে ঢুকে হামলা চালিয়েছিল তারা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সদস্য বলেই সগর্বে নিজেদের পরিচয় দিয়েছিল।” কয়েক জন প্রাক্তন ছাত্র এ দিন তাঁর সঙ্গে দেখা করতে আসেন। অধ্যক্ষ তাঁদের দু’জনকে ঘরে আসার অনুমতি দিয়েছিলেন। কিন্তু অনুমতির তোয়াক্কা না করেই জনা পনেরো যুবক তাঁর ঘরে ঢুকে পড়ে। তিনি বলেন, “ঘরে ঢুকেই তারা নিজেদের তৃণমূলের কর্মী পরিচয় দিয়ে আমাকে রীতিমত শাসাতে থাকে। টেবিল-চেয়ার ভাঙচুর করতে শুরু করে। আমি ফোন করতে গেলে ফোনটাও কেড়ে নিয়ে আছড়ে ভেঙে ফেলে। আমাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়। এ দিন তৃণমূলের ছেলেরা যা করেছে তা অসভ্যতা ছাড়া কিছু নয়।” |
তৃণমূল ছাত্র পরিষদের কলেজ কমিটির সভাপতি ফিরোজ শেখ অধ্যক্ষের অভিযোগ অবশ্য মানতে চাননি। তাঁর পাল্টা অভিযোগ, “অধ্যক্ষ কংগ্রেসের ছাত্র পরিষদের হয়ে কলেজে কাজ করছেন। আমি অনুমতি নিয়েই কয়েক জন ছাত্রের সঙ্গে ওনার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। ঘরে ঢোকা মাত্রই অধ্যক্ষ উত্তেজিত হয়ে আমাদের যা খুশি তাই বলতে শুরু করেন। আমাদের কোনও কথা শুনতেই রাজি হননি। তৃণমূলের এক কর্মী উত্তেজিত হয়ে চেয়ারে লাথি মারলে ছাত্র পরিষদের এক দল সমর্থকেরা ঘরে ঢুকে ভাঙচুর করে।”
এই ঘটনার নিন্দা করে ছাত্র পরিষদের জেলা সম্পাদক পলাশ সাহা বলেন, “তৃণমূল ছাত্র পরিষদের যে সব কর্মী এই ঘটনায় জড়িত তাদের অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে।” এসএফআইয়ের জঙ্গিপুর জোনাল কমিটির সভাপতি সুজয় দাস বলেন, “এসএফআই সমর্থকদের ওই কলেজে এখন ঢুকতেই দেওয়া হয় না। ছাত্র রাজনীতি আর ছাত্রদের হাতে নেই। তা চালাচ্ছে বহিরাগতরা।”
গত তিন সপ্তাহে মুর্শিদাবাদের বহরমপুর, লালবাগ কলেজেও একই ভাবে ছাত্র তাণ্ডব, ভাঙচুর, অধ্যক্ষের উপরে হামলার একাধিক ঘটনা ঘটেছে। হামলায় কখনও ছাত্র পরিষদ, কখনও তৃণমূল ছাত্র পরিষদের পাশাপাশি অভিযোগ উঠেছে এসএফআইয়ের বিরুদ্ধেও।
জঙ্গিপুর কলেজের অধ্যক্ষের অভিযোগ, “কলেজে সব ছাত্র সংগঠনের নাম করে বহিরাগতরা হামলা করছে। এর জেরে কলেজ ২৩ অগস্ট থেকে অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। পরে প্রশাসনের আশ্বাসে কলেজ খোলা হয়। বহিরাগতদের ঢোকা আটকাতে পাহারাও বসানো হয়। কিন্তু স্থানীয় ছেলেরা সে সব না মেনে কলেজে ঢুকে অশান্তি পাকাচ্ছে। পুলিশ পাহারায় তো কলেজ চালানো সম্ভব নয়।” |