|
|
|
|
|
|
|
মুখোমুখি ২... |
|
এ বারও গডফাদার সঙ্গে নেই |
বললেন পল্লবী চট্টোপাধ্যায়। আবার সিনেমায় ফেরা, রবীন্দ্রসঙ্গীতের অ্যালবাম, দাদা,
বাবা এবং জীবন সব নিয়ে খোলামেলা আড্ডায়। মুখোমুখি ইন্দ্রনীল রায় |
পত্রিকা: রবীন্দ্রসঙ্গীতের অ্যালবাম তো অভিজিৎ বা বাবুল সুপ্রিয়র এলাকা। হঠাৎ আপনি সেখানে ঢুকে পড়লেন?
পল্লবী: দেখুন আমি পেশাদার গায়িকা নই। কোনও দিন গানের সে রকম চর্চাও করিনি। এক দিন শু্যটিংয়ের মধ্যে সাহেব চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা হচ্ছিল, ও-ই আমায় বলে অ্যালবাম করার কথা। আমি যাত্রায় নিয়মিত গান গেয়েছি, তাই ভাবলাম চেষ্টা করে দেখাই যাক না।
পত্রিকা: কিন্তু সাত বছর পর অভিনেত্রীর কামব্যাক হচ্ছে রবীন্দ্রসঙ্গীতের অ্যালবাম দিয়ে?
পল্লবী: এখন আমার হাতে পাঁচ থেকে ছ’টা ছবি রয়েছে। তার মধ্যে দু’টো ছবি মুক্তি পেয়েছে গত কালই২৩ সেপ্টেম্বর। গানটা আমার শখ... কিন্তু অভিনয়টা প্যাশন।
পত্রিকা: আপনার ঘরে দেখছি আর ডি বর্মনের অনেক ছবি। কোনও দিন মনে হয়নি আর ডি বর্মনের সুরে গান গাই?
পল্লবী: না, সে রকম মনে হয়নি, কিন্তু এটুকু বলতে পারি, আজ যদি আমি প্রযোজক হতাম আমি যে কোনও মূল্যে আর ডি বর্মনকে সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে নিতাম... নিতামই।
পত্রিকা: আপনার বাবার প্রোডাকশনের ছবি ‘কহেতে হ্যায় মুঝকো রাজা’তেও সুর দিয়েছিলেন আর ডি...
পল্লবী: হ্যাঁ। সুর দিয়েছিলেন তো। শুধু তাই নয়, এটা নিয়ে আপনাকে একটা মজার গল্প বলি। ছবি শুরু করার আগে বাবা খুব দোটানায় ছিলেন। বুঝতে পারছিলেন না কাকে সুরকার হিসেবে নেবেন, এল পি (লক্ষ্মীকান্ত প্যারেলাল), নাকি আর ডি। আর তখন তো আমি খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে বসে আছি, আর বায়না করছি যেন আর ডি-কে দিয়েই মিউজিক করানো হয়। আর ডি-ই সুর করলেন। কিন্তু প্রথম গানটা শুনেই বেজায় মনখারাপ হয়ে গেল আমার। গানের কথায় শব্দগুলো ছিল বাম চিক, বাবা চিক। ভাবতে পারবেন না, আমার সে কী মনখারাপ! গানের কথায় কেন শুধু দাদার নাম আছে, কেন আমার ডাকনাম মাকু নেই। বাবার কাছে গিয়ে ভীষণ বায়না করলাম। আর ডি নতুন করে শব্দ বসিয়ে গান রেকর্ড করলেন। তাতে শব্দ বসানো হল এই ভাবে: ‘বাম বাম মাকু, বাম বাম মাকু’। আমরা এতটাই ক্রেজি ছিলাম আর ডি-র ব্যাপারে।
পত্রিকা: আর ডি নিয়ে আপনার উন্মাদনাটা ভালই বুঝতে পারছি। কিন্তু একটা কথা বলুন, কার নামে বেশি ক্রেজি আপনি। বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়, না অরুণ চট্টোপাধ্যায়?
পল্লবী: অরুণ চ্যাটার্জি? কে অরুণ?
পত্রিকা: অরুণ চ্যাটার্জি, ‘অটোগ্রাফ’ ছবির নায়ক। যে চরিত্রে অভিনয় করেছেন আপনার দাদা।
পল্লবী: হা হা হা হা। এটুকুই বলতে পারি, আমার চিরকালের প্রিয় হলেন বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়। আমি বড্ড বেশি করে আমার বাবার মেয়ে। আর দাদা বরাবরই ছিল মায়ের কোল ঘেঁষা। |
|
পত্রিকা: আপনার কামব্যাক হচ্ছে আবার। টালিগঞ্জের যে মানুষটির মস্তিষ্ক কর্পোরেট বুদ্ধিতে সবচেয়ে তুখোড়, সেই প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় আপনার দাদা এবং তাঁর বাড়ির থেকে আপনার বাড়ির দূরত্ব এক কিলোমিটারেরও কম। কামব্যাকের ব্যাপারে ওঁর সঙ্গে আলোচনা করেননি?
পল্লবী: না, কেরিয়ারের ব্যাপার নিয়ে আমি কোনও দিন দাদার সঙ্গে আলোচনা করিনি। আসলে কেরিয়ারের সব ব্যাপারেই দাদা যদি পূর্ব হয়, আমি তা হলে পশ্চিম। ও কোন ছবি করছে, তা আমি জানিও না। আসলে খুব ছোটবেলা থেকেই আমরা আমাদের কেরিয়ারগুলোকে সুন্দর ভাবে আলাদা করে নিয়েছিলাম।
পত্রিকা: শেষ ভাইফোঁটা কবে দিয়েছেন দাদাকে?
পল্লবী: ভাই... (নীরব) এই প্রশ্ন
থাক না।
পত্রিকা: আপনার ‘কামব্যাক’ নিয়ে নানা রকম কথা শোনা যাচ্ছে। কী কী কাজ করছেন?
পল্লবী: ‘প্রেমের কথাকলি’ বলে একটা ছবিতে অভিনয় করছি। ‘কেলোদা ইন কাশ্মীর’ ছবিতে আছি। মৈনাক ভৌমিকের ‘বেডরুম’-এও। নতুন এক পরিচালকের সঙ্গে ‘প্রেমপ্রীতি’ নামে একটা ছবিতে কাজ করছি। ‘ছুটির ফাঁদে’ ছবিটাও আছে। অরিন্দম শীল একটা ছবির জন্য ডেকেছে। অনেকগুলো প্রোজেক্টের কাজ রয়েছে এই মুহূর্তে। আসল কথা, আমি এখন যেমন নতুন পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করতে চাই তেমনি হরদা, স্বপনদা, সুজিতদা, প্রভাত রায়ের সঙ্গেও কাজ করার ইচ্ছে আছে।
পত্রিকা: আর গানের অ্যালবামটা?
পল্লবী: আটটা গান থাকবে। রবীন্দ্রসঙ্গীত। নাম হচ্ছে ‘পরশমণি’। অ্যালবামটা বের হচ্ছে ‘পার্পল মিউজিক’ থেকে।
পত্রিকা: পল্লবী-১-এর কামব্যাক আর এই পল্লবী-২-এর মধ্যে তফাত কী?
পল্লবী: পল্লবী-১ সব সময় কাজ নিয়ে থাকত, আর কাজের বাইরে কিছু ভাবত না। পল্লবী-২ অনেক পোড়খাওয়া। সে জানে হোয়াট ইজ হোয়াট। তার চোখে কোনও মায়াকাজল নেই।
পত্রিকা: এ বারে কামব্যাকে কী দেখাতে চাইছেন?
পল্লবী: এর আগে কখনও আমার কেরিয়ার প্ল্যানিং করতে পারিনি। দশ পনেরো বছর কাজ করে শুধুই ভাল অভিনেত্রীর পরিচিতি পেয়েছি। এবার আমার জার্নি, ভাল অ্যাক্টর থেকে ধারাবাহিক অ্যাক্টর হওয়ার। যে জার্নিতে উত্তীর্ণ হয়ে আমি বোঝাতে পারব যে আমি ভাল অভিনয় শুধু করতেই আসিনি, থাকতে এসেছি। এত দিনে বুঝে গেছি প্রোডাকশন করাটরা আমার দ্বারা হবে না। এ বার অভিনয়ে ফুলটাইম।
পত্রিকা: এই যে ‘কামব্যাক’ করছেন, তাতে আপনার গডফাদার কে?
পল্লবী: আমার কোনও গডফাদার কোনও দিন ছিল না, আজও নেই।
পত্রিকা: সে কি! কামব্যাক করছেন অথচ গডফাদার নেই?
পল্লবী: না, নেই। আমার কিছু খুব কাছের বন্ধুবান্ধব আছে। তারাই আমার শক্তি। আমার এই স্ট্রাগল, এই জার্নিতে তারাই আমার সবচেয়ে কাছের জন।
পত্রিকা: পাওলি দামের ভিডিও ক্লিপ নিয়ে চারদিকে সাড়া পড়ে গেছে। প্রত্যেকেই কিছু না কিছু মতামত দিচ্ছে। আপনি কী বলছেন?
পল্লবী: একজন অভিনেতা কোথায় লাইন ড্র করবে সেটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। কারও যদি ইনহিবিশন না থাকে, সামাজিক সমস্যা না থাকে তা হলে সে করেছে বেশ করেছে। তার নিজের যদি সমস্যা না থাকে তা হলে অন্যদের সমস্যা হচ্ছে কেন? ফিল্মে আমি নিজে বেশ কিছু সাহসী দৃশ্য করেছি। কিন্তু এটা ঠিক, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ডিরেক্টর বললেও আমি ন্যুড সিন করতে পারতাম না। আমার দ্বারা জাস্ট হত না।
পত্রিকা: তা হলে নিশ্চয়ই পাওলিকে অভিনন্দন জানিয়ে এসএমএস করেছেন?
পল্লবী: হা হা মেয়েটার গাটস আছে বটে। এত বছর ধরে আমরা কেউ যা পারিনি, দেবশ্রী, ইন্দ্রাণী, ঋতুপর্ণা, রচনা কেউ যা পারেনি তাই ও করে দিল। যদি এর পেছনে ফন্দি থেকে থাকে, দর্শকের আকর্ষণ জাগিয়ে দেওয়ার তা হলে সেই লক্ষ্যে ওরা সফল। শুধু একটা কথা ওদের ভাবতে হবে।
এক্সাইটমেন্ট জাগানো তো হল এ বার সেটা ধরে রাখা যাবে তো? ন্যুড সিন তো হয়ে গেল। নেক্সট হোয়াট? আর কী করবে? আরেকটা জিনিস মনে হচ্ছে, বাংলা ছবিতে আসা থেকে শুরু করে ছোটবেলা সর্বত্র একটা কথা শুনে বড় হয়েছি লজ্জা নারীর ভূষণ। সেটা যেন কেমন গুলিয়ে যাচ্ছে। |
|
|
|
|
|