মনোরঞ্জন ১...
প্রথা ভাঙা প্রসেনজিৎ
রুণ চ্যাটার্জি এ বার কী করবেন?
আগের বার ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত তাঁকে ধোঁকা দিয়েছিলেন। সে ছবিতে অবশ্য রক্তের ছিটে ছিল না। কিন্তু খুন তো ছিলই। সেখানে বিশ্বাস খুন হয়েছিল উচ্চাকাঙ্ক্ষার কাছে।
আর এবারে তো পরতে পরতে খুন। কিন্তু খুনি কে?
তাই নিয়েই ‘২২শে শ্রাবণ’। শুধু খুন নয়, তার সঙ্গে জড়িয়ে মড়িয়ে থাকা কবিতাও। হাজার হোক, ‘২২শে শ্রাবণ’ নামটাই তো কবিতার সঙ্গে জড়িয়ে। আবার মৃত্যুর সঙ্গেও। রবীন্দ্রনাথ তো এদিনই চিরকালের জন্য চোখ বুজেছিলেন। কবিতা আর মৃত্যু তাই ‘২২শে শ্রাবণ’-এর জগতে স্বাভাবিক। কিন্তু অন্য ভাবে। এখানে মৃত্যু মানে খুন। আর কবিতা হল ধাঁধা।
কবিতা আর খুন, একাকীত্ব আর ক্রাইম-- এই জড়াজড়ি করে বাঁচাটাই হল ‘২২শে শ্রাবণ’। এই শহরের প্রতিদিনের বাঁচার মতোই। সে কারণেই ক্রাইম থ্রিলার ‘২২শে শ্রাবণ’-এ খাপে-খাপে বসে যায় একাকীত্বের গান‘গভীরে যাও, আরও গভীরে যাও...”। সে কারণেই সেই গান রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে যায় এই শহরের কোণে, কোণে মুখে, মুখে, ফেসবুকের ওয়ালে, ওয়ালে, বিবিএম-এর স্টেটাসে, স্টেটাসে।
আর এই একাকীত্বে নিজেকে মুড়ে রাখেন যিনি, ‘এক্স-কপ’ প্রবীর রায়চৌধুরী, এখন চাকরিচ্যুত, স্ত্রী-সন্তানহীন, তিক্ত, তিনি আবারও প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। ‘অটোগ্রাফ’-এ না হয় ছিল নিজের জীবনের কিছু কিছু ছাপ। ‘মনের মানুষ’-এ ছিল লালনের মতো চরিত্রে অভিনয় করে অবিস্মরণীয় হবার হাতছানি। ‘২২ শে শ্রাবণ’-এ কী ছিল? শুধুই একই ‘হিট’ পরিচালকের সঙ্গে আবারও কাজ করার হাতছানি? “মোটেও তা নয়। এই চরিত্রটার মধ্যে এমন একটা চ্যালেঞ্জ ছিল, যা বাংলা সিনেমায় সহজে পাব না,” বলছেন প্রসেনজিৎ। “হলিউডি ছবিতে ডাস্টিন হফম্যান, জ্যাক নিকলসনরা যে রকম চরিত্র করতে পারেন, সে রকম একটা চরিত্র হল প্রবীর রায়চৌধুরী।” হলিউডের পোকা প্রসেনজিৎ বলছেন, “এটাই তো মজা। যে স্বাদটা হলিউড দেয়, সেই স্বাদটা ‘২২ শে শ্রাবণ’ দিয়েছে।”
কী রকম সে স্বাদ? থ্রিলারের ধাঁই ধাঁই গতি। একের পর এক খুন হচ্ছে শহরে, আর খুনির কিনারা করতে হন্যে হয়ে যাচ্ছে পুলিশ ডিপার্টমেন্ট। কেসের চার্জে থাকা ডিটেকটিভ ডিপার্টমেন্টের ইন্সপেক্টর অভিজিৎ পাকড়াশী (পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়) কিছুতেই সুবিধে করতে পারছে না। আর তখন তার বস ফিরিয়ে নিয়ে আসছে সাসপেন্ড হয়ে যাওয়া পুলিশ অফিসার প্রবীরকে। সেই প্রবীরযাকে ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে ছবির বাকিটা।
কিন্তু তাই বলে প্রবীরের ওপরই যে সারাক্ষণ ক্যামেরা তা কিন্তু নয়। সেটাই বলছিলেন প্রসেনজিৎ। “‘অটোগ্রাফ’-এও তো ফোকাসটা আমার ওপর ছিল না। এখানেও আমার থেকে পরমব্রতর স্ক্রিন টাইম বেশি। কিন্তু মজাটা হল সৃজিত যে ভাবে আমার দিকে দুর্দান্ত সব চরিত্র ছুঁড়ে দেয়, সেটাই আমার ভাল লাগে।”
আর পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “বুম্বাদার ‘লার্জার দ্যান লাইফ’ ইমেজটা ব্যবহার করতে চেয়েছি এখানে।”
সত্যিই ‘লার্জার দ্যান লাইফ’। আবারও ঠিক ‘অটোগ্রাফ’-এর মতোই প্রসেনজিৎ মধ্যিখানে, অথচ তিনি নায়ক নন। তা হলে এই ছবির নায়ক কে? ‘২২শে শ্রাবণ’-এর রহস্য-রোমাঞ্চ সিরিজে এটাও আরেক রহস্য। সেই সব রহস্যের কিনারা করবেন যিনি, সেই পরমব্রতর কী রকম লাগছিল এই প্রথম, ক্যামেরার সামনে ‘বুম্বাদা’র মুখোমুখি হতে? হাজার হোক, ছবিতে প্রবীরের ‘নায়িকা’ যদি কেউ থাকে, তা হলে সে তো অভিজিৎ পাকড়াশিই।
“আমার না ও রকম কখনও মনে হয় না। বুম্বাদাকে অনেক দিন ধরে চিনি। শ্রদ্ধা করি। তবে একসঙ্গে কাজ করতে পেরে আই ফিল রিয়েলি লাকি। আর অভিনয়ের কথা যদি বলেন, তা হলে বলব আমি স্রেফ সৃজিতের ব্রিফটা ফলো করে গিয়েছি,” বলছেন পরমব্রত। “তবে অভিজিৎ পাকড়াশী চরিত্রটায় একটা মোচড় ছিল। ও অনেকটা আমি, আবার অনেকটা নয়। সেটাকে ঠিকঠাক ফুটিয়ে তোলাটাই ছিল চ্যালেঞ্জ।” তবে সে চ্যালেঞ্জটায় পরমব্রত বেশ উতরেছেন। সত্যি বলতে কী, অভিজিৎ পাকড়াশী এখনও পর্যন্ত পরমব্রতর সবচেয়ে ভাল কাজ হয়েই থাকবে। এ ছবিতে যদি প্রসেনজিতের প্রতিযোগী কেউ থাকে, সে তিনিই। ‘অটোগ্রাফ’-এ ইন্দ্রনীল সেনগুপ্তর চরিত্রটা করার কথা ছিল তাঁর। দেশের বাইরে পড়তে যাওয়ার জন্য করা হয়ে ওঠেনি। ‘২২শে শ্রাবণ’-এ সেটা সুদে-আসলে উশুল করে নিয়েছেন পরমব্রত।
আসলে ‘ইয়াপ্পি’ জেনারেশনের এই ছবিতে কেউই নায়ক নন। নায়িকাও নন। ঠিক আমাদেরই মতো। এক-একটা দ্বীপের মতো বেঁচে থাকা মানুষ। যাঁরা যে কেউই নায়ক হতে হতেও হতে পারেন না আসলে। বাংলা বাণিজ্যিক সিনেমার নায়ক-নায়িকার আবর্তে আটকে থাকা প্রাতিষ্ঠানিক সংজ্ঞাটাকেই উল্টেপাল্টে দেয় এই ছবি।
আর এখানেই অমোঘ মোচড়। যে মোচড়ে এ ছবির পরতে পরতে মিশে যায় বাংলার আরেকটা প্রতিষ্ঠান-বিরোধী যুগও। ষাটের দশকের ক্ষুধিত কবিদের যুগ। যাঁদের সেই সময় প্রতিষ্ঠানই নিষিদ্ধ করেছিল অশ্লীলতার দায়ে। সেই ক্ষুধিত কবিদের দ্বারাই প্রভাবিত নিবারণ চক্রবর্তীযাঁর কবিতার বই ছেপে বেরোবে বলে কথা দেন কোনও এক রবীন্দ্রনাথ। ‘গৃহযুদ্ধ’-র ২২ বছর পর সেই নিবারণ সেজেছেন পরিচালক গৌতম ঘোষ। এমনকী ছবির জন্য সেই ‘হাংরিয়ালিস্ট’ কবিদের ঘরানায় নিজে রচনা করেছেন একটা গোটা কবিতা। কতটা খাটতে হয়েছিল তাঁকে নিবারণের জন্য ? “খুব একটা নয়,” বলছিলেন গৌতম। “এঁদের অনেককে যুবা বয়সে চিনতাম। খানিকটা স্মৃতি রোমন্থন, খানিকটা তাঁদের কবিতা পড়াহয়ে গিয়েছিল।”
নিবারণ চক্রবর্তী‘শেষের কবিতা’র অমিত রায়ের ছদ্মনাম। এ নামেই তিনি লিখতেন। রবীন্দ্রনাথ আবারও। “একটা ক্যাচ আছে ওখানেওকিন্তু সেটা খুব হালকা,” জানাচ্ছেন সৃজিত। ‘২২শে শ্রাবণ’ থেকে ‘শেষের কবিতা’।
শুধু একটা কথাই বলার। ‘অটোগ্রাফ’-এর মসৃণতা এখানে নেই।
কিন্তু নিবারণের চরিত্রে গৌতমই কেন? অন্য কাউকে মানাত না? “আসলে চেয়েছিলাম এমন কাউকে, যিনি সেই সময়টাকে দেখেছেন। আবার আদ্যোপান্ত একজন বাঙালিও। গৌতমদা সেখানে খাপে, খাপে এঁটে যান,” জানাচ্ছেন সৃজিত।
টালি মহলে তো জোর গুজব সেই নিবারণই নাকি খুনি।
সত্যি তাই?
সে রহস্যের না হয় কিনারা হোক ৩০ সেপ্টেম্বর সিনেমা হলেই। সে দিনই আবার প্রসেনজিতের জন্মদিন। এই প্রথম তাঁর কোনও ছবি তাঁর জন্মদিনে মুক্তি পাচ্ছে। জন্মদিনের সেরা উপহারটা তিনি বক্স অফিস থেকে পাবেন কি না, তা জনতে অপেক্ষা আর এক হপ্তার।

কী টানবে
• প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের প্রথাভাঙা অভিনয়। হলিউডি ছবি যে
ভদ্রলোক ভালই দেখেছেন, তার প্রমাণ পরতে, পরতে।
• গান। এখনই সুপারহিট। কিন্তু অনুপম রায়ের কাছে কোনও ব্রিফ ছিল
না। আগের লেখা থেকেই ঝেড়েবেছে নিয়েছেন সৃজিত। অথচ
খাপে-খাপে লেগে গেছে। এবং গানের চিত্রায়ণ।
• পরমব্রতর শ্রেষ্ঠ কাজ এখনও পর্যন্ত। আর তার পাশাপাশি,
আবীর চট্টোপাধ্যায়ের অভিনয়। চার পুরুষের মধ্যে সবচেয়ে
ছোট রোল। তবু ফাটিয়ে দিয়েছেন।
• রাইমার উপস্থিতিদমবন্ধ টেনশনের মধ্যে মাঝে মাঝেই বাতাসের ঝলক।
• চিত্রনাট্য। যার গুণে ছবির শেষের মোচড়টা অন্য মাত্রা পায়।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.