লোধা সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষের অবস্থার উন্নয়নে এ বার তাঁদের বসতি-এলাকাতেই লোধা-কেন্দ্র খুলবে রাজ্য সরকার। ৮টি থেকে ১০টি লোধা-কেন্দ্র খোলা হবে। শুক্রবার দু’টি লোধা-গ্রাম পরিদর্শন করেন অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ মন্ত্রী উপেন বিশ্বাস। মেদিনীপুর সার্কিট হাউসে জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকও করেন। জেলাশাসককে লোধা-সেন্টার তৈরির নির্দেশ দেন। মন্ত্রী বলেন, “পুজোর পরেই প্রকল্প-রিপোর্ট তৈরি করে আমার কাছে পাঠাতে বলেছি। রিপোর্ট পেলেই ৭ দিনের মধ্যে তা মঞ্জুর করা হবে।”
লোধা উন্নয়নের কোটি কোটি টাকা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় পড়ে রয়েছে। কাজ সে ভাবে হচ্ছে না বলে অভিযোগ। এমনকী কাজ হলেও তা লোধাদের প্রয়োজনে লাগছে না বলে মত খোদ মন্ত্রীর। যেমন, ১ লক্ষ টাকার বাড়ি। ছোট জায়গায় দু’টি ঘর তৈরির কথা। মন্ত্রী বলেন, “লোধাদের থাকার জন্য যেমন ঘরের প্রয়োজন। তেমনই তো গরু, ছাগল রাখা, রান্না করার ঘরেরও প্রয়োজন। কিন্তু তা
হচ্ছে না। এ বার এ সব নিয়েও ভাবতে হবে।” |
আর সে কারণেই লোধা-উন্নয়ন সেন্টার। যেখানে লোধা সম্প্রদায়ের মানুষজনকেই স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে নিয়োগ করা হবে। ২ জন বা ৩ জন করে স্বেচ্ছাসেবক থাকবেন। কেন্দ্রটিও হবে লোধা-বাড়ির মতো। মাটির দেওয়াল, খড়ের বা টালির ছাউনি। চাটাই পেতে সবাই বসবেন। সবাই আলোচনা করেই ঠিক করবেন কোন গ্রামে কোন কাজটা হলে সবার উপকার হয়। মন্ত্রীর কথায়, “একটি গ্রামে দেড়শো মানুষের বাস। সেখানে দেখা যাচ্ছে ২৫ জনকে বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হল। বাকিরা কেন বাড়ি পাবে না? সরকার তো সব এক সঙ্গে করতে পারে না। তাতে লোধাদের মধ্যেই একটা সমস্যা হচ্ছে। তাই ওঁদের নিজেদের ভিতর থেকেই উন্নয়ন-প্রস্তাব উঠে এলে ভাল হয়।” ওই কেন্দ্রগুলির স্বেচ্ছাসেবকেরা উন্নয়ন-প্রস্তাব বিডিওকে জানাবেন। তার পর তা সরকারের কাছে যাবে। স্বেচ্ছাসেবকদের ন্যূনতম পারিশ্রমিকও দেওয়া হবে বলে মন্ত্রী জানিয়েছেন।
মন্ত্রী জানান, সম্প্রতি লোধাদের নিয়ে সমীক্ষা করেছে রাজ্য সরকার। অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক অবস্থা, শিক্ষার মান-সহ বিভিন্ন দিক সমীক্ষায় জোর পেয়েছে। মন্ত্রী জানান, ঝাড়গ্রামের জাড়ালাটা, বিনপুর-১ ব্লকের ঝিটকা ও মেদিনীপুর সদর ব্লকের মুচিবেড়িয়া--এই তিনটি গ্রামে সমীক্ষা করা হয়। সমীক্ষা থেকে উঠে এসেছে, সাধারণ সম্প্রদায়ের থেকেও লোধারা কিছু বিষয়ে এগিয়ে। যেমন নারী-পুরুষ অনুপাত। লোধাদের ১ হাজার পুরুষ পিছু ৯৮০ জন মহিলা। যেখানে সাধারণ ক্ষেত্রে ১ হাজার পুরুষ পিছু ৯৩৪ জন মহিলা। আবার পরিবারের পরিধিতেও লোধারা এগিয়ে। লোধাদের পরিবারের পরিধির গড় ৩.৭৭ জন। সাধারণ ক্ষেত্রে তা ৫.০৫ জন। তাঁদের সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যের কথাও লোধাদেরমনে করিয়ে দিতে হবে বলে মন্ত্রী জানান। |