কঙ্কাল কাণ্ডে মোট অভিযুক্ত ৫৮
সুশান্তকে সরাসরি দায়ী করে চার্জশিট
দাসেরবাঁধের কঙ্কাল-কাণ্ডে জেলবন্দি প্রাক্তন মন্ত্রী তথা বর্তমান বিধায়ক সুশান্ত ঘোষকে সরাসরি দায়ী করেই চার্জশিট দিল সিআইডি। সুশান্তবাবু-সহ অভিযুক্ত করা হয়েছে মোট ৫৮ জনকে। চার্জশিটে রাজ্য গোয়েন্দা সংস্থার দাবি, কেশপুরের পিয়াশালায় ২০০২-এর ২২ সেপ্টেম্বর গণহত্যার দিন লোকজন জড়ো করেছিলেন সুশান্তবাবুই। নিজেও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। পরে নিহতদের দেহগুলি সুশান্তবাবুর বেনাচাপড়ার বাড়ির কাছে দাসেরবাঁধে নিয়ে গিয়ে মাটি খুঁড়ে পোঁতা হয়। সে সময়েও হাজির ছিলেন এই সিপিএম নেতা। প্রাক্তন মন্ত্রীর এই ‘উপস্থিতি’র প্রমাণ হিসাবে তাঁর গাড়ির কল-বুকের তথ্য চার্জশিটের সঙ্গেই পেশ করেছে সিআইডি।
সিআইডির ডিআইজি (অপারেশন) কে জয়রামনের বক্তব্য, “নির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে আপাতত ৫৮ জনের নাম রাখা হয়েছে চার্জশিটে। সংঘর্ষ, অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, অবৈধ প্রবেশ, অপহরণ, খুনের চেষ্টা, খুন এবং তথ্যপ্রমাণ লোপের নির্দিষ্ট ধারায় চার্জশিট দেওয়া হয়েছে।” বৃহস্পতিবারই পিয়াশালা-গণহত্যার নবম বার্ষিকী পালন হয়েছে। ঠিক তার পর দিনই মেদিনীপুর সিজেএম মনোজ রাইয়ের আদালতে চার্জশিট দিল সিআইডি। ন’বছর আগে প্রথম বার যখন মামলা দায়ের হয়েছিল, জেলা পুলিশ কিন্তু তদন্ত করে অভিযোগ খারিজই করে দিয়েছিল। তৃণমূল কর্মীদের ‘গুমখুনে’ অভিযুক্ত সিপিএম নেতা-কর্মীরা তখন খালাস পেয়ে যান। রাজ্যে পালাবদলের পর জুনের গোড়ায় দাসেরবাঁধে হাড়গোড় উদ্ধারের পরে নতুন করে শুরু হয় মামলা। ওই হাড়গোড় পিয়াশালায় হামলার পর থেকে নিখোঁজ তৃণমূল কর্মীদের বলেই দাবি ওঠে। তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় সিআইডিকে। তদন্তভার হাতে নেওয়ার ৮৮ দিনের মধ্যেই চার্জশিট দিল সিআইডি। এফআইআরে ৪০ জন সিপিএম নেতা-কর্মীকে অভিযুক্ত করা হয়। তার বাইরেও ১৮ জনের নাম পেয়েছে সিআইডি, যারা হত্যা ও দেহ লোপাটের সঙ্গে যুক্ত বলে চার্জশিটে দাবি করা হয়েছে। তাই ৫৮ জনের নামেই চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। এই মুহূর্তে সুশান্তবাবু-সহ ১৬ জন জেলে বন্দি। বাকি ৪২ জনই ‘ফেরার’। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য তথা কৃষকসভার রাজ্য সম্পাদক তরুণ রায়, কেশপুরে দলের জোনাল কমিটির সদস্য এন্তাজ আলি, কেশপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তড়িৎ খাটুয়া, সুশান্তবাবুর ভাই প্রশান্ত ঘোষও। ফেরারদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার জন্য এ বার আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছে সিআইডি। তদন্ত এখনও চলছে এবং প্রয়োজনে সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট দেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারী অফিসার পূর্ণশিব মুখোপাধ্যায়।
চার্জশিটে অভিযুক্ত-তালিকায় বিশ্বরূপ ঘোষের নাম থাকায় শোরগোল পড়েছে। বিশ্বরূপবাবুর বাড়ি পিয়াশালাতেই। এক সময়ে এলাকায় সিপিএমই করতেন। তবে এ বার রাজ্যে পালাবদলের সম্ভাবনা দেখে বিধানসভা ভোটের মুখে তৃণমূলে যোগ দেন। এখন বিশ্বরূপবাবু এলাকায় তৃণমূলেরই সক্রিয় নেতা। তাঁর বাড়িতে দলের কার্যালয়ও খোলা হয়েছে। তবে গত কয়েক দিন ধরে তাঁকে এলাকায় দেখা যাচ্ছে না বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। তাঁকে চার্জশিটে ‘ফেরার’ বলেই উল্লেখ করেছে সিআইডি। তদন্ত-সংস্থার এক অফিসারের দাবি, “তদন্তে রাজনীতির রং দেখা হয়নি। গণহত্যার ঘটনায় যাঁরা জড়িত, চার্জশিটে তাঁদের নামই রাখা হয়েছে।” চার্জশিটে দলীয় কর্মীর নাম থাকায় বিড়ম্বনায় তৃণমূল। দলের কেশপুর ব্লক সভাপতি চিত্ত গড়াইয়ের অবশ্য দাবি, “আইন আইনের পথেই চলবে। বিশ্বরূপ ক’মাস আগেও সিপিএমই করতেন। তবে শুনেছি, ভোটের সময়ে আমাদের জোট-প্রার্থীর হয়ে প্রচার করেছেন।”
এ দিন ২২ পাতার মূল চার্জশিটের সঙ্গে আরও প্রায় ৩ হাজার পাতার নথি আদালতে পেশ করেছে সিআইডি। তাতে ১১৩ জন সাক্ষীর বয়ান থেকে শুরু করে হাড়গোড়ের ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্ট (পিয়াশালার নিখোঁজদেরই দেহাবশেষ বলে প্রমাণও মিলেছে), সুশান্তবাবুর গাড়ির ‘কল-বুক’--সবই রয়েছে। এই মামলায় বিচারকের কাছে ৭ জনের গোপন জবানবন্দিও নথিভুক্ত হয়েছে। তাঁদের মধ্যে জেলবন্দি মদন সাঁতরা, বৈদ্যনাথ সাঁতরা ও শিবরাম সিংহ যেমন রয়েছেন, তেমনই রয়েছেন ‘প্রত্যক্ষদর্শী’ অরূপ ঘোষ, রাম সানি, গোবিন্দ মাঝি ও অজিত দাস। গোবিন্দবাবুর বাড়িতেই সে দিন ‘ঘরছাড়া’ তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা জড়ো হয়েছিলেন। জেলবন্দি মদন-বৈদ্যনাথকে রাজসাক্ষী করতে চেয়ে আদালতে আর্জি জানিয়েছে সিআইডি। সোমবারই রয়েছে সে ব্যাপারে শুনানি। গণহত্যায় সুশান্তবাবুর সরাসরি যুক্ত থাকার প্রমাণ হিসেবে প্রত্যক্ষদর্শীদের জবানবন্দির সঙ্গে তাঁর গাড়ির কল-বুকও ‘অস্ত্র’ সিআইডির। সিআইডি সূত্রের দাবি, ‘কল-বুক’ থেকেই প্রমাণ হচ্ছে সুশান্তবাবু ঘটনার দিন জেলায় ছিলেন। জেরার সময়ে প্রাক্তন মন্ত্রী প্রথমে বলেছিলেন, বাবা অসুস্থ থাকায় সে দিন তিনি ছিলেন কলকাতায়। যে দু’টি গরুর গাড়িতে সে দিন নিহতদের দেহ বহন করে দাসেরবাঁধে নিয়ে যাওয়া হয়, তাও বাজেয়াপ্ত করেছে সিআইডি। তবে গণহত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্রের খোঁজ এখনও মেলেনি। তাই চার্জশিটে অস্ত্র আইনের কোনও ধারার উল্লেখ নেই।
সূত্রের খবর, ঘটনার সঙ্গে জড়িত হিসেবে বিজয় মণ্ডল নামে আর এক সিপিএম কর্মীর নাম পেয়েছিল সিআইডি। তিনি মারা যাওয়ায় আর চার্জশিটে নাম রাখা হয়নি। সে দিন ৭ তৃণমূল কর্মী নিহত হন। দু’জনের দেহ উদ্ধারও হয় ক’দিন পরে। আর এ বছর দাসেরবাঁধে অন্য ‘নিখোঁজ’দের দেহাবশেষ উদ্ধার হয় বলে দাবি। ঘটনার দিন আরও ৯ জন তৃণমূল কর্মীকে সিপিএমের লোকজন বেধড়ক মারধর করেছিল বলে জানতে পেরেছে সিআইডি। তাঁদের সে সময়ে হাসপাতালে ভর্তি করাও হয়েছিল। পরে সেই আহতদের নামে পুলিশের কাছে গোলমালের অভিযোগ করেছিল উল্টে সিপিএমই। সেই ‘প্রহৃত’দের কয়েক জনকেও এ বার সাক্ষী করা হয়েছে।

কঙ্কাল-কাণ্ডে চার্জশিট


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.