উৎসবের আলো
সমানে সমানে টক্কর
পুজোর আর মাত্র কয়েক দিন বাকি। প্রতিমা গড়া প্রায় শেষ। কুমোরটুলিতে চলছে তুলির শেষ টান। রাজারহাটের পুর এলাকাকে টেক্কা দিতে নানা রকম থিম নিয়ে প্রস্তুত গ্রামীণ এলাকার পুজো কমিটিগুলিও। বাঁশের কেল্লা থেকে বেলুড় মঠ বা মহীশূর থেকে নেপালের স্থাপত্য, সবেরই দেখা মিলবে রাজারহাটের পঞ্চায়েত এলাকার পুজোগুলোয়।
প্রাচীন এক মন্দিরের আদলে এ বার মণ্ডপ গড়ছে আর বি-২ নং ছোট চাঁদপুর সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি। একটি নয়, মণ্ডপে দেখা মিলবে মোট দু’টি অসুরের। ওই পঞ্চায়েত এলাকারই জাগৃতি সঙ্ঘের পরিচালনায় নবগোষ্ঠী সর্বজনীন দুর্গোৎসবের থিমে এ বার দেখা মিলবে তিতুমীরের বাঁশের কেল্লার। টাঙ্গি, ঢাল, তির-ধনুক, বল্লমের মতো সব অস্ত্র দিয়ে মণ্ডপ সাজিয়ে তুলে ধরা হবে ওই সময়ের সাঁওতাল বিদ্রোহের পরিবেশ। দরমার উপর আঁকা থাকবে সাঁওতাল বিদ্রোহের নানা ছবি। প্রতিমা এখানে একচালার। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য, আলোকসজ্জায় ব্যবহার করা হবে হ্যারিকেন ও মশাল।
বাঁশ, কাপড়, থার্মোকল, প্লাস্টার অফ প্যারিস ও ডিসটেম্পার রঙের ব্যবহারে পাথরঘাটা পঞ্চায়েত এলাকার পাথরঘাটা সর্বজনীন দুর্গোৎসবের মণ্ডপ সেজে উঠছে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের আদলে। আলোকসজ্জায় ব্যবহৃত হবে রাইস টুনি। জ্যাংড়া হাতিয়াড়া ২নং পঞ্চায়েতের গৌরাঙ্গনগর অগ্রগামী সঙ্ঘের ২৬তম বর্ষের দুর্গোৎসবে অবশ্য কোনও থিম নেই, পুজো হচ্ছে এক্কেবারে সাবেক রীতিতে। উদ্যোক্তাদের কথায়, থিম না থাকলেও কমতি হবে না আড়ম্বরের। সাবেক রীতিতে স্থায়ী মণ্ডপে পুজো হচ্ছে চাঁদপুর পঞ্চায়েতের শিখরপুর সারির বাগান স্বেচ্ছাসেবক সঙ্ঘ এবং শিখরপুর সুকান্ত সাংস্কৃতিক সঙ্ঘে। অড়ম্বর সহকারে প্রথা মেনে সাবেক রীতিতে পুজো হবে রাজারহাট বিষ্ণুপুর ২নং পঞ্চায়েতের বিষ্ণুপুর মাঝেরপাড়া সর্বজনীন এবং জাতীয় সঙ্ঘেও।
স্থায়ী মণ্ডপ ঘিরেই বেলুড় মঠের আদলে তৈরি হচ্ছে রাজারহাট-বিষ্ণুপুর ১নং পঞ্চায়েতের কাঁজিয়ালপাড়া সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির মণ্ডপ।
৫২তম বর্ষে গোটা মণ্ডপ সাজিয়ে তোলা হবে থার্মোকলের বিভিন্ন নক্শায়। থাকবে ঝাড়বাতির আলোও। প্রতিমার সাজ এখানে জরি ও রাংতার, থাকবে সোনালি রঙের অস্ত্র।
রাজারহাট নৈপুকুর স্পোর্টিং ক্লাবের পরিচালনায় রেকজোয়ানি সর্বজনীন দুর্গোৎসবের মণ্ডপসজ্জায় ব্যবহার করা হচ্ছে মাদুরকাঠির শিল্প। থাকছে ডাকের সাজের প্রতিমা। ৫৩ তম বর্ষে রাজারহাট যুব সঙ্ঘ তাদের মণ্ডপসজ্জায় রাখছে পুরোপুরিসাবেকিয়ানার ছাপ। পুরোনো মন্দিরের আদলে নির্মিত মণ্ডপে রুপোলি জরির শিল্প নজর কাড়বে দর্শনার্থীদের। থাকবে এলইডি-র মৃদু আলোর ব্যবহারও।
মহীশূরের চামুণ্ডা মন্দিরের আদলে সেজে উঠছে রাজারহাট বিষ্ণুপুর ১নং পঞ্চায়েতের পশ্চিম ভাতেন্ডা দুর্গোৎসব কমিটির পুজো। প্লাইউড, প্লাস্টার অফ প্যারিস, থার্মোকল দিয়ে তৈরি ৮০ফুট উঁচু মণ্ডপে থাকবে চামুণ্ডা মূর্তির আদলে নির্মিত দুর্গাপ্রতিমা। এখানে অসুরের মাথা হবে মহিষের আদলে।
এ দিকে, ৬০তম বর্ষে নেপালি পরিবেশে ভৈরব মন্দিরের অনুকরণে তৈরি হচ্ছে রাজারহাট স্টেশন সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির। প্লাইউডের তৈরি এই মণ্ডপে দেখা মিলবে নানা রঙের শিল্পকলার। ভৈরব মূর্তির আদলে তৈরি প্রতিমার মুখ এখানে ভয়ঙ্কর। মণ্ডপের ভিতরে থাকবে বড় বড় ঘণ্টা। থাকবে বুদ্ধমূর্তি, মণ্ডপসজ্জায় থাকবে মাটির তৈরি সাপও। থাকবে একটি কুয়ো। আলোকসজ্জায় ব্যবহৃত হবে অসংখ্য মাটির প্রদীপ। এ ছাড়া মণ্ডপে থাকবে মানানসই শব্দের আবহ।
আর বি ১নং পঞ্চায়েতের বিষ্ণুপুর ফ্রেন্ড্স অ্যাসোসিয়েশনের পুজোর প্রতিমায় থাকছে খানিক বিশেষত্ব। অসুরের রক্ত থেকে জন্ম নেওয়া রক্তবীজ এখানে থাকবে প্রতিমার সঙ্গেই। থাকছে চারটি অসুর। ছোটদের জন্য আয়োজন করা হবে আর্ট গ্যালারির। মন্দিরের আদলে তৈরি হচ্ছে রাজারহাট সংলগ্ন বারাসত অঞ্চলের রাজবাটী অগ্রদূত সঙ্ঘের পুজোমণ্ডপ। সোনালি অলঙ্কার ও অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিতা দেবীমূর্তির সঙ্গে এখানে দেখা মিলবে দু’টি অসুরের।
গ্রামীণ এলাকার পাশাপাশি রাজারহাটের পুর-এলাকার পুজোগুলির আয়োজনও চূড়ান্ত পর্যায়ে। থিমের চমক এবং গতানুগতিকতার মেলবন্ধনে ওই পুজোগুলিও যথেষ্ট আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে বলে আশা পুজো কমিটিগুলির। নাটমন্দিরের আদলে তৈরি হচ্ছে পুরসভার ৮নং ওয়ার্ডের সলুয়া মিতালি সঙ্ঘের মণ্ডপ। ডাকের সাজ এবং সোনালি অস্ত্রশস্ত্রে সাজানো প্রতিমা নজর কাড়বে দর্শনার্থীদের। সঙ্গে থাকবে ঝাড়বাতি ও মেটালিক আলো। পুরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের চিনারপার্ক অধিবাসীবৃন্দর পুজোমণ্ডপ তৈরি হচ্ছে ধাতব তারের জাল দিয়ে। মণ্ডপের সামনে গেলে মনে হবে, ওই তার দিয়ে তৈরি দু’টি গরু যেন টেনে নিয়ে যাচ্ছে ছই লাগানো গরুর গাড়ি সমেত পুরো মণ্ডপটি। এখানে প্রতিমার গায়ে রঙের পরিবর্তে দেখা যাবে রংবেরঙের ঝিনুক ও শঙ্খের ব্যবহার। শুধু দুর্গাপ্রতিমাই নয়, তাঁর অস্ত্রশস্ত্র, অলঙ্কার, চালচিত্র, মহিষাসুর সবের মধ্যেই থাকবে ঝিনুক আর শঙ্খের তৈরি শিল্পের নিদর্শন।
চটের উপর পাটকাঠির কাজে তৈরি বিভিন্ন শিল্পকর্মে সাজানো হচ্ছে গোবিন্দনিবাস মিত্র সংসদের মণ্ডপ। দেখা মিলবে একচালার সাবেক প্রতিমার। মণ্ডপের ভিতরে ঝাড়বাতির আলো থাকলেও বাইরে থাকবে মানানসই রাইস ল্যাম্পের আলো। এ ছাড়া, আদিবাসীদের তৈরি বাঁশের নানা শিল্পের নিদর্শন চোখে পড়বে জ্যাংড়া বিবেকানন্দ কল্যাণ সমিতির পুজোমণ্ডপে। মন্দিরের আদলে তৈরি এই মণ্ডপে বাঁশ, বেড়া, কুলো, মালসা ইত্যাদি দিয়ে চমৎকার কারুকার্য থাকবে। মালসার ফাঁক দিয়ে মৃদু আলোর ব্যবহারও বেশ লক্ষণীয়। মণ্ডপের চারিদিকে থাকবে নানা ছবির ব্যবহার। মোটের উপর কুটির শিল্পকেই তুলে ধরা হবে এই মণ্ডপসজ্জার মধ্য দিয়ে।

ছবি: সুদীপ ঘোষ




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.