উৎসবের আলো
সেয়ানে সেয়ানে
কোনও পুজো হত না ওঁদের পাড়ায়। উৎসবের ক’দিন নিজেদের পাড়া অন্ধকারে রেখে অন্য পাড়ায় যেতে হত আনন্দ করতে। কিন্তু পুজোর সময় নিজেদের পাড়াটা এক্কেবারে ফাঁকা থাকলে ভাল লাগে নাকি? উদ্যোগী হলেন পাড়ার মহিলারাই। সিদ্ধান্ত হল, এ বার থেকে প্রতি বছর দুর্গাপুজো হবে পাড়ায়। এ প্রায় সাতাশ বছর আগের কথা। সেই থেকে পাড়ার মহিলাদেরই মিলিত সিদ্ধান্তে শুরু হয় সন্তোষপুরের সিক্স রোডের পুজো।
সন্তোষপুরের এই পুজোর প্রতিমা আসে কালীঘাটের পটুয়াপাড়া থেকে। বোধন থেকে বিজয়া সম্মিলনী, সমস্ত কিছুর আয়োজন করেন পাড়ার মহিলারাই। পুজোর আগে প্রতি সন্ধ্যায় দল বেঁধে চাঁদা তুলতে বার হন তাঁরা। অষ্টমীর দুপুরে প্রীতিভোজ, নবমীর সন্ধ্যায় মহিলাদের ধুনুচি নাচ ব্যবস্থা থাকে সবেরই। আর দশমীর সন্ধ্যায় লাল পাড় সাদা শাড়ি পরে প্রদীপ হাতে নিয়ে বেরোন মহিলারা। পাড়ার পুকুরেই হয় দেবীর বিসর্জন। শুধু পুজোর আয়োজনই নয়, প্রতি বছর একাদশীর দিনে বিজয়া সম্মিলনী উপলক্ষে আয়োজিত বিভিন্ন নাটকে অভিনয়ও করেন তাঁরা।
এ বারই প্রথম থিমের পুজো করছে রামকৃষ্ণ উপনিবেশের সেন্ট্রাল ক্লাব। তাদের পুজোর বয়স বাষট্টি। মণ্ডপ গড়া হচ্ছে চণ্ডীমণ্ডপের আদলে। মণ্ডপের ভিতরে আলো আর শব্দের খেলায় দেখানো হবে দুর্গার অসুর বধের দৃশ্য। বিশ্বশান্তি ও সবুজায়নকে থিম করে তৈরি এই মণ্ডপ সাজাতে ব্যবহার করা হচ্ছে মাটির তৈরি কিছু মডেল, পায়রা এবং বিভিন্ন ধরনের গাছ।
বাঁশের কঞ্চির টুকরোয় তৈরি বিভিন্ন মনীষীর ছবি দিয়ে মণ্ডপ সাজাচ্ছে সন্তোষপুর রাসমণিবাগান সর্বজনীন দুর্গোৎসব। মণ্ডপ গড়ার কারিগরেরা এসেছেন কৃষ্ণনগর থেকে। বাষট্টি বছরের পুরনো এই পুজোমণ্ডপে প্রতি বছর নবমীর দুপুরে পাড়ার বাসিন্দাদের নিয়ে বসে প্রীতিভোজের আসর।
এ দিকে, সুপুরি গাছের খোল, খেজুর গাছের ছাল, নারকেলের মালা, কাঠের গুঁড়ো, পাটের দড়ি দিয়ে শিবপুরাণের বিভিন্ন কাহিনি অবলম্বনে তৈরি করা হচ্ছে নানা ছবি। আর সেগুলি দিয়েই সাজানো হচ্ছে সন্তোষপুর এবং ই এম বাইপাস সংলগ্ন বাস্তুতলার রাজাপুর সর্বজনীন দুর্গোৎসবের মণ্ডপ। প্রতিমার সাজেও ব্যবহার করা হচ্ছে খেজুর গাছের ছাল এবং সুপুরির খোল। এ বারই প্রথম থিম দিয়ে নজর কাড়ার লড়াইয়ে নামল এই পুজো।
বাঘা যতীন চিত্তরঞ্জন কলোনির বিজয় সঙ্ঘের পুজোর এ বার ২৬ বছর। এই পুজোর মণ্ডপ হবে একটি গ্রামের আদলে। এ গ্রাম কুমোরদের। মণ্ডপে ঢুকলেই চোখে পড়বে কুমোরদের জীবনযাত্রার বিভিন্ন দৃশ্য। মণ্ডপেরই এক অংশে থাকবে বাউলদের আখড়া। নদীর পারে গ্রামের পরিবেশ তুলে ধরা হচ্ছে পাটুলি সংলগ্ন কেন্দুয়া শান্তি সঙ্ঘের পুজো মণ্ডপেও। প্রতিমা থাকবে নৌকোর উপরে।
বৈষ্ণবঘাটা বাইলেনের পশ্চিম পাড়ার সর্বজনীন দুর্গোৎসবের এ বার বাহান্ন বছর। তাদের মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে মন্দিরের আদলে। পুজোর তিন দিন দুপুরে মণ্ডপ থেকে একটু দূরেই পাড়ার বাসিন্দাদের জন্য খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
নেপালের এক মন্দিরের আদলে তৈরি হচ্ছে গড়িয়ার দীনবন্ধু এন্ড্রুজ কলেজ সংলগ্ন মিলনপার্ক অগ্রগামীর মণ্ডপ। ৬০তম বর্ষে এ বার তাদের প্রতিমা আসছে চন্দননগর থেকে। আলোকসজ্জাও চন্দননগরের।
পঞ্চাশতম বর্ষে পুরোপুরি সাবেকিয়ানার ছোঁয়া পাওয়া যাবে গড়িয়ার আতাবাগান মৈত্রী সঙ্ঘের পুজোমণ্ডপে। চার দিন ধরে চলবে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

ছবি: পিন্টু মণ্ডল




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.