|
উৎসবের আলো |
ইতিহাসের পুজো
পরম্পরার সঙ্গে মিশে আছে নানা জনশ্রুতিও। বারাসতের
দুই প্রাচীন পুজোর গল্প লিখলেনঅরুণাক্ষ ভট্টাচার্য |
|
শহরের দু’প্রান্তে দু’টি পুজো। ইতিহাসের পাতা থেকে উঠে আসা অনেক ঘটনার সাক্ষী পুজোদু’টি। বারোয়ারির পাশে এ দু’টিও ভিড় টানে বারাসতে।
শিবানন্দ রোডের গুহবাড়ির পুজোর শুরু ১৮৭৫-এ। ১৯৬১ পর্যন্ত বাংলাদেশের ফরিদপুরের লক্ষ্মীপুরে এই পুজো হত। পরের বছর থেকে শিবানন্দ রোডে হয়ে আসছে। পুজো শুরু করেন রসিকলাল গুহ। ষষ্ঠ প্রজন্মের পুজো করছেন সুমিত গুহ।
পরম্পরা মেনে পুরনো কাঠামোতেই পুজো হয়। প্রতিমা বসানোর চৌকিটিও একই রয়েছে। প্রতিমার দু’পাশে জয়া ও বিজয়া নামে দুই সখি রয়েছেন। পরম্পরা মেনে সাঁওতালরাই কাঁধে করে প্রতিমা বিসর্জনে নিয়ে যান। সপ্তমীতে পঞ্চব্যঞ্জনে অন্নভোগ, অষ্টমীতে পোলাওভোগ, নবমীর দিন খিচুড়িভোগ এবং বিসর্জনের আগে পান্তাভোগ দেওয়া হয়। পান্তা তৈরি হয় আতপ চাল দিয়ে। চাল সকালে ভিজিয়ে রাখা হয়। দুপুরে পাথরের থালায় সেই ভেজা চালের মধ্যে গন্ধরাজ লেবু মিশিয়ে তৈরি হয় পান্তা। সঙ্গে শাপলা ফুল ও শাপলার লতি সাজিয়ে দেওয়া হয়।
|
|
শিবের কোঠা |
দক্ষিণপাড়ার শিবেরকোঠায় যোধাবাঈয়ের পুজোর পরতে পরতে রয়েছে নানা জনশ্রুতি। তখন বারো ভুঁইয়ার রাজত্ব। আকবরের সময়ে মোগলরা প্রতাপাদিত্যকে প্রথমে হারাতে পারেনি। পরে অধুনা বাংলাদেশের যশোহরের ধুমঘাটে যশোরেশ্বরী কালীদর্শনের নাম করে জাহাঙ্গিরের সেনাপতি মানসিংহ প্রতাপাদিত্যের দুর্গের নকশা নিয়ে যান। পরে আক্রমণ করে মোগলরা জয়লাভ করে। প্রতাপাদিত্য এবং তাঁর সেনাপতি ও পরামশর্দাতা শঙ্কর চট্টোপাধ্যায়কে বন্দি করেন মানসিংহ। দিল্লি নিয়ে যাওয়ার পথে বেনারসে প্রতাপাদিত্য মারা যান। শঙ্করকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়।
|
|
গুহবাড়ি |
মোগলদের কারাগারে পিতৃতর্পণ করতে চাইলে শঙ্করকে অনুমতি দেওয়া হয় না। কারাগারে অনশন শুরু করেন শঙ্কর। তখন যোধাবাঈ তর্পণের অনুমতি দেন। শঙ্করের মন্ত্র শুনে মুগ্ধ হয়ে তিনি শঙ্করকে দুর্গাপুজো করার অনুরোধ করেন। শঙ্কর বলেন, আমি শৈব, শিব পূজা করি। দুর্গাপূজা করি না। এর পরে যোধা বলেন, বাড়ি ফিরে যাও। আমার নামে সংকল্প করে পুজো কর। আমি নিজে সেখানে যাব। সব খরচও দেব।
এর পরে ১৬০৭ খ্রিস্টাব্দে বারাসতে দেশের বাড়িতে এসে পুজো শুরু করেন শঙ্কর। যোধাবাঈ অবশ্য অসুস্থতার কারণে আসতে পারেন নি। কিন্তু তাঁর নামেই পুজোর সঙ্কল্প হয়। তিনি টাকাও পাঠিয়ে যান। শঙ্করের উত্তরসূরি গৌরীশঙ্করের আমলে পুজোর শ্রীবৃদ্ধি ঘটে।
|
|
একাদশ পুরুষ কিরণশঙ্কর চট্টোপাধ্যায় জানান, এখন প্রতিপদ থেকে নবমী পর্যন্ত নবরূপ চণ্ডীপাঠ হয়। ষষ্ঠীর দিন প্রতিষ্ঠিত শিবের মন্দিরে বেলতলায় হয় বোধন। প্রথমে শিবের পুজো, তার পরে দেবীর পুজো। কলাবউ কোনও নদী বা পুকুরে স্নান করে না, থালাতেই স্নান করানো হয়। আগে পশুবলি হলেও এখন কুমড়োবলি হয়। মহাষ্টমীতে পুষ্পাঞ্জলির পরে ধুনো পোড়ানো হয়।
|
ছবি: সুদীপ ঘোষ |
|