|
উৎসবের আলো |
বাড়ি-ধারা
কোথাও ‘বালভোগ’ তো কোথাও প্রতীকী বলি,
বাড়ির পুজোর রীতিবৈচিত্র খুঁজলেন গৌতম বসুমল্লিক |
|
|
মালঞ্চ-মাহীনগর ব্রহ্মচারীবাড়ি |
ব্রহ্মচারীবাড়ির প্রাচীন এই পুজোয় দুর্গা-কাঠামোর পুজো হয় জন্মাষ্টমীর দিন। সাবেক একচালা মহিষাসুরমর্দিনী প্রতিমা। বোধন হয় পঞ্চমীর দিন। কলাবৌ স্নান করানো হয় দুর্গাদালানেই।
|
হালতু মজুমদারবাড়ি |
|
ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি ময়মনসিংহের লাউটিয়া গ্রামে রমানাথ মজুমদার (লাহিড়ী) পুজো আরম্ভ করেন। দেশভাগের পরে তাঁর পৌত্রেরা প্রথমে মালদহ, পরে হালতুর পূর্বাচল স্কুল রোডে পুজো স্থানান্তরিত করেন। একচালা মহিষাসুরমর্দিনী প্রতিমা। সপ্তমী থেকে দশমী প্রতি দিন পুজোর শুরুতে খিচুড়ি, ভাজা, তরকারি, পায়েস দিয়ে ‘বালভোগ’ দেওয়া হয়। দুপুরে হয় মূল ভোগ। |
|
|
চোরবাগান মিত্রবাড়ি |
|
কোন্নগরের মিত্র পরিবারের রাজা বলরাম মিত্র মুর্শিদাবাদের নবাবের দেওয়ান ছিলেন। তিনি চোরবাগানে ৮৪ মুক্তারামবাবু স্ট্রিটের বাড়িতে প্রথমে ‘নীলাভ মুক্তকেশী’ কালী ও পরে দুর্গাপুজো আরম্ভ করেন। পুত্র অযোধ্যারামের আমলে পরিবারে সমৃদ্ধি ঘটে। সাবেক একচালা মহিষাসুরমর্দিনী প্রতিমা। আগে ঘোড়া-মুখ সিংহ ছিল, পরে প্রচলিত সিংহের রূপ দেওয়া হয়েছে। দশমীর সকালে ঘট বিসর্জনের পরে ‘শুভচণ্ডীর’ পুজো এ পুজোর বৈশিষ্ট্য। এখন পুজোটি ‘বড় বাড়ি’, ‘মেজ বাড়ি’ ও ‘ছোট বাড়ি’ |
তিন বাড়ির মধ্যে পালা করে অনুষ্ঠিত হয়। এ বছরের পুজো হচ্ছে ৮৪ মুক্তারামবাবু স্ট্রিটের বাড়িতে। |
|
|
সন্তোষপুর পালবাড়ি |
|
কুমিল্লার মোহনপুর গ্রামের প্রথম পুজো আরম্ভ করেন কামিনীকুমার পাল। দেশ ভাগের পরে তিনি সন্তোষপুর-বিবেকনগর অঞ্চলে চলে আসেন। পুজোটিও স্থানন্তরিত হয় সেখানে। একচালা সাবেক মহিষাসুরমর্দিনী প্রতিমা। কিন্তু পূর্ববঙ্গের রীতি অনুসারে, পালবাড়ির প্রতিমায় দুর্গার ডান দিকে কার্তিক ও বাঁ দিকে গণেশকে বসানো হয়। পুজো আরম্ভ হয় ষষ্ঠীর দিন। এই পরিবারে অষ্টমী ও নবমী তিথির সন্ধিক্ষণে সন্ধিপুজো হয় না, অষ্টমীর রাতে হয় ‘অর্ধরাত্রি পূজা’। বিসর্জনের পরে হয় অপরাজিতা পুজো। |
|
|
কাঁসারিপাড়া নন্দীবাড়ি |
জয়নগর তেলিপাড়া থেকে এসে দক্ষিণ কলকাতার ভবানীপুর-কাঁসারিপাড়া এলাকায় বসতি স্থাপন করেন গঙ্গাধর নন্দী। তিনি প্রথম জীবনে কলম বিক্রি করতেন, পরে মণিহারী দোকান করে ধনী হন। গঙ্গাধর ঢাকায় বন্ধুর বাড়িতে দুর্গাপুজো দেখে এসে নিজের বাড়িতে পুজো আরম্ভ করেন। আনুমানিক ৭৫ বছর আগে শুরু হয় নন্দীবাড়ির পুজো। সাবেক একচালা মহিষাসুরমর্দিনী ডাকের সাজের প্রতিমা। সপ্তমী থেকে নবমী প্রতি দিন ৩৫ থালার নৈবেদ্য সাজানো হয়। দশমীর দিন প্রতিমা নিরঞ্জনের পরে বড় ডাবের জল দিয়ে শান্তির জল দেওয়া হয়।
|
পাথুরিয়াঘাটা ঘোষবাড়ি |
|
পাথুরিয়াঘাটা ঘোষ বংশের প্রতিষ্ঠাতা রামলোচন ঘোষ ছিলেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মুৎসুদ্দি। হেস্টিংস-এর আমলে তিনি দেওয়ানও হন। আনুমানিক ১৭৮৪-তে তিনি ৪৬ পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিটের বাড়িতে পুজো আরম্ভ করেন। ওই বংশের খেলাৎচন্দ্র ঘোষ ১৮৪৬-এ পুরনো বাড়ির ঠিক পাশেই নতুন দুর্গাদালান নির্মাণ করে সেখানে পুজোর সূচনা করেন। দু’বাড়িতেই সাবেক বাংলা শৈলীর মঠচৌরি চালের মহিষাসুরমর্দিনী প্রতিমায় পুজো হয়। সিংহ ঘোড়ার আকৃতির। বোধন বসে আশ্বিনের কৃষ্ণাপ্রতিপদ |
থেকে। সপ্তমী, অষ্টমী, সন্ধিপুজো ও নবমীতে ছোট খাঁড়া দিয়ে চিনির মঠের প্রতীকী বলি দেওয়া হয়। পুজোর প্রতি দিনই সধবা ও কুমারী পুজো হয়। নবমীর দিন থাকে ঢালাও খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন। |
|
|
আমহার্স্ট স্ট্রিট সেনবাড়ি |
|
প্রবাদের ‘গৌরী সেন’-এর উত্তরপুরুষ হিসেবে পরিচিত সেন পরিবারের মদনমোহন সেন ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি মধ্য কলকাতার ব্রজনাথ দত্ত লেনে পুজো আরম্ভ করেন। ১৯২৬-এ শম্ভুনাথ সেন পুজোটি ৩ আমহার্স্ট স্ট্রিটের (এখন রাজা রামমোহন রায় সরণি) বাড়িতে নিয়ে আসেন। ষষ্ঠীতে হয় বোধন। অষ্টমী ও নবমীতে সধবা ও কুমারীপুজো হয়। |
|
|
শ্যামনগর রোড সেনবাড়ি |
এ পুজো আরম্ভ হয় অধুনা বাংলাদেশের মূলঘর গ্রামে। পরে কাজুলিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। দেশভাগের পরে কলকাতার দমদম পার্ক অঞ্চলে শ্যামনগর রোডে উঠে আসে পুজোটি। একচালা মহিষাসুরমর্দিনী প্রতিমা। পূর্ববঙ্গের রীতি অনুসারে, দুর্গার ডান দিকে কার্তিক ও বাঁ দিকে গণেশকে বসানো হয়। কলা-বৌ থাকে কার্তিকের পাশে। ষষ্ঠীর বোধনের পরে প্রতিমাকে সোনার গয়নায় সাজানো হয়।
|
জানবাজার রানি রাসমণির বাড়ি |
|
জানবাজারের এই প্রাচীন পুজোটি ‘রানি রাসমণির পুজো’ নামে বেশি পরিচিত হলেও ১৭৯৪ সালে এই পুজোর সূচনা করেছিলেন রাসমণির শ্বশুর জমিদার এবং ব্যবসায়ী প্রীতরাম মাড়। এ বাড়ির প্রতিমার বৈশিষ্ট্য, এর মুখ ছাঁচে তৈরি নয়। প্রতিপদ থেকে বোধন বসে। সপ্তমী, অষ্টমী এবং নবমীতে এখানে কুমারীপুজো হয়।
শ্রীরামকৃষ্ণ বেশ কয়েক বার এই পুজোয় থেকেছেন। পরে পুজোটি বিভক্ত হয়ে যায়। |
|
ছবি: পিন্টু মণ্ডল
|
|