নবাব হারানোর চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে নতুন মিসাইল ধেয়ে এল ভারতীয় ক্রিকেটের দিকে। শোয়েব আখতারের হাত ধরে। তাঁর আত্মজীবনী ‘কন্ট্রোভারসিয়ালি ইয়োর্স’-এ খোদ সচিন তেন্ডুলকরের দিকেই আঙুল তুলে নতুন বিতর্কে ‘রাওয়ালপিন্ডি এক্সপ্রেস’। সচিন তাঁকে ভয় পেতেন দাবি করে শোয়েব বলেছেন, “এটাই সত্যি। বলতে ভয়ের কী আছে?”
কেউ আলটপকা তাঁর নামে কিছু বললে প্রতিক্রিয়া দেওয়ার ফাঁদে পড়ার লোক সচিন নন। শেষ বিতর্কিত প্রতিক্রিয়া বলতে ২০০৭ বিশ্বকাপের পর দেশে ফিরে গ্রেগ চ্যাপেলের মন্তব্যের প্রতিবাদ। যেখানে চ্যাপেল প্রশ্ন তুলেছিলেন তাঁর দায়বদ্ধতা নিয়ে। তার পর প্রায় সাড়ে চার বছর পরে ফের কারও মন্তব্যে মুখ খুললেন সচিন। নাকি মুখ খুললেন না? শোয়েবের মিসাইলের প্রতিক্রিয়া হিসেবে তাঁর বিবৃতি সংক্ষিপ্ততম। “এই নিয়ে প্রতিক্রিয়া দিতে আমার রুচিতে বাধছে।” রাহুল কোনও বিবৃতি দেওয়ার প্রয়োজনই মনে করেননি। গরম প্রতিক্রিয়া এসেছে হরভজন সিংহ এবং বিনোদ কাম্বলির থেকে। ক্ষিপ্ত হরভজন বলেছেন, “সচিন নিয়ে কথা উঠলে বলতে হয় যে ও শুধু ভারতেরই সেরা ক্রিকেটার নয়। বিশ্বের যে কোনও ক্রিকেটারই বলবে, ম্যাচ কী ভাবে শুরু আর শেষ করতে হয় সেটা সচিনই সবচেয়ে ভাল জানে।” আবার কাম্বলি বলছেন, “শোয়েব বা কাউকে সচিনের ভয় পাওয়ার প্রশ্ন ওঠে না। সচিন যত রান করেছে... কেউ ধারে-কাছে নেই...কেউ এ ভাবে ওকে নিয়ে বলতেই পারে না।” কাম্বলির রসিকতা, “সচিন শুধু আমার বোলিংকে ভয় পেত!” সচিন-ঘনিষ্ঠ এক মরাঠি সাংবাদিক আবার বলছেন, “বই বিক্রির কৌশল ছাড়া কী বলবেন একে?
বাইশ বছরের ক্রিকেটজীবনে আর যাই হোক, পেসারের সামনে পালানোর অভিযোগ অন্তত কেউ করেননি। না ওয়াসিম-ওয়াকার, না ম্যাকগ্রা-লি, না ডোনাল্ড বা ওয়ালশ-অ্যামব্রোজ। সেখানে মাত্র ৪৬ টেস্ট খেলে ১৭৮ উইকেট পাওয়া শোয়েবের বোমা, “ফয়জলাবাদ টেস্টে (২০০৬) সচিন আমার বলে ভয় পেয়েছিল। একটা বলে এমন ভাবে সরে গিয়েছিল যে, অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। তা-ও ওই স্লো উইকেটে। পরের টেস্টে ওর মাথায় মেরেছিলাম। তার পর ওই সিরিজে আর রান পায়নি।” শোয়েবের আরও দাবি, সচিন বা দ্রাবিড় কেউই ম্যাচ উইনার নন। ম্যাচ ‘ফিনিশ’ করতেও জানেন না। রিচার্ডস, পন্টিং, লারাদের মহান বলেছেন। কিন্তু সচিনকে নয়। বক্তব্য, “ওর বেশি রান বা রেকর্ড থাকতে পারে, ম্যাচ শেষ করার ক্ষমতা নেই।” শাহরুখ খান এবং তাঁর নাইট রাইডার্সকেও রেহাই দেননি শোয়েব। জানিয়েছেন, শাহরুখ এবং ললিত মোদী তাঁর সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। যা শুনে নাইট রাইডার্সের পক্ষ থেকে সিইও বেঙ্কি মাইসোর হায়দরাবাদ থেকে ফোনে বললেন, “শোয়েবের বই আমি পড়িনি। তবে এটুকু বলতে পারি, শোয়েবের সঙ্গে চুক্তির সব শর্তই মানা হয়েছিল।” |
বিতর্ক স্রেফ সচিন-বিষোদ্গারে নয়। শোয়েব বলছেন, তিনি অবশ্যই বল বিকৃতি ঘটাতেন। জানাচ্ছেন, প্রত্যেক পাক পেসারই দুষ্কর্মটা করে থাকেন। “বিশ্বের সব টিমই কাজটা করে। আমরা হয়তো শুরু করেছিলাম। কিন্তু এখন কেউ নির্দোষ নয়। প্রত্যেক পেসারই বল বিকৃত করে। সেটাই বাঁচার একমাত্র রাস্তা, কারণ পিচগুলো বড্ড স্লো।” তাঁর অকপট স্বীকারোক্তি, “আমি বহু বার বল বিকৃত করেছি। বহু বার সতর্কিত হয়েছি। দু’বার ধরাও পড়েছি। আমার নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ নেই। বল হাতে পেলেই নতুন কিছু করতে ইচ্ছে হত। মিথ্যে বলে কী হবে?” বল বিকৃতির উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করতেন বুটের স্পাইক, প্যান্টের পিছনের পকেটের চেন।
নাম না করে শোয়েব জানিয়েছেন, কী ভাবে এক পাকিস্তানি ক্রিকেটার লাঞ্চের সময় হ্যাঙ্গারে আম্পায়ারের কোটের পকেটে রাখা বল পাল্টেছিলেন। পাল্টে দেওয়া বল অসম্ভব রিভার্স সুইং করে। তার পর আম্পায়াররা যেখানে-সেখানে কোট ঝুলিয়ে রাখেন না। বল-সমেত কোট থাকে লকারে। শোয়েবের সাফ দাবি, বল বিকৃতি আইনত স্বীকৃতি পাক। |