নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
রাত ১১টা। হঠাৎ পুকুরে ভারী কিছু পড়ার শব্দ। তার পরেই এক ব্যক্তির চিৎকার। মুহূর্তে জ্বলে উঠল আশপাশের বাড়ির আলো। বাসিন্দারা বেরিয়ে দেখলেন, পাড় ধরে এক যুবক উর্ধ্বশ্বাসে দৌড়চ্ছেন আর পুকুর থেকে উঠে আসছেন মধ্যবয়স্ক এক ব্যক্তি, কোলে বছর দেড়েকের শিশু। পুকুরে হাবুডুবু খাচ্ছেন এক তরুণী। শিশুটিকে উদ্ধারের পরে ওই ব্যক্তি ফের পুকুরে ঝাঁপিয়ে উদ্ধার করলেন তরুণীকেও।
বৃহস্পতিবার, হাওড়ার চ্যাটার্জিহাট এলাকার চৌধুরীপাড়ার ঘটনা। পুলিশ জানায়, ওই তরুণীর নাম নীলাঞ্জনা পাখিরা (২২) ও তাঁর ছেলের নাম রুদ্রনীল পাখিরা (১ বছর ৬ মাস)। উদ্ধারকর্তা রাজু দাস, নীলাঞ্জনার বাবা। পাড় ধরে দৌড়চ্ছিলেন নীলাঞ্জনার স্বামী রাজু পাখিরা। ঘটনার পরে শুক্রবার ওই রাজু, তাঁর মা জ্যোৎস্না পাখিরা ও বোন মধুমতী পাখিরা গ্রেফতার হন। তাঁদের বিরুদ্ধে ৪৯৮ ধারায় মারধর ও অত্যাচারের অভিযোগ দায়ের হয়েছে। |
পুলিশ জেনেছে, স্বামীর কাছে বারবার প্রত্যাখ্যাত হয়ে ওই তরুণী ছেলেকে নিয়ে স্বামী ও বাবার সামনেই পুকুরে ঝাঁপ দেন। কিন্তু কেন আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা? শুক্রবার মধ্য হাওড়ার ঘোষপাড়ার বাড়িতে বসে নীলাঞ্জনা অভিযোগ করেন, দু’বছর আগে তাঁতিপাড়া লেনের বাসিন্দা, বাসচালক রাজুর সঙ্গে বিয়ের পর থেকেই তাঁর শাশুড়ি ও ননদ পণের দাবিতে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন শুরু করেন। রাজু প্রতিবাদ করতেন না। উপরন্তু শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে নানা দাবি করতেন। সম্প্রতি তাঁকে শ্বশুরবাড়ি থেকে একটি মোটরবাইকও দেওয়া হয়। কিন্তু দিন ১৫ আগে ফোন করা নিয়ে অশান্তি শুরু হলে বাপের বাড়ি চলে আসেন নীলাঞ্জনা।
পুলিশ জেনেছে, ঘটনার রাতে বাবা ও শিশুপুত্রকে নিয়ে স্বামীর কাছে ফিরতে চৌধুরীপাড়ায় বাস গ্যারাজে যান নীলাঞ্জনা। তাড়িয়ে দেন রাজু। পরে বদ্যি পুকুরের সামনে ফের স্বামীকে দেখে তাঁকে ফিরিয়ে নেওয়ার অনুরোধ করেন তিনি। নীলাঞ্জনা বলেন, “আমাকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দেয় রাজু। আর বাঁচার অর্থ ছিল না। ছেলেকে নিয়ে পুকুরে ঝাঁপ দিই। তা দেখে বাবা ঝাঁপ দিয়ে আমাদের বাঁচান।” নীলাঞ্জনার বাবা রাজুবাবু বলেন, “মেয়ে পুকুরে ঝাঁপাতেই জামাই পালায়। মেয়ে সাঁতার জানে না। তাই কিছু না ভেবে পুকুরে ঝাঁপিয়ে নাতিকে উদ্ধার করি। তার পরে মেয়েকে। জানি না ওদের কপালে আর কী রয়েছে।” |