অতলান্তিক পেরিয়েও অণ্ণা হজারের ছায়া পিছু ছাড়ছে না মনমোহন সরকারের।
মার্কিন লগ্নিকারীরা তো বটেই, খোদ বিশ্বব্যাঙ্কের প্রেসিডেন্ট রবার্ট জোয়েলিক পর্যন্ত ভারতের অর্থমন্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করেছেন, দুর্নীতি দমনে এবং প্রশাসনের স্বচ্ছতা রক্ষায় ইউপিএ সরকার কী করছে? ভারতে নাগরিক সমাজের সাম্প্রতিক আন্দোলন নিয়েও কৌতূহল প্রকাশ করেছেন মার্কিন লগ্নিকারীরা। দুর্নীতি দমনে সরকার যে বিভিন্ন আইন আনতে চলেছে, তা জানানো ছাড়াও প্রণব মুখোপাধ্যায় তাঁদের বলেন, আইন তৈরির প্রক্রিয়ায় নাগরিক সমাজকে সামিল করার মতো পদক্ষেপ করেছে তাঁর সরকার। বিশ্বে এমন উদাহরণ বিরল।
দু’দিন ধরে মার্কিন বিনিয়োগকারী তথা আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থার কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়। ২৮ বছর পর ফের জি-২৪ গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান (১৯৮৩-তে ইন্দিরা সরকারের অর্থমন্ত্রী প্রণববাবু এই গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান হয়েছিলেন) মনোনীত হয়ে আজ বিশ্ব আর্থিক ব্যবস্থার সংস্কারের কথাও বলছেন। কিন্তু প্রায় প্রতিটি মঞ্চে দেশে দুর্নীতির বিষয়টি নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে তাঁকে। বিশ্বব্যাঙ্কের কাজকর্মের স্বচ্ছতার প্রসঙ্গেই জোয়েলিক প্রণববাবুর কাছে জানতে চান, দুর্নীতির অভিযোগে জেরবার ইউপিএ সরকার স্বচ্ছতার প্রশ্নে কী ভাবে সক্রিয় হয়েছে? প্রণববাবু ও জোয়েলিকের ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন যোজনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান মন্টেক সিংহ অহলুওয়ালিয়া এবং বিশ্বব্যাঙ্কের এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর পুলক চট্টোপাধ্যায়ও। বিশ্বব্যাঙ্কের প্রেসিডেন্টকে আশ্বস্ত করতে চেয়ে প্রণববাবু বলেন, মনমোহন সরকার দুর্নীতি দমনের বিষয়টিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে। এ বিষয়ে লোকপাল-সহ যে পাঁচটি আইন আনতে চাইছে কেন্দ্র, তা তিনি বিশ্বব্যাঙ্কের প্রধানের সামনে ব্যাখ্যা করেছেন।
শুধু জোয়েলিকই নন। নিউ ইয়র্কে গতকালের বৈঠকেও বিষয়টি নিয়ে কৌতূহল প্রকাশ করেন মার্কিন লগ্নিকারীরা। প্রণববাবুর কাছে তাঁরা ভারতে নাগরিক সমাজের আন্দোলন সম্পর্কে জানতে চান। অণ্ণার অনশন নিয়েও প্রশ্ন করা হয়। জানতে চাওয়া হয়, এই ধরনের আন্দোলন মোকাবিলার জন্য কী ভাবছে ভারত? ভারতে বিনিয়োগ পরিস্থিতির ক্ষেত্রে এই ধরনের আন্দোলনের কোনও প্রভাব পড়তে পারে কি না, সে ব্যাপারেও উদ্বেগ প্রকাশ করেন তাঁরা। প্রণব মুখোপাধ্যায় তাঁদের বলেন, আইন তৈরির কাজে নাগরিক সমাজকে অংশীদার করার যে সিদ্ধান্ত ইউপিএ সরকার নিয়েছে, তা এর আগে কখনও ঘটেনি। বিষয়টিকে একটি প্রতিষ্ঠানিক রূপ দিতে চাইছে কেন্দ্র। প্রশাসনে স্বচ্ছতা আনার জন্য নাগরিক সমাজের ৪০টি দাবির মধ্যে ৩৪টি-ই সরকার মেনে নিয়েছে বলেও জানান তিনি।
আন্তর্জাতিক আর্থিক সঙ্কটের সমাধান খোঁজার কাজে সামিল হওয়া ছাড়াও প্রণববাবুর এই সফরের অন্যতম লক্ষ্য, মন্দার বিশ্বে ভারতকে আন্তর্জাতিক লগ্নির নিশ্চিত গন্তব্য হিসেবে তুলে ধরা। সেই কাজে মহারাষ্ট্রের প্রত্যন্ত গ্রামের এক বৃদ্ধের ছায়া এড়াতে পারছেন না দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের অর্থমন্ত্রী। |