প্রতারণার দ্বিতীয় দফা
অফার লেটার দিয়ে টাকা হাতানোর চেষ্টা চলছেই ওড়িশা মেট্রোর নামে
য়েবসাইট এবং সংবাদমাধ্যমে কর্মী নিয়োগের বিজ্ঞাপন দিয়ে জনসমক্ষে ধরা পড়ে গিয়েছিল ‘ওড়িশা মেট্রো রেল কর্পোরেশন’ নামে ভুয়ো সংস্থাটি। বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় যথেষ্ট আলোড়নও হয়। কিন্তু তার পরেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের টনক নড়েনি। বন্ধ হয়নি প্রতারণা। ওই ভুয়ো সংস্থার তরফে বিজ্ঞাপনের পরে আরও এক ধাপ এগিয়ে চাকরিপ্রার্থীদের একাংশকে ‘অফার লেটার’ও পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে!
ঘটনা হল, ‘ওড়িশা মেট্রো রেল কর্পোরেশন’-এর নামে কেউ বা কারা গত ৯ জুন একটি বাংলা দৈনিক সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপনে বলেছিল, ছ’টি পদে কর্মী নিয়োগের জন্য তারা উপযুক্ত প্রার্থীদের থেকে আবেদনপত্র চাইছে। বাকি তথ্য এবং আবেদনপত্র www.odishametrorail.com এই ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে বলে বিজ্ঞাপনে জানানো হয়েছিল। চাকরির খবর সংক্রান্ত একটি সাপ্তাহিক পত্রিকাতেও ওই বিজ্ঞাপনের খবর ছাপা হয়েছিল গত ১৯ জুন। সেখানে আরও দু’টি তথ্য ছিল। এক, আবেদন-মূল্যের অঙ্ক এবং দুই, তা কী ভাবে জমা দিতে হবে। বলা হয়েছিল, সাধারণদের জন্য আবেদন-মূল্য ২৪০ টাকা। তফসিলি জাতি ও উপজাতিদের জন্য ওই মূল্য ১৫০ টাকা। একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের নাম করে তাদের ডিম্যান্ড ড্রাফট সংশ্লিষ্ট প্রার্থীদের কাটতে বলা হয়েছিল।
ওই বিজ্ঞাপন দেখে অনেক বেকার যুবক-যুবতীই চাকরির আবেদন করেন। কিন্তু পরে তাঁরা জানতে পারেন, সংস্থাটি ভুয়ো। তত দিনে অবশ্য ‘আবেদনমূল্য’ হিসাবে তাঁদের জমা দেওয়া টাকা নষ্টই হয়ে গিয়েছে। তবে তাঁরা ভেবেছিলেন, এই প্রতারণার ওখানেই শেষ। বাস্তবে অবশ্য দেখলেন, এর পরে আবার ‘অফার লেটার’ও পাঠিয়ে পরবর্তী ধাপে প্রতারণা করার চেষ্টা হচ্ছে।
যেমনগোবরডাঙার রাকেশ শীল। রাকেশবাবুর কাছে ‘ওড়িশা মেট্রো রেল কর্পোরেশন’-এর প্যাডে চাকরির ‘অফার লেটার’ আসে গত ১০ অগস্ট। কিন্তু চাকরির আবেদনপত্র জমা দেওয়ার পরেই রাকেশবাবু জেনে গিয়েছিলেন, সংস্থাটি ভুয়ো। এ বার সেই ভুয়ো সংস্থার তরফে ‘অফার লেটার’ পেয়ে হতভম্ব তিনি। রাকেশবাবু বলেন, “আমি অফিস অ্যাসিস্ট্যান্ট পদের জন্য আবেদন করেছিলাম। অফার লেটারে আমাকে বলা হয়েছিল, ৩০ অগস্ট বেলা ১১টায় ওই সংস্থার বেঙ্গালুরুর অফিসে যেতে হবে। সঙ্গে নিতে হবে অফার লেটার। তার আগে ওড়িশা মেট্রো রেল কর্পোরেশনের মানবসম্পদ বিভাগের রঞ্জিত কুমার বেহরার অ্যাকাউন্টে ৩৪০০ টাকা জমা দিতে হবে। চিঠিতে আরও লেখা ছিল, ৩০ অগস্টই সেখানে আমার কাজে যোগ দেওয়ার দিন।” রাকেশবাবুর পাওয়া ‘অফার লেটার’-এ যে অ্যাকাউন্ট নাম্বারে টাকা জমা দিতে বলা হয়েছে, সেটি হল ৩০৯৩৬৩৯৬৮১৩।
‘অফার লেটার’-এ আরও লেখা আছে, অ্যাকাউন্টটি এসবিআই-এর। সেখানে টাকা জমা দিলে তবেই ‘ট্রেনিং আইডেন্টিটি কার্ড’ পাওয়া যাবে। এবং ওই টাকা ফেরতযোগ্য নয়। গোটা ‘অফার লেটার’-এ ইংরেজি বাক্য গঠন এবং বানান রীতিমতো নতুন অভিধান রচনার দাবি রাখে! একটিমাত্র নমুনা দিলেই বানানের নতুনত্ব পরিষ্কার হবে। ‘অফার লেটার’-এ ‘লেটার’ বানান লেখা হয়েছে ‘latter’।
প্রসঙ্গত, ওড়িশা সরকারের পরিবহণ দফতর ভুবনেশ্বর-কটক মেট্রো চালানোর ভাবনাচিন্তা শুরু করেছিল ২০১০ সালে। এ ব্যাপারে সমীক্ষার জন্য দিল্লি মেট্রো রেল কর্পোরেশনকে অনুরোধ করা হয়। সেই কারণেই তাদের সাইট নকল করে এই ভুয়ো সাইটটি তৈরি করা হয়েছে বলে মনে করছে ভুক্তভোগী আবেদনকারীদের একাংশ। তবে ভুবনেশ্বর-কটক মেট্রোর নির্মাণ-কাজ শুরু হওয়ার কথা ২০২০ সালে এবং তা শেষ হওয়ার কথা ২০৩০ সালের মধ্যে। সুতরাং, তার জন্য ২০১১ সালে কর্মী নেওয়ার যুক্তি একেবারেই ধোপে টেকে না।
রাকেশবাবু অবশ্য এ বার আর ওই ‘প্রতারণার’ ফাঁদে পা দেননি। তবে তিনি বলেন, “ওই সংস্থাটি যে চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণা করছে, তা আমার কয়েকজন পরিচিত জানতেন না। আমিই তাদের সে তথ্য দিয়ে টাকা পাঠাতে নিষেধ করি। কিন্তু অনেকেই থাকতে পারেন, যাঁরা এখনও জানেন না ওই সংস্থাটি ভুয়ো। তাঁদের ফের প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে।” এ ব্যাপারে রেলমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদীর বক্তব্য, “ওড়িশা মেট্রো রেল কর্পোরেশন নামে কোনও সংস্থার অস্তিত্বই নেই। কিন্তু এই প্রতারণার বিষয়ে রেলের কিছু করার নেই। কারণ, বিষয়টা আইন-শৃঙ্খলার অন্তর্ভুক্ত এবং সেটা রাজ্যের এক্তিয়ারে পড়ে। রাজ্যকেই এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে হবে।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.