প্রশ্ন হিন্দি-ইংরেজিতেই
অভিন্ন মেডিক্যাল প্রবেশিকায়
বাংলার দাবি নাকচ
বিগত বামফ্রন্ট সরকার এবং নতুন কংগ্রেস-তৃণমূল সরকার দাবি তুলেছিল, বাংলা চাই।
কিন্তু মেডিক্যালে অভিন্ন প্রবেশিকার ক্ষেত্রে রাজ্যের সেই দাবি কেন্দ্রীয় সরকার মানলই না। ইংরেজি ও হিন্দিতে প্রশ্নপত্র এবং পরীক্ষায় ‘নেগেটিভ মার্কিং’-এর সিদ্ধান্তই বহাল রাখা হল।
শুক্রবার দিল্লিতে এক বৈঠকে মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া (এমসিআই)-র বোর্ড অফ গভর্নরস, সেন্ট্রাল বোর্ড অফ সেকেন্ডারি এডুকেশন (সিবিএসই) এবং কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের প্রতিনিধিরা এ বিষয়ে তাঁদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন। আঞ্চলিক ভাষায় প্রশ্নপত্র না-করার যুক্তি হিসেবে প্রশ্নপত্র ফাঁসের আশঙ্কার কথা বলেছেন এমসিআই-কর্তারা। সেই সঙ্গেই তাঁদের বক্তব্য, আঞ্চলিক ভাষায় প্রশ্ন করতে হলে ইংরেজি বা হিন্দি থেকে অনুবাদের জন্য যে-পরিকাঠামো প্রয়োজন, এই মুহূর্তে তা নেই।
মেডিক্যালে অভিন্ন প্রবেশিকার বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক বেশ কিছু দিন আগে থেকেই সরব হয়েছিল। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যকর্তাদের বক্তব্য, দেশের সব সরকারি ও বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের জন্য একই প্রবেশিকা পরীক্ষা চালু হলে পড়ুয়াদের চাপ অনেকটা কমবে। পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাড়ু-সহ বিভিন্ন রাজ্য গোড়া থেকেই এই ব্যাপারে আপত্তি জানায়। বিগত বাম সরকারের বক্তব্য ছিল, অভিন্ন প্রবেশিকা চালু হলে রাজ্যের পড়ুয়াদের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হবে। পড়ুয়ারা নিজেদের রাজ্যে পড়াশোনার সুযোগ না-পেয়ে বাইরে যেতে বাধ্য হবেন। তাই রাজ্যের পৃথক পরীক্ষা থাকাই বাঞ্ছনীয়। তবে একান্তই যদি অভিন্ন পরীক্ষার ব্যবস্থা এড়ানো না-যায়, সে-ক্ষেত্রে বাংলায় পরীক্ষা দেওয়ার বিষয়টিও নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছিল বামফ্রন্ট সরকার। রাজ্যে পালাবদলের পরে নতুন মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বাংলায় ওই প্রবেশিকা পরীক্ষা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে কেন্দ্রকে চিঠি দেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রাজ্যের আর্জি মানা হল না।
এমসিআই-এর এই সিদ্ধান্তে রাজ্য সরকার স্বভাবতই খুশি নয়। মমতা এ দিন বলেন, “এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে গেলে এক ধরনের সাহস লাগে। সেই সাহসটা এ ক্ষেত্রে দেখা গেল না। আমি রেলমন্ত্রী থাকাকালীন আঞ্চলিক ভাষায় রেলের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরির ব্যবস্থা চালু করেছিলাম। এর বেশি আর কী বলব?”
রাজ্যের জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ডের এক প্রাক্তন কর্তা জানান, পশ্চিমবঙ্গের ৮০ শতাংশেরও বেশি পড়ুয়া বাংলাতেই পরীক্ষা দেন। তাঁদের অনেকেই বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ে ইংরেজি পরিভাষার সঙ্গে খুব একটা পরিচিত নন। এ রাজ্যে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে তার প্রয়োজনও তেমন পড়ে না। এই অবস্থায় মেডিক্যালের প্রবেশিকায় শুধু ইংরেজি ও হিন্দিতে প্রশ্ন হলে তাঁদের কিছুটা অসুবিধা হতেই পারে।
কিন্তু যে-বিষয়টি নিয়ে এ রাজ্যের ছাত্রছাত্রীরা ধন্দে রয়েছেন, তা হল, মেডিক্যালের অভিন্ন প্রবেশিকার পাঠ্যক্রম কেমন হবে। এত দিন রাজ্যের জয়েন্ট এন্ট্রান্সে উচ্চ মাধ্যমিকের পাঠ্যক্রম স্বাভাবিক ভাবেই গুরুত্ব পেয়েছে। কিন্তু সর্বভারতীয় স্তরে পরীক্ষাটির আয়োজক সিবিএসই। তাই কোন পাঠ্যক্রম ধরে প্রস্তুতি চালাতে হবে, বাংলার পড়ুয়ারা তা নিয়ে এখন রীতিমতো সংশয়ে। এই ব্যাপারে এমসিআই কী বলছে?
এমসিআই-কর্তারা জানিয়েছেন, পাঠ্যক্রম সময়োপযোগী করার জন্য একটি কমিটি গড়া হয়েছে। তিন সপ্তাহের মধ্যে ওই কমিটি রিপোর্ট জমা দেবে। তার ভিত্তিতেই পাঠ্যক্রম চূড়ান্ত হবে।
অভিন্ন প্রবেশিকার মেধা-তালিকায় ঠাঁই পাওয়ার জন্য কোনও ন্যূনতম নম্বরের ব্যবস্থা থাকছে না। এর আগে জয়েন্ট এন্ট্রান্সে সাধারণ প্রার্থীদের ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ এবং তফসিলি জাতি ও উপজাতিদের জন্য ৪০ শতাংশ নম্বর নির্দিষ্ট ছিল। সেই পদ্ধতি উঠে যাওয়ায় মেধা-তালিকা আরও দীর্ঘ হবে।
রাজ্যে মোট আসনের ৮৫ শতাংশে এখানকার যে-সব পড়ুয়া ভর্তি হবেন, তাঁদের কাউন্সেলিংয়ের দায়িত্ব রাজ্যেরই হাতে থাকছে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। রাজ্যের সেন্ট্রাল সিলেকশন কমিটির চেয়ারম্যান উৎপল দত্ত বলেন, “এই ব্যাপারে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। আমরা রাজ্যের হাতে দায়িত্ব দেওয়ার কথা বলেছি। কিন্তু সবটাই কেন্দ্রীয় ভাবে অনলাইনে হবে, নাকি রাজ্য করবে তা পরে জানা যাবে।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.