সময় এল কাছে...
থিম গড়তে শহরে
বাইরের শিল্পীরা
থিমে ভিন্ রাজ্যের শিল্প কিংবা দেশ পেরিয়ে এক্কেবারে বিদেশই হাজির মণ্ডপে। কিন্তু তিল তিল করে সে সব গড়ে তুলছেন যাঁরা, তাঁরা যদি সেই সব জায়গার নিজস্ব স্বাদ-গন্ধ অটুট রাখতে না পারেন, মজাটাই মাটি। তাই কাশ্মীরই হোক বা জার্মানি, মধ্যপ্রদেশের আদিবাসী শিল্পই হোক বা মধুবনী কাজ থিমের আমেজ বজায় রাখতে বিভিন্ন পুজোর উদ্যোক্তারা নিয়ে আসছেন সেই জায়গার শিল্পী-কারিগরদের। অধিকাংশ শিল্পী বা পুজোকর্তাদের দাবি, ভিন্ রাজ্যের থিম তুলে ধরতে হয়তো বাংলার শিল্পীরাও পারতেন, তবে মাটির টান থাকত না।
নিউ আলিপুরের ‘সুরুচি সঙ্ঘে’ যেমন থিম কাশ্মীর। পুজো কমিটির সভাপতি অরূপ বিশ্বাস জানালেন, দূষণে কাশ্মীরের হিমবাহ কী ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, সেটাই তুলে ধরছেন তাঁরা। মণ্ডপসজ্জার কাশ্মীরি কাজে অনেকটাই ব্যবহার হচ্ছে প্রাকৃতিক উপাদান, বিশেষত খেজুর পাতা। সেই কাজের জন্য আনা হয়েছে কাশ্মীরের হস্তশিল্পী আব্দুল গনি ওয়ানি (গণপোষ)-কে। কাশ্মীরি শালের উপর সূচ দিয়ে এমব্রয়ডারি বা কাঠের উপরে কারুকার্য সবেতেই পুলওয়ামা জেলার বাসিন্দা গনির খুবই দক্ষ বলে জানালেন পুজোকর্তারা। অরূপবাবু বলেন, “ব্যাপক হারে গাছ কাটা, সাঁজোয়া গাড়ির ঘনঘন যাতায়াতে কাশ্মীরে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। গলে যাচ্ছে হিমবাহগুলি। তাই পুজোকে সামনে রেখে দূষণ রোধে মানুষকে একটা বার্তা দিতে চেয়েছি।”
দূষণে ক্ষতিগ্রস্ত হিমবাহের আদলে তৈরি হচ্ছে সুরুচি সঙ্ঘের পুজোমণ্ডপ। রাজীব বসু
সুরুচির মণ্ডপ গড়ার দায়িত্ব পেয়ে বেজায় খুশি গণপোষও। বললেন, “কাশ্মীরি শাল, কাঠের শিল্পসম্ভার কলকাতায় গুটিকয়েক দোকানে বিক্রি হয়। পুজোমণ্ডপে কাশ্মীরকে তুলে ধরলে আমাদের হস্তশিল্পের বিজ্ঞাপনও হয়।” পুজোর দিনগুলিতে ১৭ জন কাশ্মীরি লোকশিল্পীকেও নিয়ে আসছেন গণপোষ। তাঁর সঙ্গে কলকাতার দুই শিল্পী সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাজা সরকারের নেতৃত্বে ৬৫ জন কর্মী মণ্ডপ গড়বেন। এ ছাড়া থাকছে জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের থিমসঙ্গীত, কাশ্মীরি পোশাকে সজ্জিতা স্বেচ্ছাসেবিকা এবং কাশ্মীরি সুখাদ্যের সম্ভারও।
দক্ষিণেরই আর এক নামী পুজো ‘একডালিয়া এভারগ্রিন’ মণ্ডপে আনছে জার্মানির ছোঁয়া। মণ্ডপের পরিকল্পনার জন্য খাস জার্মানি থেকেই শিল্পী গ্রেগর শ্নেইডরকে নিয়ে এসেছেন বলে জানালেন পুজো কমিটির কর্তা, রাজ্যের জনস্বাস্থ্য-কারিগরি মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। প্রাচীন জার্মান স্থাপত্যের ঢঙে সেজে উঠবে মণ্ডপের অন্দর।
লেকটাউন ‘নেতাজি স্পোর্টিং ক্লাব’-এর পুজোয় এ বার মধুবনীর সিকি ঘাসের শিল্প তুলে ধরছেন শিল্পী অনির্বাণ দাস। মধুবনী থেকেই একদল শিল্পীকে নিয়ে এসেছেন তিনি। শিল্পীর দাবি, এর আগে শহরের বিভিন্ন পুজোয় মধুবনী চিত্রকলা তুলে ধরা হলেও সিকি ঘাসের শিল্প একদম নতুন। এমনকী, খাস মধুবনীতেও এ কাজ করার মতো লোক খুব কম বলে অনির্বাণের দাবি। মধুবনী থেকে আসা শিল্পী দলের নেতৃত্বে পুনম দেবী ও তাঁর ছেলে প্রভাকর ঝা। অনির্বাণ বলেন, “প্রথমে ভেবেছিলাম, মণ্ডপের অনেকটাই সিকি ঘাসের কাজ দিয়ে সাজাব। কিন্তু এই ক’জনে সেই বিশাল কাজ করা যাবে না। তাই ভাবনা কিছুটা বদলাতে হয়েছে।”
বাইরের শিল্পী এনে মণ্ডপ সাজাচ্ছে ‘বড়িশা ক্লাব’ও। গোপাল পোদ্দারের ভাবনায় সেখানে থিম উত্তরবঙ্গের নকশালবাড়ির বাদ্যযন্ত্র ‘বানাম’। মণ্ডপ জুড়ে থাকছে বিভিন্ন আকারের বানাম। তা তৈরি করেছেন নকশালবাড়ি থেকে আসা ১৫-২০ জন শিল্পী। সঙ্গে অবশ্য স্থানীয় কারিগরদেরও কাজে লাগিয়েছেন গোপাল। তবে শুধু বানাম নয়, বড়িশায় এ বার থাকছে অন্ধ্রপ্রদেশে তৈরি কাঠের প্রতিমা। শিল্পী বলেন, “প্রতিমার বেশির ভাগ কাজ অন্ধ্র থেকেই করেছেন সেখানকার কারিগরেরা। শেষ ছোঁয়া দিতে কয়েক জন কলকাতায় এসেছেন।” পূর্বের ‘কাঁকুড়গাছি প্রোগ্রেসিভ ইউথে’র পুজোয় এ বার তুলে ধরা হচ্ছে মধ্যপ্রদেশের আদিবাসী শিল্পকে। ওই পুজোর দায়িত্বে রয়েছেন শিল্পী তপন ঘোষ। জানালেন, মধ্যপ্রদেশের গোন্দ উপজাতির ভিত্তিচিত্র থাকছে মণ্ডপের দেওয়ালে। আর ভারিয়া উপজাতির কাঠের মুখোশ। মণ্ডপ সাজাতে মধ্যপ্রদেশের পাঠানগড় থেকে এসেছেন দুই গোন্দ শিল্পী। মুখোশ গড়তে পাতালকোট থেকে আনা হয়েছে ভারিয়া আদিবাসী সম্প্রদায়ের এক শিল্পীকে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.