নিরাপত্তাহীনতার যুক্তি
লালবাজারে মহিলা ক্যান্টিন বন্ধে নির্দেশ পুলিশেরই
ছর দু’য়েক আগে ঘটা করে মহিলা পরিচালিত ক্যান্টিন চালু হয়েছিল লালবাজারে। মুম্বই, পুনের নিষিদ্ধপল্লি থেকে উদ্ধার হওয়া ১১ জন মেয়েকে একটি পুনর্বাসন প্রকল্পের অধীনে ওই ক্যান্টিনে রান্নার কাজ দেয় কলকাতা পুলিশই। পুজোর মুখে, দিন তিনেক আগে আচমকাই এক মৌখিক নির্দেশে ওই মেয়েদের কাজ বন্ধ করতে বলা হয়েছে। এবং নির্দেশ দিয়েছে পুলিশই।
কী বলা হয়েছে ওই নির্দেশে? ওই মহিলাদের অভিযোগ, লালবাজারেরই এক পুলিশ কর্তা জানান, কলকাতা পুলিশের সদর দফতরে নিরাপত্তার অভাব রয়েছে ওই মহিলাদের! এ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র ও পুলিশ কমিশনার রঞ্জিৎকুমার পচনন্দাকে লিখিত অভিযোগও করেছেন তাঁরা। অভিযোগে তাঁরা জানতে চেয়েছেন, খাস লালবাজারেই যদি মেয়েদের নিরাপত্তা না-দেওয়া যায়, তা হলে তাঁরা যাবেন কোথায়? ইয়াসমিন, সেলিমা, আফসানাদের এই প্রশ্নই এখন সমাজকল্যাণ দফতরে আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাবিত্রী মিত্র বলেছেন, “অত্যন্ত গুরুতর অভিযোগ। ভাবা যায় না, এ রকম হতে পারে। মুখ্যসচিব সমর ঘোষকে বিষয়টি দেখতে বলেছি। ওই মেয়েদের কাজ বন্ধ না রাখার ব্যাপারেও নির্দেশ দিয়েছি।” পুলিশ কমিশনারও ওই মহিলাদের চিঠির প্রাপ্তি স্বীকার করলেও এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে চাননি।
ঘটনার সূত্রপাত গত সোমবার। মহিলাদের ওই পুনর্বাসন প্রকল্পের কো-অর্ডিনেটর বৈতালি গঙ্গোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ওই দিন ক্যান্টিনের ব্যাপারে কথা বলতে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (২) সৌমেন মিত্র তাঁকে লালবাজারে ডেকে পাঠান। সেখানেই তিনি মেয়েদের নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে শনিবারের মধ্যে ক্যান্টিন বন্ধ করতে বলেন। লিখিত অভিযোগেও বিষয়টি জানান বৈতালিদেবী। তাঁর কথায়, “জিজ্ঞাসা করি, লালবাজারেই তো ওই মেয়েদের সব চেয়ে সুরক্ষিত থাকার কথা। তা ছাড়া, এমন অভিযোগও তো কোনও মেয়ে করেননি। তখন সৌমেনবাবু বলেন, লালবাজারে প্রচুর পুরুষ কর্মী থাকেন। এতে মেয়েদের নিরাপত্তার সমস্যা হতে পারে। তাই তাঁরা কোনও ঝুঁকি নিতে চান না।” বৈতালি দেবীদের অভিযোগের ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন সৌমেন মিত্র।
ক্যান্টিন নিয়ে বিতর্ক জোরালো হওয়ায় লালবাজারের কর্তারা এখন অন্য কথা বলছেন। তাঁরা এখন বলছেন, “নিরাপত্তা নয়, আসলে খাবারের মান ভাল হচ্ছিল না বলেই ক্যান্টিন বন্ধ করতে বলা হয়েছে।” যদিও বৈতালির দাবি, লালবাজারে ডেকে পাঠিয়ে খাবারের মান নিয়ে তাঁদের কিছু বলা হয়নি। তখন নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে ক্যান্টিন বন্ধ করতে বলা হয়।
স্বভাবতই প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, মহিলাদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত অসুবিধা না থাকলেও কেন পুলিশকর্তারা সেই প্রসঙ্গ তুলবেন? ইয়াসমিন, মিনা, কণিকা, আফসানাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, পুলিশকর্মীদের থেকে কখনও খারাপ ব্যবহার বা কুপ্রস্তাব না-পেলেও মানসিক ভাবে তাঁরা নিজেরাই সব সময় নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। কারণ তাঁদের কর্মক্ষেত্রে সকলেই তাঁদের পূর্বপরিচয় জানেন। তাঁদের যে নিষিদ্ধপল্লি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে, সে সম্পর্কেও সকলেই ওয়াকিবহাল। যে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তত্ত্বাবধানে ওই পুনর্বাসন প্রকল্পটি চলছিল, তারা কিছু দিন আগে পর্যন্ত ক্যান্টিনে এই সংক্রান্ত কিছু ব্যানার-পোস্টারও রেখেছিল। ওই মহিলাদের বক্তব্য, এতে তাঁদের অতীত জীবনকে সকলের সামনে মেলে ধরা হচ্ছে। তাঁরা চান, ভবিষ্যতে তাঁদের মতো মেয়েদের কোনও পুনর্বাসন প্রকল্পে নিয়োগ করলে পরিচয় গোপন রাখার বিষয়টি কর্তৃপক্ষ যেন একশো শতাংশ নিশ্চিত করেন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.