গল্প শোনানোর প্রতীক্ষায় থাকে রায় পরিবার
পুজোর জন্য কেউ জমিয়ে রাখেন পোশাক কেউ বা পুজোর সময় বের করেন নতুন গয়নাগাঁটি। কিন্তু নানুরের ধাপধারা রায় পরিবারের সদস্যরা জমিয়ে রাখেন সারা বছরের গল্প। সকলের সঙ্গে বসে পুজোর কটা দিন গল্পগুজব করে কাটয়ে দেন তাঁরা।
কথিত আছে এক সময় ওই এলাকায় কোনও দুর্গাপুজোর প্রচলন ছিল না। গোপাল দাস নামে এক তন্ত্র সাধক তাঁর পঞ্চমুণ্ডির আসনে দুর্গাপুজো প্রচলনের নির্দেশ দেন জমিদার রাঘব রায়কে। সেই নির্দেশে ধাপধারায় চালু হয় প্রথম দুর্গাপুজো। পুরোহিত, ক্ষৌরকার, কাহার, ঢাকিদের জন্য বরাদ্দ হয় জমি।সেই সব জমি ভোগদখলের বিনিময়ে আজও বংশনানুক্রমে পুরোহিতরা পুজো, ক্ষৌরকাররা ফুল, ঢাকিরা ঢাক বাজানো ও কাহারেরা প্রতিমা বিসর্জনের কাজ করে চলেছেন। জমিদারি গিয়েছে। জাঁকজমকও কমেছে। কিন্তু রায়বাড়ির পুজোকে ঘিরে যে যে প্রথা ছিল, তন্ত্রসাধক যে বেল গাছের নীচে সাধনা করতেন সেখানেই ষষ্ঠীর দিন পুজোর সঙ্কল্প এবং সপ্তমীতে প্রথম ঘট আনা হয়। তার পরে ঘট যায় মণ্ডপে। প্রথা ছিল পরিবারের মঙ্গল সূচনায় অষ্টমীর সন্ধিক্ষণে বেলগাছে উড়ে এসে বসবে এক সঙ্খ চিল। তার ডাকের সঙ্গে বেজে উঠবে অষ্টমীর সন্ধিক্ষণের বাজনা। সেই বাজনার পরে লাগোয়া আটগ্রাম, বর্ধমানের গোন্নাসেরাঙ্গী এবং ধাপধারার ১৮টি পুজোর সন্ধি বাজনাও বেজে উঠবে।
ছবি: সোমনাথ মুস্তাফি।
জমিদার বাড়ির সেই হালচাল বদলেছে। কমেছে দোল, দুর্গোৎসবের জৌলুস। বর্তমান তিন শরিক পালা করে পুজো চালিয়ে আসছেন। এ বছর পালা পড়েছে অনাথবন্ধু রায়ের। তিনি বলেন, “পুজো তিন শরিকে বিভক্ত হলেও পুজোর কটা দিন আমরা সবাই এক হয়ে যাই। এক সঙ্গে বসে গল্পগুজব করি। চলে খাওয়াদাওয়া। নবমীতে পঙ্ক্তি ভোজে যোগ দেন পাড়াপড়শিরাও।”
তিন শরিকের পুজো হলেও পজোর কটা দিন একসঙ্গে মিলিত হওয়ার জন্য সারা বছর প্রতীক্ষায় থাকেন রায় পরিবারের সদস্যরা। দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসেন তাঁরা। ধানবাদ বাদ থেকে স্ত্রী বাসন্তীকে নিয়ে আসেন এক শরিক নরেশচন্দ্র রায়, অসম থেকে আসেন সবিতা গুপ্ত, হুগলি থেকে দীপ্তি মজুমদাররা। তাঁরা একাত্ম হয়ে যান ধাপধারার শান্তা রায়, ইতু সেনদের সঙ্গে। তাঁদের কথায়, “পুজোয় পরার জন্য অনেকে জমিয়ে রাখেন পোশাক কিংবা গয়নাগাঁটি। কিন্তু আমরা জমিয়ে রাখি গল্প। কেন না বছরের এই সময়টা ছাড়া অন্য সময়ে একসঙ্গে মিলিত হতে পারি না। ফোনে কথা হয়। কিন্তু মুখোমুখি কথা হয় না। তাই পুজোর কটা দিন গল্পগুজব করে কী ভাবে কেটে যায় বুঝতে পারি না।”সমরেন্দ্রনাথ রায়, অনাথবন্ধু রায়রা বলেন, “টেলিফোনের যুগে মুখোমুখি দেওয়া হওয়াটাই কমে গিয়েছে। ভাগ্যিস পারিবারিক পুজো ছিল। তাই পুজোর টানে বছরে অন্তত এক বার আত্মীয় পরিজনদের সঙ্গে দেখা হয়। একসঙ্গে বসলেই পুরনো দিনের স্মৃতিচারণ করি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.