সাতসকালে পাট ব্যবসায়ীকে গুলি করে ১৫ লক্ষাধিক টাকা ছিনতাই করার ঘটনায় উত্তাল হয়ে উঠল মালদহের গাজল। বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৫টা নাগাদ গাজল থানার অদূরে কদুবাড়ির কাছে ওই ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। গুলিবিদ্ধ ব্যবসায়ীর নাম হরিদাস বালো। ৬৫ বছর বয়সী হরিদাসবাবুকে মালদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরে চিকিৎসকেরা কলকাতায় ‘রেফার’ করেন। কারা ব্যবসায়ীর উপর হামলা চালাল সেই ব্যাপারে পুলিশ এখনও অন্ধকারে। তবে ওই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ একটি গাড়ি-সহ ৫ জনকে আটক করেছে। দুষ্কৃতীদের গ্রেফতারের দাবিতে জাতীয় সড়ক অবরোধের পাশাপাশি পাট, ধান, চালের হাট অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রেখে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। পুলিশের বিরুদ্ধে তাঁরা নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগও তুলেছেন। একের পর এক চুরি, ছিনতাইয়ে ঘটনার কোনও কিনারা না হওয়ায় উদ্বিগ্ন ব্যবসায়ীরা এদিন গাজল থানায় গিয়েও বিক্ষোভ দেখান। মালদহের পুলিশ সুপার জয়ন্ত পাল বলেন, “যারা ব্যবসায়ীর উপর হামলা চালিয়ে টাকা ছিনতাই করেছে তাদের ধরতে তল্লাশি শুরু হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। ওই ব্যবসায়ী পাট বিক্রির টাকা নিয়ে যে নিয়মিত বাড়ি ফিরতেন সে কথা বাসিন্দারা জানতেন। যারা ওই ব্যবসায়ীকে গুলি করে টাকা ছিনতাই করে তাদের সঙ্গে স্থানীয় কেউ অবশ্যই যুক্ত রয়েছে। তাঁকে খুঁজে বের করার চেষ্টা হচ্ছে।” |
গুলিবিদ্ধ ব্যবসায়ী সুস্থ হয়ে ফিরলে তাঁর সঙ্গে কথা বলে আততায়ীদের ছবি আঁকিয়ে দুষ্কৃতীদের শনাক্ত করার কথা ভাবছে পুলিশ। গাজলের কদুবাড়ির কাছে চিত্তপল্লির বাসিন্দা হরিদাসবাবু বড় মাপের পাট ব্যবসায়ী। গাজল ও আশেপাশের এলাকা থেকে পাট কিনে কলকাতার বিভিন্ন জুট মিলে তিনি সরবরাহ করেন। এক সপ্তাহ কিংবা ১৫ দিন পরে কলকাতায় গিয়ে পাট বিক্রির টাকা আদায় করতেন তিনি। তার পরে এলাকার ছোট পাট বিক্রেতাদের হাতে পাওনা টাকা তুলে দিতেন। গত মঙ্গলবার পাট বিক্রির টাকা আনতে তিনি কলকাতায় গিয়েছিলেন। এদিন ভোর ৪টে নাগাদ রাধিকাপুর এক্সপ্রেসে তিনি মালদহ স্টেশনে নামেন। তাঁর কাছে সেই সময়ে আদায় করা ১৫ লক্ষ টাকা ছিল। রায়গঞ্জমুখি একটি ট্যাক্সিতে চড়ে সকাল সাড়ে ৫টা নাগাদ গাজলের কদুবাড়ি মোড়ে নামেন। হেঁটে বাড়িতে ফেরার পথে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। মালদহ সদর হাসপাতালে শুয়ে ওই ব্যবসায়ী বলেন, “কদুবাড়ি মোড় থেকে আমার বাড়ি বড়জোর এক কিলোমিটার। কদুবাড়ি মোড়ে ট্যাক্সি থেকে নেমে টাকার ব্যাগ কাঁধে নিয়ে হেঁটেই বাড়ি যাচ্ছিলাম। গ্রামের অনেকেই সেই সময়ে প্রাতর্ভ্রমণ করছিলেন। বাড়ি থেকে প্রায় ৫০০ মিটার আগে একটি মোটর সাইকেলে চড়ে তিন জন আমার সামনে দাঁড়িয়ে পড়ে। কিছু বোঝার আগেই মোটর সাইকেল থেকে নেমে দুই যুবক আমার বুকে ধাক্কা মারে। ধাক্কায় আমি রাস্তার ধারে কাদায় পড়ে গেলে বুকে গুলি করে টাকা ভর্তি ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। কাউকে চিনতে পারিনি।” ব্যবসায়ীর চিৎকার শুনে প্রাতর্ভ্রমণকারীরা ছুটে গিয়ে জখম ব্যবসায়ীকে প্রথমে গাজল গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে তাঁর শারীরিক অবনতি হলে মালদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। মালদহ সদর হাসপাতালের চিকিৎসকরা ওই ব্যবসায়ীর বুকের ভিতর থেকে গুলি বের করতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত ওই ব্যবসায়ীর পরিবারের লোকেরা দুপুরে কলকাতার উদ্দেশে রওনা হয়ে যান। ওই ব্যবসায়ীর ভাই গুরুদাসবাবু বলেন, “মালদহ সদর হাসপাতালের চিকিৎসকরা দাদার বুকের ভিতর থেকে গুলি বের করতে পারবেন না বলে জানিয়ে কলকাতায় রেফার করে দেয়। সেই জন্য আমরা কলকাতায় রওনা যাচ্ছি।” এদিকে ব্যবসায়ীকে গুলি করে ১৫ লক্ষাধিক টাকা লুটের পরে পুলিশ এক জনকেও ধরতে না পারায় ক্ষুব্ধ মালদহ মাচের্ন্ট চেম্বার অব কমার্সের সম্পাদক জয়ন্ত কুন্ডু। তিনি অভিযোগ করেন, “জেলায় এখন আইন শৃঙ্খলা বলতে কিছু নেই। যার পরিণাম এখন প্রকাশ্য দিবালোকেই ব্যবসায়ীকে গুলি করে লুটের ঘটনা ঘটছে। এর ফলে জেলার ব্যবসায়ীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। পুলিশ দ্রুত দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করে ব্যবসায়ীর লুঠ করা টাকা উদ্ধার করতে না-পারলে বৃহত্তর আন্দোলনে নামতে বাধ্য হব।” |