সম্পাদকীয় ২...
সাবালকত্বের চিহ্ন
কূটনীতিতে নানাবিধ সংকট থাকে। তাহার ভিতর একটি মহাসংকট, পাছে লোকে কিছু বলে। ‘লোকে’ অর্থ অন্য দেশ। বিশেষত, অন্য কোনও শক্তিধর রাষ্ট্র। কূটনীতিতে অগ্রাধিকার বলিয়া একটি বস্তু আছে। প্রায়শই দেখা যায়, অন্য রাষ্ট্রের ইচ্ছা-অনিচ্ছা ভেদে রাষ্ট্রীয় কূটনৈতিক অগ্রাধিকারে তারতম্য হইতেছে। হইবার কথা নহে, অথচ হইতেছে। পাছে লোকে কিছু বলে। সত্য, উষ্ণায়ন-জাতীয় কিছু বিষয় এক ধরনের আন্তর্জাতিক অগ্রাধিকার দাবি করে। তাহা ভিন্ন প্রশ্ন। কিন্তু, এক দেশের সহিত অন্য দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক কী হইবে, সেই বস্তুটি আদপেই এই রূপ নহে। তাহা দ্বিপাক্ষিক স্তরেই সীমাবদ্ধ থাকা বাঞ্ছনীয়। অন্য কেহ নহে, সংশ্লিষ্ট দুইটি দেশই স্থির করিতে পারে, তাহাদের পারস্পরিক সম্পর্কের প্রকৃতি কী হইবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিতব্য ভারত-ইরান শীর্ষ স্তরের বৈঠকটিকে এই প্রেক্ষিতেই বিবেচনা করা উচিত। আমেরিকার সহিত ইরানের সম্পর্ক যথেষ্ট তিক্ত। ভারতের সহিত নহে। অথচ, ভারত-মার্কিন সখ্য ক্রমবর্ধমান। সুতরাং, নয়াদিল্লি এবং তেহরান যদি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসে, ওয়াশিংটনের ভ্রূকুঞ্চন স্বাভাবিক। তাই বলিয়া নয়াদিল্লি বৈঠকটিকে বাতিল করিয়া দেয় নাই। খাস আমেরিকার বুকে বসিয়া ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ ইরানের প্রেসিডেন্ট-এর সহিত বৈঠক করিবেন। দৃশ্যটি অভূতপূর্ব, তাৎপর্যপূর্ণ। ভারতীয় বিদেশনীতি সাবালক হইতেছে। আমেরিকার ন্যায় দুনিয়ার সর্বাধিক শক্তিধর রাষ্ট্রের নিকট অপ্রীতিকর ঠেকিতে পারে বুঝিয়াও নিজস্ব কূটনৈতিক বার্তাটি প্রেরণ করিবার সাহস রাখিতেছে। ইহা সাধুবাদের দাবি রাখে। বিশ্বপটে ভারতের অর্থনৈতিক এবং কূটনৈতিক উপস্থিতি ক্রমেই তাৎপর্যপূর্ণ হইয়া উঠিতেছে। এই বৈঠক সেই বার্তাও দেয়।
কূটনীতি অবশ্য অন্য একটি বস্তুও দাবি করে। তাহার নাম কৌশল। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মাত্রাটি যে দ্বিপাক্ষিক স্তরেই সীমাবদ্ধ, তাহার অধিক কোনও তাৎপর্য ইহাতে নাই, সেই কথাটি পরিস্থিতিসাপেক্ষে অন্যের সম্মুখে সফল ভাবে পেশ করিবার কৌশল। তেহরান ওয়াশিংটনের মিত্র নহে। নয়াদিল্লি ওয়াশিংটনের মিত্র। অথচ, নয়াদিল্লি শুধুমাত্র নিজস্ব স্বার্থের কথা বিবেচনা করিয়াই তেহরানের সহিত মিত্রবৎ আচরণ করিতেছে, ইহাতে ওয়াশিংটনের চিন্তিত হইবার কোনও কারণ নাই। ইহা একটি সমীকরণ এবং অসমীকরণের গল্প। জটিল গল্প, কিন্তু তাহাই কূটনৈতিক সাফল্যের নিদর্শন। আশা করা যায়, নয়াদিল্লিস্থিত সাউথ ব্লক এই বিষয়টিতেও সাফল্য লাভ করিবে। শীতল যুদ্ধের শিবির-ভাগ আর নাই বলিলেই চলে। তাই বলিয়া আন্তর্জাতিক স্বার্থের ভাগাভাগি মোটেই সরল হয় নাই। উত্তর ৯/১১-পর্যায়ে সেই ভাগ অন্য মাত্রা লইয়াছে। তাহার ভিতর জড়াইয়া গিয়াছে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসের প্রশ্ন। ভারতও সেই সন্ত্রাসের একটি বড় শিকার। এই বড় প্রেক্ষাপটটি স্মরণে রাখিলে আমেরিকার সহিত সদ্ভাবরক্ষার কাজটি কৌশলগত কারণেই তাৎপর্যপূর্ণ। অন্য দিকে, তুলনায় ক্ষুদ্রতর প্রেক্ষিতে ইরানের সহিত মিত্রতাও গুরুত্ব দাবি করে। বিশেষত, ইরানের সহিত এই মুহূর্তে পাকিস্তানের সম্পর্ক সুবিধার নহে। সেই ফাটলটিকে যে নয়াদিল্লি ব্যবহার করিতে চাহিবে, কূটনৈতিক স্বার্থের কথা মাথায় রাখিলে তাহাই স্বাভাবিক। সমস্যা হইল, কূটনীতি ঠিক যে পরিমাণ ঘটমান বর্তমানের খেলা, ততোধিক ভবিষ্যতের অঙ্কও বটে। ‘কী হইতেছে’ ভাবিলে শুধু চলিবে না, কী কী হইতে পারে, তাহাও যথোচিত গুরুত্ব সহকারে ভাবিয়া দেখিবার বিষয়। এশীয় কূটনীতির সৌজন্যে ভবিষ্যতের খাতিরে ইরান ভারতের পক্ষে অত্যন্ত জরুরি দেশ। নয়াদিল্লির কূটনীতি যে সেই ভবিষ্যৎ প্রয়োজনকে মাথায় রাখিয়া অগ্রসর হইতেছে, তাহা সুসংবাদ।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.