হাতে আর মাত্র ১৩টা দিন। তারই মধ্যে দু’দিনের টানা বৃষ্টিতে বিঘ্নিত হচ্ছে পুজোর মণ্ডপ সজ্জার কাজ। এই আবহাওয়া টানা কয়েক দিন চললে দিন-রাত কাজ করেও পুজোর প্রস্তুতি শেষ হবে কী না তা ভেবে মাথায় হাত পুজোর উদ্যোক্তাদের।
একই সঙ্গে বৃষ্টি-বাদলের মধ্যে পুজোর চাঁদা তোলার কাজ এখনও অনেকটাই বাকী রয়ে গিয়েছে। একে জিনিসপত্রের দাম আকাশছোঁয়া। তার উপরে পুজোর মধ্যে ‘বাজেট’ মিলিয়ে চাঁদা উঠবে কী না তা নিয়েও সংশয়ে অনেকেই। আচমকা এই দুর্যোগে ভাঁটা পড়ছে পুজোর বাজারেও। ছুটির দিনেও ক্রেতার সংখ্যা হাতে গোনা। সব মিলিয়ে পুজোর দিনগুলোতেও বৃষ্টির আশঙ্কায় চিন্তিত সাধারণ মানুষ থেকে উদ্যোক্তারা।
লোয়ার কাদাই সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির পক্ষে দুলাল দত্ত বলেন, “বাজার আগুন। তার মধ্যে বৃষ্টিতে চাঁদা তোলা সম্ভব হচ্ছে না। এ দিকে পুজোর বাজেট আগের থেকে প্রায় ২-৩ গুণ বেড়ে গিয়েছে। কিন্তু বৃষ্টির জন্য কোনও কিছুই পরিকল্পনা মত করে উঠতে পারছি না।” ঠিক ছিল, এ বার গ্রামীণ পল্লি সমাজের আদলে হবে পুজো মণ্ডপ। দুলালবাবু বলেন, “গত কয়েক দিন ধরে কখনও ঝিরঝিরে, কখনও অতিবৃষ্টির কারণে মণ্ডপে খড়ের চালা তৈরি করা যাচ্ছে না। এভাবে এক নাগাড়ে বৃষ্টি হলে মণ্ডপ তৈরি সম্ভব নয়।” শেষের দিকে যদি রাত জেগে কোনও ভাবে মণ্ডপ সজ্জার কাজ উতরে দেওয়া যায়, আপাতত এই আশাতেই রয়েছেন উদ্যোক্তারা।
গত শুক্রবার থেকে বৃষ্টির কারণে শেষ মুহূর্তের কেনাকাটাও থমকে গিয়েছে। বাজারে লোকজনের ভিড়ও কম। ফলে বহরমপুরের রাস্তাঘাট প্রায় ফাঁকা। ব্যস্ততম বহরমপুর বাস-টার্মিনাসও এক কথায় জনশূন্য। বাবুলবোনা সর্বজনীন পুজো কমিটির এ বছরের ‘থিম’ গেটওয়ে অফ ইন্ডিয়া। ওই কমিটি’র পক্ষে রিতেশ জৈন বলেন, “গত কয়েক দিন বৃষ্টিতে কাজ বন্ধ হয়ে রয়েছে। টানা বৃষ্টিতে মণ্ডপের কাজে হাত দেওয়া যাচ্ছে না, বিশেষ করে মণ্ডপের বাইরের দিকের কাজে।” |
বৃষ্টিতে মণ্ডপসজ্জার কাজে ঝুঁকিও রয়েছে। ভিজে যাওয়ায় বাঁশ আরও পিচ্ছিল হয়ে যাচ্ছে। ফলে বৃষ্টি না থামা পর্যন্ত সুষ্ঠু ভাবে কাজ করায় অসুবিধার মুখে পড়তে হচ্ছে। ডেকরেটর শিল্পী শম্ভু মণ্ডল বলেন, “বৃষ্টির জন্য মণ্ডপ তৈরির কাজে ভীষণ অসুবিধা হচ্ছে। অতিরিক্ত কর্মী লাগিয়েও কাজ সময়ের মধ্যে করা যাচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে কর্মীদের রেনকোট কিনে দেওয়া হয়েছে। তা সত্ত্বেও কর্মীদের কাজে আসার জন্য জোরও করা যাচ্ছে না।”
বহরমপুরের শ্রী সংঘ দুর্গোৎসব কমিটির পুজোয় পুকুরের মধ্যে মণ্ডপ তৈরি করা হয়। এ বছরও পাড় থেকে ১৩২ ফুট পেরিয়ে প্রতিমা দর্শন করতে হবে। কমিটির অন্যতম কর্তা গৌতম ভট্টাচার্য বলেন, “মণ্ডপের মধ্যে অডিটোরিয়াম তৈরি করে জ্ঞানেশ্বরী রেল দুর্ঘটনাকে তুলে ধরা হচ্ছে। কিন্তু হাতে বেশি সময় নেই বলে দুর্যোগের মধ্যেই কাজ চলছে। নয়তো সময়ের মধ্যে শেষ করা যাবে না।”
বালার্ক সংঘ দুর্গোৎসব কমিটির অন্যতম কর্তা সুদীপ্ত বন্দ্যোপাধ্যায় আবার পুজোর সময় বদলানোর পক্ষে সওয়াল করেন। তাঁর কথায়, “পুজোর মুখে বৃষ্টি প্রতি বছরের সমস্যা। কোনও ভাবে যদি পুজোর সময় বদলানো যায়, তাহলে ভাল হবে। বৃষ্টিতে চাঁদা তুলতেও বাইরে বেরনো যাচ্ছে না।” এ বছর মণ্ডপ সজ্জায় গ্রামীণ কুটির শিল্পকে তুলে ধরা হয়েছে। বিশেষ করে মণ্ডপের অলঙ্করণে বাঁশ-বেতের কাজ রয়েছে। সুদীপ্তবাবু বলেন, “বৃষ্টির মধ্যেই কোনও ভাবে কাজ চলছে। তবে দুর্যোগ বাড়লে শেষরক্ষা হবে না।”
বিষ্ণুপুর আমরা ক’জন ক্লাব পুজো কমিটি এ বছর ১২০ ফুট চওড়া ও ৯০ ফুট লম্বা উচ্চতার অক্ষরধাম মন্দিরের আদলে মণ্ডপ তৈরি করছে। পুজো কমিটির সম্পাদক বুবাই চৌধুরী বলেন, “মণ্ডপ তৈরির কাজ করতে যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছে। বৃষ্টিতে মণ্ডপের কাজ করাই যাচ্ছে না। টানা বৃষ্টি হলে মণ্ডপে মন্দিরের আদল ফুটিয়ে তোলা যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।”
বৃষ্টিতে কাজ থমকে গেলেও সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে মণ্ডপসজ্জার কাজ কমিয়ে দেওয়ার কথা বলছেন কারিগরেরা। নয়তো কাজ শেষ করা সম্ভব হবে না। ফলে উদ্যোক্তারাও বিষয়টি মেনে নিয়েছেন। আপাতত কাজ কমিয়ে কোনও মতে পুজোর প্রস্তুতি সেরে ফেলার সিদ্ধান্তই নিয়েছেন তাঁরা। |