|
|
|
|
আয়নার মেয়েটার পিঠ চাপড়ে দিলাম |
‘কী পরছি কিচ্ছু এসে যায় না। তবে, সেই পোশাকে শরীর ইতস্তত বোধ না করে।
কারণ, আত্মবিশ্বাস = ফ্যাশন।’ জানালেন প্রিয়ঙ্কা চোপড়া |
আমি নাকি গোটা ভারতের স্টাইল আইকন। জনসমক্ষে এলেই নানান আব্দার, ‘প্রিয়ঙ্কা, আমি ঠিক আপনার মতো সাজতে চাই, ঠিক কী করে আপনার মতো হওয়া যায়, একটু বলে দিন না প্লিজ।’ আচ্ছা, কোনটা চান বলুন তো, আমার মতো হতে, নাকি প্রিয়ঙ্কা চোপড়ার মতো সাজতে? দেখুন, অত্যাধুনিক যে মেয়েটাকে পর্দায় দেখে ফ্যাশনিস্তা ডাকেন, সেটা কিন্তু ঠিক আমি নই। সেগুলো তো সব চরিত্র। আর সাজপোশাকও স্থির করা হয় চরিত্র বুঝে। তার পর দেখি, সেই সব চরিত্রের পোশাক অনুকরণেই সাজছে আমার বয়সী বা আমার থেকে একটু ছোট মেয়েরা।
তবে একটা টিপস বোধ হয় আমি শিখিয়ে দিতেই পারি, পোশাকগুলো কী ভাবে ক্যারি করবেন। জানি, পোশাকগুলো এমন ভাবে ডিজাইন করা যাতে শরীরের কিছুটা অংশ অনাবৃত হয়ে পড়ে।
সিনেমায় আমাকে দেখে উৎসাহে অনেকেই ওই রকম পোশাক কিনেও, পরতে গিয়ে অস্বাচ্ছন্দ্যের শিকার হয়। শরীরী ভাষায় ধরা পড়ে এই ইতস্তত বোধ, কুঁকড়ে থাকার ব্যাপারটা। ব্যস, একটা হট প্যান্টস বা গভীর নেকলাইনের স্টাইল-সৌন্দর্য ওখানেই মাটি।
আমিও কিন্তু একেবারে মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে। পড়াশুনা নিয়েই থাকতাম, কোনও দিন ভাবিওনি যে আমাকে সুন্দর দেখতে। আর জানবই বা কোত্থেকে বলুন তো, কোনও দিন তো রূপ সংক্রান্ত কোনও প্রশংসাও পাই নি। খুব সত্যি কথা এটা, এমন কী আজও আমি ভাবি না যে আমি সুন্দর। নিজের মধ্যে ডুবে থাকা একটা মেয়ে ছিলাম তখন। সবার সঙ্গে মিশতেও পারতাম না, কম কথা বলতাম, আমি যে কিছু করতে পারব, বিশ্বাসটাই যেন ছিল না। অথচ মডেলিং শুরু করেছিলাম যখন, তখন আমি মাত্র সতেরো। এই জগতে অন্তর্মুখী নিজেকে মানিয়ে নিতে এক-টু মুশকিলই হোত প্রথম দিকে। তার পর এক দিন আয়নার সামনে দাঁড়ালাম। নয় সেই নিজেকে লুকিয়ে রাখা চুপ মেয়েটা হয়েই থাকব, নয়তো আমি আজ ঘুরে দাঁড়াব। আয়নার মেয়েটার পিঠ চাপড়ে দিলাম, এই যে তুমি, তুমিই কিন্তু পারবে। মাথা তুলে, পিঠ সোজা করে দাঁড়ালাম সে দিন। হ্যাঁ, সেরা হওয়ার মশলা আছে আমার মধ্যে, সেরা পোশাকটাই পরব আমি, আর সেরা জীবনটাই বাঁচব। এই তেজি মনটার মধ্যেই কিন্তু লুকিয়ে আছে সেই দৃপ্ত শরীরীভাষা। যেটা আপনারা খুঁজছিলেন। আমি আমার মতো সাজব, হতে পারে সেটা একটু সাহসী পোশাক। কিন্তু আমি সেটাই ক্যারি করব। এমন ভাবে যাতে সেটা একটুও দৃষ্টিকটু হবে না, বরং আরও লালিত্য এনে দেবে আমার চেহারায়। এ বার বুঝলেন, আত্মবিশ্বাসটা কোত্থেকে আসে, বা আনতে হয়?
আসলে কী জানেন, ওই আত্মবিশ্বাসটাই হল ফ্যাশন, বা আরও গভীর করে বললে এই আমার মনটা। কী পরছি তাতে কিচ্ছুটি আসে যায় না। একটা ডেনিম, গেঞ্জি আর জ্যাকেট, এই পরেই তো সময় কাটাই। অ্যাকসেসরি বলতে ঘড়ি আর কানে দুটো হিরের কুঁচি। তাতেই এত হইচই! রহস্যটা বলি। আপাত দৃষ্টিতে যে পোশাকটা সাধারণ, মনটা তাকে এমন সাজিয়ে, এমন ‘ক্যারি’ করবে, যে সব্বাই আপনাকে স্টাইলিশ মানতে বাধ্য হবে। এই মনটা তো ম্যাজিক জানে, আর সেটাকেই বোধ হয় ‘অ্যাটিটিউড’ বলে।আর একটা ছোট্ট টিপস, নিজেকে একটু চিনতে হয়। আত্মবিশ্বাসে টগবগ করতে করতে একটা দারুণ দোকানে গেলেন আর ম্যানিকুইনে সাজানো পোশাকটাই মুগ্ধ হয়ে কিনে নিয়ে এলেন, তা হলে আবার একটু মুশকিল হতে পারে। নিজের শরীরের আকৃতি, ধরনটাও জানতে হবে, কোনটায় মানায় বুঝতে হবে। তার পর পোশাক বাছাই। পুজো শপিং-এর আগে দারুণ কথা মনে করিয়েছি, তাই না?
হুঁহুঁ, আপনাদের পুজোর কথাও জানি আমি। মিস ওয়র্ল্ড, বলিউডবাসিনী হবার আগে আমি জামশেদপুরে থাকতাম, প্রচুর বাঙালি ছিল ওখানে। দুর্গাপুজোয় নিমন্ত্রণ পেতাম অনেক। বাঙালিদের শাড়ি পরার ওই বিশেষ কায়দাটা ভীষণ ভাল লাগে। আমরাও তো শাড়ি পরি, কিন্তু সেটা একেবারে অন্য ভাবে, উর্বশী-অপ্সরা স্টাইলে। তবে, পাশের বাড়ির শাড়ি পরা মেয়েটির কিন্তু একটা অন্য আকর্ষণ আছে। আমি এক বার ওই ধরনের সেজেছিলাম। ‘কমিনে’ সিনেমাটায়। গ্ল্যামার তো কিছুই কম ছিল না তাতে।
একটা সময় আমিও সাজতে চাইতাম অড্রে হেপবার্ন আর মুমতাজের মতো। এখনও প্রীতি জিনটার পোশাক নির্বাচন, ক্যারি করার কৌশল খুব প্রশংসার চোখে দেখি আমি। তবে, একটা কথা সার বুঝেছি। পছন্দ করুন, কিন্তু তার মতো হওয়ার চেষ্টা করার দরকার নেই। প্রিয়ঙ্কা চোপড়াই বলছে আপনাকে, আমাকেও নকল করার প্রয়োজন নেই। শুধু নিজের একটা স্বতন্ত্র পরিচিতি গড়ে তুলুন। তার থেকে বড় স্টাইল স্টেটমেন্ট আর হয় না।
প্রথমেই বলেছি, পর্দায় যাদের দেখেছেন, তার সবাই আমি নই। বড় জোর ‘কমিনে’র সুইটি আর ‘দোস্তানা’র নেহা সত্যি আমিটার কাছাকাছি আসতে পারে। তাও দুটো চরিত্রকে মিলিয়ে-মিশিয়ে দিলে তবেই। আমি সুইটি-র মতোই ঘরোয়া, আবার একটু যেন নেহা। নিজের পেশার পৃথিবীটাকেও সুন্দর করে সামলে রাখি। আজ ব্লেন্ডার্স ফ্যাশন ট্যুরের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর হয়ে কলকাতায় এসেছি বলে মুখস্থ বলছি না মোটেও, উৎসবের দিনগুলোয় কলকাতায় থেকে যেতে সত্যি ভীষণ ইচ্ছে হচ্ছে আমার। ইচ্ছে হচ্ছে, ওই বাঙালি কায়দায় শাড়িটা পরতে। নিজে পরতে পারব না, একটু সাহায্য লাগবে, ঠিক। কিন্তু সুন্দর করে মেলে ধরতে পারব নিজেকে। ইসসস, একটা ওরকম চরিত্রও যদি পেতাম, বাঙালি মেয়ের... তা হলেও বোধ হয় একটু হলেও শখটা মিটত। |
|
|
|
|
|