পর্যাপ্ত পরিকাঠামো থাকা সত্ত্বেও এ রাজ্যে বায়ো মেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার হাল অত্যন্ত খারাপ। এখন রাজ্যের মোট বায়ো মেডিক্যাল বর্জ্যের মাত্র ২৮ শতাংশ বৈজ্ঞানিক ভাবে নষ্ট বা পুনর্নবীকরণ করা হয়। বাকি বর্জ্যের বেশির ভাগটাই সাধারণ বর্জ্যের সঙ্গে জঞ্জালের স্তূপে চলে যায়। অথচ পরিবেশ এবং মানুষের স্বাস্থ্যের পক্ষে ভয়ানক ক্ষতিকর এই হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বর্জ্য। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের সাম্প্রতিক সমীক্ষা থেকে এই তথ্য উঠে এসেছে। অথচ এই বর্জ্যের ৪৫ শতাংশই পুনর্নবীকরণযোগ্য। রিপোর্টে বলা হয়েছে, যথাযথ ভাবে পৃথকীকরণ, নির্বিষকরণ এবং পুনর্নবীকরণ করতে পারলে পরিবেশ বাঁচানোর পাশাপাশি প্রচুর সম্পদ সৃষ্টিও সম্ভব।
গোটা রাজ্যে বিভিন্ন হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, নার্সিং হোম, ইমিউনাইজেশন সেন্টার এবং ডায়াগনেস্টিক সেন্টারে বছরে প্রায় ১২ হাজার টন বায়ো মেডিক্যাল বর্জ্য তৈরি হয়। স্বাস্থ্য পরিষেবা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বছরে এক শতাংশ হারে এই বর্জ্য বাড়ছে। কিন্তু সচেতনতা ও উদ্যোগের অভাবে এর বেশির ভাগটাই হয় সাধারণ জঞ্জালের সঙ্গে ফেলে দেওয়া হয়, না হয় পুড়িয়ে ফেলা হয়। আর ইঞ্জেকশনের সিরিঞ্জ বা সূচের মতো বর্জ্য অসৎ হাতে পড়ে প্যাকেট-বন্দি হয়ে দিব্যি বাজারে চলে আসে। এ বছরের গোড়ায় পূর্ব কলকাতায় এমনই এক ব্যবসায়ীকে হাতেনাতে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে পর্ষদ। তার পরেও এই মারণ-ব্যবসা বন্ধ হয়েছে বলে জোর দিয়ে বলতে পারেন না পর্ষদের জঞ্জাল ব্যবস্থাপনার দায়িত্বপ্রাপ্ত চিফ ইঞ্জিনিয়ার শ্যামল অধিকারী।
রাজ্যে যে পরিমাণ মেডিক্যাল বর্জ্য তৈরি হয়, তার সম্পূর্ণটাই বৈজ্ঞানিক ভাবে নষ্ট বা পুনর্নবীকরণ করার পরিকাঠামো রয়েছে বলে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে। কিন্তু এই পরিকাঠামোর সুযোগ রাজ্যের সর্বত্র সমান ভাবে পাওয়া যায় না বলেই তার পূর্ণ সদ্ব্যবহার হতে পারে না। রিপোর্ট জানাচ্ছে, হলদিয়া, হাওড়া, কল্যাণী, দুর্গাপুর ও জলপাইগুড়িতে বায়ো মেডিক্যাল বর্জ্য নষ্ট করে ফেলার বড় মাপের পাঁচটি ইউনিট তৈরি হয়েছে। কিন্তু সেখানে হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে বর্জ্য পাঠানোর আগে মান অনুযায়ী হলুদ, নীল, সাদা এবং কালো প্লাস্টিক ব্যাগে সংগ্রহ করার নিয়ম। অনেক ক্ষেত্রে সেই নিয়ম মানা হয় না বলে বিষাক্ত, সাধারণ বা ধাতব বর্জ্য এক সঙ্গে মিশে যায়। ওই ইউনিটগুলোর কাজে তা বিস্তর ব্যাঘাত ঘটায়। রিপোর্টে বলা হয়েছে, রাজ্যের মোট মেডিক্যাল বর্জ্যের মাত্র ২৮ শতাংশের বেশি ওই ইউনিটগুলিতে পৌঁছয় না।
সোসাইইটি ফর ডাইরেক্ট ইনিশিয়েটিভ ফর সোসাল অ্যান্ড হেল্থ অ্যাকশন (দিশা) নামে একটি সংগঠনের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে রিপোর্টটি তৈরি করেছে পর্ষদ। রিপোর্টে বলা হয়েছে, হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং নার্সিংহোমগুলি যে ভাবে জেলার গঞ্জ এবং গ্রামে ছড়িয়ে রয়েছে, বায়ো মেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ইউনিটগুলি যথাযথ ভাবে বিন্যস্ত নয়। সমস্যার সমাধানে দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হুগলি এবং মালদহ জেলায় একটি করে ইউনিট গড়ে তোলার সুপারিশ করা হয়েছে রিপোর্টে। তবে চিফ ইঞ্জিনিয়ার শ্যামলবাবুর বক্তব্য, “সচেতনতা বাড়ছে। আমাদের নজরদারিও বাড়ছে। ফলে এখন রোজই আরও বেশি পরিমাণে বর্জ্য সংগ্রহ করে ইউনিটগুলিতে পাঠানো হচ্ছে।” |