বড় অনিয়মের হদিস
ভোঁতা ছুরি, পাতলা গ্লাভস, ওটি-তে সঙ্কটে ডাক্তারেরাই
পারেশন থিয়েটারে রোগীকে ঢোকানো হয়ে গিয়েছে। অস্ত্রোপচার শুরু হল বলে।
কিন্তু কী দিয়ে শুরু করবেন সার্জন? সরঞ্জামের হাল দেখে তাঁর তো চক্ষু চড়কগাছ! ছুরি এমনই ভোঁতা যে, তা দিয়ে আর যা-ই হোক, অস্ত্রোপচার অসম্ভব। ওটির নার্স জানালেন, উপায় নেই। এমন ছুরিরই ‘সাপ্লাই’ আসছে।
অগত্যা একটা অপারেশন শেষ করতে ছুরি লাগল তিনটে! আর এক সরকারি হাসপাতালের ওটি-তে এক সঙ্গে চার-চারটে গ্লাভস পরতে হল গাইনিকে! কেন?
কারণ, সেগুলো এতই ফিনফিনে পাতলা যে, একটা গ্লাভস পরা যা, কিছু না-পরাও তা-ই। অতএব চারটে। তবু অপারেশনের সময়ে রক্তে মাখামাখি হয়ে গেল ডাক্তারের হাত!
এখানেই শেষ নয়। বহু ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের পরে কাটা জায়গা সেলাই করতে গিয়ে ডাক্তারেরা হিমসিম খাচ্ছেন। সূঁচ এমনই মোটা! এ ক্ষেত্রেও ‘উপায়’ নেই। ফলত যন্ত্রণায় রোগীরও প্রাণান্ত।
বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে অপারেশনের ছুরি-কাঁচি-সুঁচ-গ্লাভস ইত্যাদির এ হেন বেহাল দশা চলছে বেশ কিছু দিন ধরে। হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষেরা তো বটেই, বহু চিকিৎসকও স্বাস্থ্য দফতরের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন বারবার। এমনকী, কয়েকটা মেডিক্যাল কলেজে ডাক্তারেরা তো কার্যত হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, সমস্যার সুরাহা না-হলে তাঁরা গণছুটি নেবেন। অবশেষে গোপনে তদন্তে নেমেছিলেন স্বাস্থ্য-কর্তারা। আর তাতেই ধরা পড়ল, অস্ত্রোপচারের সরঞ্জাম সরবরাহে বড় অনিয়ম চলছে সরকারি হাসপাতালে হাসপাতালে।
স্বাস্থ্য দফতর-সূত্রের খবর: ওই অনিয়মে ‘জড়িত’ হিসেবে সরবরাহকারী কয়েকটি সংস্থাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তদন্তে প্রকাশ, নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না-করে, মাপকাঠিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে তারা বিভিন্ন হাসপাতালে অত্যন্ত নিম্নমানের সরঞ্জাম দিয়েছে। ব্লক স্তর থেকে শুরু করে সুপার স্পেশ্যালিটি কোথাও বাদ নেই। স্বাস্থ্য দফতর এখন ওই সমস্ত সরঞ্জাম বাতিল করে অবিলম্বে নতুন জিনিস কেনার নির্দেশ দিয়েছে। শুধু তা-ই নয়, সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর ‘স্বরূপ’ প্রকাশ করতে স্বাস্থ্য দফতরের ওয়েবসাইটে তাদের নামও প্রকাশ করা হয়েছে।
এর পরেও যে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না, তার নিশ্চয়তা কী?
স্বাস্থ্য-কর্তারা নির্দিষ্ট ভাবে কিছু জানাতে পারেননি। এক জনের কথায়, “এত দিন গ্লাভসে কেন্দ্রীয় রবার বোর্ডের ছাপ থাকা বাধ্যতামূলক ছিল না। এখন ঠিক হয়েছে, রবার বোর্ডের ছাড়পত্র ছাড়া গ্লাভস নেওয়া হবে না। অন্যগুলোর জন্যও ‘স্পেসিফিকেশন’ কঠোর হচ্ছে।” স্বাস্থ্য-অধিকর্তা শুভময় দত্তচৌধুরীর বক্তব্য, “অভিযোগকারীদের বলা হচ্ছে সরঞ্জামের নমুনা-সহ আমাদের চিঠি পাঠাতে, যাতে অনিয়মটা ধরতে সুবিধা হয়। সেন্ট্রাল মেডিক্যাল স্টোর্সকেও সতর্ক করা হয়েছে। কারণ, টেন্ডারের মাধ্যমে সরবরাহকারীদের বেছে নেয় তারাই।”
কিন্তু ওয়েবসাইটে নাম প্রকাশ করা ছাড়া দোষীদের বিরুদ্ধে আর কোনও ব্যবস্থা হবে না?
স্বাস্থ্য-অধিকর্তা বলেন, “ব্যবস্থা নেওয়ার অনেক পদ্ধতি রয়েছে। ওদের কালো তালিকাভুক্ত (ব্ল্যাক লিস্টেড) করা হতে পারে। এমনকী, পাওনাও আটকে রাখা হতে পারে। কী করা হবে, এখনও ঠিক হয়নি।”
শুধু ছুরি-কাঁচি-সূঁচ-গ্লাভস নয়। রোগীর পরিচর্যার প্রায় প্রতি পদে যে জিনিসটা বহুল পরিমাণে দরকার হয়, সেই তুলো নিয়েও নানা টালবাহানার শিকার হচ্ছে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল। অভিযোগ, তুলোর দাম ও মানে বেশি ‘কারচুপি’ সম্ভব নয় বলেই সরবরাহকারীরা মাসের পর মাস তুলো দেয়নি। ফলে অনেক জায়গায় বিপিএল রোগীকেও তুলো কিনে দিতে হয়েছে!
পরিস্থিতি একেবারে হাতের বাইরে চলে যাওয়ার পরে টনক নড়েছে কর্তৃপক্ষের। এত দিনে আগের সংস্থাগুলোকে বাতিল করে সরকারি সংস্থা তন্তুজকে হাসপাতালে তুলো সরবরাহের দায়িত্ব দিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.