অগ্রাধিকার উত্তরবঙ্গকে। শুধু কথায় নয়, কাজেও।
‘প্রায়োরিটি: নর্থ বেঙ্গল’--যে শুধু কথার কথা নয়, তা বোঝাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে আসরে নেমে পড়েছেন তাই স্বয়ং শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তাতে সামিল উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবও। ইতিমধ্যেই শিল্প দফতরের তরফে উত্তরবঙ্গের পাহাড় ও সমতলের জন্য পাঠানো ৫টি সুনির্দিষ্ট প্রকল্প-প্রস্তাব দেখে সবুজ সঙ্কেত দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
সরকারি সূত্রের খবর, ওই প্রকল্পের মধ্যে যেমন ঐতিহ্যমণ্ডিত মংপুর সিঙ্কোনা ক্ষেত্রের অব্যবহৃত জমিতে ভেষজ নির্ভর নানা পণ্য তৈরির কারখানার প্রস্তাব রয়েছে, তেমনই পাহাড় ও সমতলে আইটি হাব, নার্সিং কলেজ ও বিউটিসিয়ান ট্রেনিং ইন্সটিটিউট গড়ার রূপরেখা চূড়ান্ত হয়েছে। পর্যটনের প্রসারের কথা মাথায় রেখে পাহাড়-তরাই-ডুয়ার্স ঘিরে অত্যাধুনিক মানের ‘হোটেল-চেন’ তৈরি করতে আগ্রহী হর্ষ নেওটিয়া গোষ্ঠী। পাশাপাশি, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের পক্ষ থেকে জলপাইগুড়ির গজলডোবায় যে ‘টুরিজম-হাব’ তৈরির প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, তার কাজও দ্রুত শুরুর নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। |
সব কিছু ঠিকঠাক চললে চলতি বছরের মধ্যেই ওই শিল্প-প্রকল্পগুলি বাস্তবায়িত করার কাজ জোরকদমে শুরু হয়ে যাবে বলে আশা করছে শিল্প দফতরও। প্রকল্প রূপায়ণের কাজ শুরু হলেই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে অন্তত ১০ হাজার জনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। রাজ্যের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রী বলেছেন, “অতীতের দিকে তাকালে দেখা যাবে উত্তরবঙ্গ মানেই শুধু বঞ্চনার ইতিহাস। কিন্তু, আমাদের সরকারের অগ্রাধিকারের তালিকায় রয়েছে উত্তরবঙ্গ। সে জন্য পাহাড় ও সমতলে শিল্প স্থাপনের মাধ্যমে কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে বেশ কয়েকটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে নার্সিং কলেজ, বিউটিসিয়ান ট্রেনিং ইন্সটিটিউট, দু’টি আইটি হাব ও একটি হোটেল-চেন-এর প্রকল্প প্রস্তাবের ব্যাপারে প্রথম দফায় মুখ্যমন্ত্রীর সবুজ সঙ্কেত মিলেছে।” তাঁর স্বপ্ন, “দ্রুত প্রকল্পগুলি বাস্তবায়িত করতে পারলে উত্তরবঙ্গের অর্থনীতির ছবিটাই পাল্টে যাবে।” বস্তুত, পাহাড়ের শিক্ষিত তরুণীদের একটি বড় অংশের মধ্যে পেশা হিসেবে ‘নার্সিং’কে বেছে নেওয়ার প্রবণতা রয়েছে। পাশাপাশি, পাহাড়ের বেকার তরুণীদের একাংশও দীর্ঘদিন ধরেই বিউটিসিয়ান ট্রেনিং ইন্সটিটিউট গড়ার দাবিতে সরব। রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী জানিয়েছেন, নানা মহলে আলোচনার পরেই নার্সিং কলেজ ও বিউটিসিয়ান ট্রেনিং ইন্সটিটিউট তৈরির প্রস্তাবে সায় দিয়েছে রাজ্য সরকার। পাহাড়ের জন্য প্রকল্প প্রস্তাব গড়ার ব্যাপারে ছাড়পত্র মেলার খবরে খুশি গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার নেতারাও। মোর্চা সূত্রের খবর, দ্রুত যাতে প্রকল্পগুলির কাজ চালু হয়, সে জন্য তাঁরা শিল্পমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন।
উত্তরের পাহাড়-সমতলকে যে কোনও ব্যাপারে রাজ্যের অগ্রাধিকারের তালিকায় রাখার ব্যাপারে অবশ্য উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের ভূমিকাও কম নয়। সরকারি সূত্রেই জানা গিয়েছে, মন্ত্রী হওয়ার পর থেকে নিয়ম করে নানা দফতরে ঘুরে উত্তরবঙ্গের জন্য বরাদ্দ টাকা খরচে জোর দিচ্ছেন গৌতমবাবু। শুধু তাই নয়, জলপাইগুড়িতে তিস্তা ব্যারাজ যেখানে রয়েছে, সেই গজলডোবার প্রাকৃতিক সম্পদের কথা ভেবেই সেখানে ‘ট্যুরিজম হাব’ গড়ার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছেন গৌতমবাবু। যা তৈরির জন্য প্রাথমিক ভাবে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পর্ষদ থেকে ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। বন ও পর্যটন দফতরের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে বাদ বাকি কাজ হবে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী বলেন, “ট্যুরিজম হাব, আইটি হাব সব সব কটি শিল্প প্রস্তাব রূপায়ণের কাজ যাতে তাড়াতাড়ি হয়, সে জন্য সবরকম চেষ্টা হচ্ছে। তা বলে রাতারাতি সব হয়ে যাবে এমন আশা দিতে পারব না। এ টুকু বলতে পারি, আমরা কাজ করে দেখাব। শিল্প স্থাপনের মাধ্যমে উত্তরবঙ্গের বেকার তরুণ-তরুণীদেরদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে আমরা বদ্ধপরিকর।” |